টিকা কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ

এসএমএস না পেয়েও টিকা নিতে ভিড় করায় এমন পরিস্থিতি : চসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১০ মে, ২০২১ at ৫:০১ পূর্বাহ্ণ

করোনার টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন প্রথম ডোজ গ্রহীতারা। প্রথম ডোজ গ্রহণের সময় গ্রহীতাদের টিকা কার্ডে দ্বিতীয় ডোজের তারিখ উল্লেখ করে দেয়া হয়। উল্লেখ করা নির্দিষ্ট তারিখে টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিতে কেন্দ্রে ভিড় করছেন প্রথম ডোজ গ্রহীতারা। কিন্তু টিকার মজুদ সংকটে বেশ কিছুদিন আগেই স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়ে দেয়- দ্বিতীয় ডোজের জন্য মোবাইলে যারা এসএমএস পাবেন, কেবল তারাই টিকা পাবেন। এসএমএস না পেলে অযথা কেন্দ্রে ভিড় না করার অনুরোধও জানান স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের এমন নির্দেশনার পরও এসএমএস না পেলেও টিকার জন্য অনেকে কেন্দ্রে ভিড় করছেন। কিন্তু যারা এসএমএস দেখাতে পারছেন না, তাদের টিকা দেয়া হচ্ছে না টিকা কেন্দ্রগুলোতে। এ নিয়ে মহানগরের টিকা কেন্দ্রগুলোতে প্রায় প্রতিদিনই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।
টিকা নিতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ায় গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন জেনারেল হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছেন টিকা নিতে আসা লোকজন। এক পর্যায়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। হাসপাতালের কর্মচারীদের প্রতি মারমুখি আচরণের পাশাপাশি কলাপসিবল গেট (মূল প্রবেশ পথের গেট) ভাঙার চেষ্টা করতেও দেখা যায় অনেককে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, কেন্দ্রের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ভেতরে ঢোকার পর এসএমএস-এর কথা বলে তাদের টিকা দেওয়া হচ্ছে না। ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু টিকা কার্ডে দ্বিতীয় ডোজের জন্য উল্লেখ করা তারিখেই তারা টিকা নিতে এসেছেন।
বিক্ষোভ না হলেও একই পরিস্থিতি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল কেন্দ্রেও। এসব কেন্দ্রেও এসএমএস ছাড়াই মানুষ টিকা নিতে ভিড় করছেন। এতে করে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের ঘটনা একেবারেই অযৌক্তিক বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ভ্যাকসিন প্রদান কমিটির সদস্য সচিব ও প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী। তিনি বলেন, সারাদেশেই টিকার মজুদ ফুরিয়ে আসছে। যার কারণে যারা এসএমএস পাবেন, কেবল তাদেরকেই টিকা নিতে আসার জন্য আমরা জানিয়ে দিয়েছি। পত্রিকায় রিপোর্টও হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে- এসএমএস না পেলেও অনেকে কেন্দ্রে ভিড় করছেন। টিকার সংকট থাকায় সবাইকে তো টিকা দেয়ার সুযোগ নেই। তাই শুধু এসএমএস প্রাপ্তদেরই আমরা টিকা দিচ্ছি। তবে এসএমএস যারা পাননি তারাও ভিড় করায় ঝামেলা সৃষ্টি হচ্ছে।
অনেকে হাসপাতালের নার্স-কর্মচারীদের ওপর মারমুখি আচরণ করেছেন। গেট ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেছেন। এধরণের কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যাদের এসএমএস এসেছে, তাদের কিন্তু টিকা দেয়া হচ্ছে। রোববারও (গতকাল) এসএমএস প্রাপ্তদের ডেকে আমরা টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করেছি।
টিকার দেশব্যাপী সংকটের কথা উল্লেখ করে ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী বলেন, যেহেতু টিকার সংকট, সেহেতু সবাইকে ধৈর্যশীল আচরণ করতে হবে। একটু দেরি হলেও ধাপে ধাপে সবাই টিকা পাবেন। আমাদের মজুদ শেষ হয়ে এসেছে। অল্প যা আছে, নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষকে এসএমএস পাঠানোর মাধ্যমে এই টিকাদান চালু রেখেছি। এসএমএস না পেলে অযথা কেন্দ্রে ভিড় না করতে আবারো অনুরোধ জানান তিনি।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর বলছেন, টিকার জন্য আমরা প্রতিদিন নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষকে এসএমএস পাঠাই। যাদের এসএমএস পাঠানো হয়, কেবল তারা টিকা নিতে আসলে কোনো ঝামেলা হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু এসএমএস পাননি এমন অনেক মানুষ প্রতিদিন কেন্দ্রে ভিড় করছেন। সমস্যাটা হচ্ছে তাদের নিয়েই। টিকাদান কার্যক্রম আপাতত সাময়িক স্থগিত জানিয়ে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, সিটি কর্পোরেশন আমাদের টিকা দেয়। সোমবার (আজ) সরকারি ছুটি রয়েছে। এদিন টিকাদান বন্ধ থাকবে। কিন্তু পরদিন (মঙ্গলবার) সিটি কর্পোরেশন থেকে টিকা পেলে টিকাদান কার্যক্রম চলবে। নয়তো সাময়িক ভাবে স্থগিত থাকবে।
প্রসঙ্গত, গত ৮ এপ্রিল থেকে করোনার টিকার দ্বিতীয় ডোজ প্রদান শুরু হয়েছে চট্টগ্রামে। গতকাল (৯ মে) পর্যন্ত ৩ লাখ ১৬ হাজার ৩০১ জন টিকাগ্রহীতা তাদের দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন। এর আগে চট্টগ্রামের (মহানগরসহ জেলায়) মোট ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৭৬০ জন মানুষ টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। হিসেবে প্রথম ডোজ নেয়া আরো ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি টিকা গ্রহীতা দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় আছেন। তবে সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের গতকালের (৯ মে) তথ্য অনুযায়ী- মহানগরসহ পুরো জেলায় সবমিলিয়ে ২৭ হাজার ডোজ টিকা মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে মহানগরে মজুদ টিকার সংখ্যা ১০ হাজারেরও কম। মজুদ টিকায় ঈদ পর্যন্ত টিকাদান কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চট্টগ্রামে প্রথম ডোজ গ্রহীতাদের মাঝে আরো লক্ষাধিক টিকাগ্রহীতা নির্ধারিত সময়ে তাদের দ্বিতীয় ডোজ পাবেন না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন
পরবর্তী নিবন্ধবিআইটিআইডি ল্যাব প্রধান ডা. শাকিল এবার সপরিবারে করোনা আক্রান্ত