থমকে আছে বিদেশি বিনিয়োগ

গত বছরের মার্চ থেকে এই অবস্থা।। প্রচুর প্রস্তাব আছে : বেজা

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১০ মে, ২০২১ at ৪:৫৯ পূর্বাহ্ণ

করোনা মহামারীর কারণে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ একেবারে কমে গেছে। গত বছর থেকে কমতে কমতে পরিস্থিতি একেবারে নাজুক। বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই পরিস্থিতি উন্নতির কোনো আশা নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অবশ্য বেজা কর্তৃপক্ষ বলেছে, বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানি যোগাযোগ করছে। প্রচুর প্রস্তাবও আছে। পরিস্থিতি ভালো হলে বিনিয়োগ বাড়বে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, বিদেশি বিনিয়োগ পরিস্থিতি খুবই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতিতে বড় ধাক্কা লেগেছে এই খাতে। গত বছরের মার্চ থেকে বিদেশি বিনিয়োগ পরিস্থিতি একেবারে থমকে আছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডার পদস্থ ওই কর্মকর্তা বলেন, শুধু করোনা পরিস্থিতি নয়, ব্যবসা করার সুযোগ সুবিধার যেসব সূচক আছে সেগুলোতেও বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে রয়েছে। করোনা পরিস্থিতির সাথে সেবা খাতগুলোর এই নেগেটিভ অবস্থাও বিনিয়োগ কমার ক্ষেত্রে কাজ করছে। ২০১৯ সালের কিছু তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই বছর বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলার। অথচ একই সময়ে কম্বোডিয়ায় বিদেশি বিনিয়োগ গেছে ৩৪ বিলিয়ন ডলার। ভিয়েতনামে বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে ১৬১ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশে বার্ষিক বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ জিডিপির ১ শতাংশেরও নিচে। ভিয়েতনামে তা প্রায় ৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি এফডিআইয়ের যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়কালে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৩০ কোটি ডলারের মতো। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত যা ছিল ৫৮ কোটি ২১ লাখ ৭০ হাজার ডলার। অবশ্য ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চে দেশে এফডিআইয়ের পরিমাণ ছিল ১০৩ কোটি ৫৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার। ২০১৯ সালের পর করোনা মহামারী বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে জানান বিডার ওই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা গতকাল আজাদীকে বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ার সম্ভাবনা নেই। ২০২০ সালে প্রথম দুই মাস পরিস্থিতি ভালো ছিল। মার্চে করোনা ধরা পড়লেও বছরের শেষ দিকে এসে প্রায় সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে উঠেছিল। এতে গত বছরের প্রথম ও শেষ দিকে বেশ ভালো সাড়া ছিল বিদেশি বিনিয়োগে। গত বছর প্রায় সাড়ে ১১শ কোটি ডলার বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল। চলতি বছর পরিস্থিতি যেভাবে নিচের দিকে যাচ্ছে তাতে বিদেশি বিনিয়োগ ২শ কোটি ডলারে এসে ঠেকার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশই নয়, বৈশ্বিক বিদেশি বিনিয়োগই কমে গেছে। মহামারী পুরো পৃথিবীকে থমকে দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, বাংলাদেশে যুক্তরাজ্য, নরওয়ে, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভারত, হংকং, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া আইল্যান্ড, চীন, মরিশাস, জাপান, সুইডেন, মাল্টা, ডেনমার্ক প্রভৃতি দেশ থেকে বিদেশি বিনিয়োগ এসে থাকে। বিশেষ করে টেলিযোগাযোগ, নির্মাণ, বিদ্যুৎ, বস্ত্র ও পোশাক, বাণিজ্য, খাদ্য, ব্যাংকিং, গ্যাস, তথ্যপ্রযুক্তি, চামড়া, কেমিক্যাল প্রভৃতি খাতে এসব বিনিয়োগ আসে।
সংশ্লিষ্ট অপর একজন কর্মকর্তা বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে দূতাবাসগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। সব দূতবাস দেশের বিভিন্ন বিনিয়োগ ক্ষেত্র নিয়ে কাজ করলে দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। করোনা পরিস্থিতি ভালো হলে বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাবগুলো কাজে লাগানো সম্ভব হলে বিদ্যমান বন্ধ্যাত্ব কেটে যাবে।
এ ব্যাপারে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী গতকাল আজাদীকে বলেন, প্রচুর বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব আছে। আজও চীনের একটি বড় কোম্পানির সাথে বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে বৈঠক করলাম। বিদেশিরা প্রচুর বিনিয়োগ নিয়ে আসতে চাচ্ছেন, আসতে চান। প্রতি সপ্তাহে নতুন নতুন প্রস্তাব আসছে। আলাপ আলোচনা চলছে। কিন্তু এই প্রস্তাবগুলো যাতে ঠিকভাবে আসে, যথাযথভাবে বিনিয়োগ হয় সেজন্য আমাদের সেবা প্রদানের মানসিকতা করোনাভাইরাসের মতো সংক্রমিত করতে হবে। বিনিয়োগ আকর্ষণে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রগুলো অনেক বেশি কার্যকর এবং বিনিয়োগবান্ধব করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপুরাতন রেল স্টেশন এলাকা থেকে ৪ ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধজেলখানায় পরিকল্পনা বেরিয়ে চুরি করে ফের ধরা