দুস্থ আর আর্ত মানবতার সেবায় ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল কিংবদন্তি এক নাম। ধৈর্য, সহযোগিতা, সেবা আর কর্তব্যনিষ্ঠার মূর্ত প্রতীক তিনি। হাসপাতালে রোগী-পরিচর্যা মেয়েদের পেশা হিসেবে তিনিই প্রতিষ্ঠা করেন। ইতালির ফ্লোরেন্সে এক ধনাঢ্য পরিবারে ১৮২০ সালের ১২ই মে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্ম। শৈশবের বিলাসী জীবন কখনোই তাঁকে মোহগ্রস্ত করে নি। বরং বিভিন্ন হাসপাতালে অসহায় রোগীদের যন্ত্রণা তাঁকে ব্যথিত করতো। তাই বাবা-মার আপত্তি সত্ত্বেও মানবসেবায় নিবেদিত হবার জন্য সেবিকা বিদ্যা শেখেন তিনি। এ বিষয়ে ফ্লোরেন্স প্রশিক্ষণ নেন জার্মানি ও ইংল্যান্ডে। সেবাব্রতী ফ্লোরেন্স ১৮৫৩ সালে লন্ডনের একটি হাসপাতালে কাজ শুরু করেন সেবিকা হিসেবে। পরের বছর ক্রিমিয়ার যুদ্ধে আহত সৈনিকদের সেবায় নিবেদিত হন তিনি। আহত সৈনিকদের সেবার জন্য ফ্লোরেন্স একটি সেবিকা দল গঠন করেন এবং তাদের সঙ্গে নিয়ে ক্রিমিয়ায় যান। পাঁচ মাস তিনি সৈনিক হাসপাতালে ছিলেন। নিবিড় শুশ্রুষা, অক্লান্ত পরিশ্রম আর পরম আন্তরিকতা দিয়ে রাত-দিন ফ্লোরেন্স যুদ্ধাহতদের সেবা করেন একাগ্র চিত্তে। সদা সচেতন, স্নেহ পরায়ণ আর পরম মমতাময়ী ফ্লোরেন্স হয়ে ওঠেন সৈনিকদের প্রীতি ও শ্রদ্ধাভাজন। সৈনিকরা তাঁর নাম দেন ‘লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প’। সেবা আর মমতার প্রতীক হিসেবে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। কেবল তা-ই নয়, যুদ্ধ শেষে ব্রিটিশ আর্মি মেডিকেলের উন্নয়ন, সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যরক্ষায় সচেতন ও স্বাস্থ্যসেবায় উদ্বুদ্ধ করে তোলার লক্ষ্যে তিনি কাজ চালিয়ে যান। যুদ্ধকালীন সেবার জন্য ফ্লোরেন্স যে সম্মানী পেয়েছিলেন তা দিয়ে লন্ডনের সেন্ট টমাস হাসপাতালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘নাইটিঙ্গেল ট্রেনিং স্কুল’। রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড তাঁকে ১৯০৭ সালে ‘ব্রিটিশ অর্ডার অব মেরিট’ সম্মানে ভূষিত করে। ১৯১০ সালের ১৩ই আগস্ট ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল প্রয়াত হন। সারা বিশ্বে আজও তিনি সেবা আর মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।