ধ্বংসের মুখে বিনোদন ও পর্যটন খাত

প্রয়োজন সরকারের সুদৃষ্টি ----------এম মাহফুজুর রহমান

| সোমবার , ১০ মে, ২০২১ at ৪:৫৪ পূর্বাহ্ণ

করোনা সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বাংলাদেশ সরকারের যথাযথ উদ্যোগ ভূয়সী প্রশংসার দাবি রাখে। করোনার শুরু থেকেই অন্যান্য শিল্প ও ব্যবসায়িক খাত বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন খাতে দেওয়া হয়েছে সরকারি প্রণোদনা। করোনার তীব্র সংক্রমণে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে অবহেলিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিনোদন ও পর্যটন খাত। গত বছরের শেষ দিকে করোনার প্রকোপ কিছুটা কমলে ব্যবসায়িক ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে অনেক বিনোদন ও পর্যটন শিল্প-প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্র, স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু করোনার ২য় ধাপে আবারো বিনোদন পার্ক ও পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিনোদন পার্ক ও পর্যটন কেন্দ্রগুলোর ব্যবসায়িক মৌসুম হল ঈদ। এই সময়ে পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত থাকে পার্ক ও বিনোদনকেন্দ্রসমূহ। অন্যান্য শিল্প-প্রতিষ্ঠান, মার্কেট, গণ-পরিবহন সরকারি সিদ্ধান্তে খোলা থাকলেও এই খাতটির সকল ব্যবসা বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়ে আছে করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে। অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ন্যায় এখন যদি বিনোদন পার্কগুলো খুলে না দেওয়া হয়, তাহলে এই প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।
মানুষের জীবন ও জীবিকা একসাথে চালাতে হয়, এটি একটি আরেকটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সেজন্য বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পার্কের ধারণ ক্ষমতার ৫০ শতাংশের কম দর্শনার্থী প্রবেশ ও তাদের সামাজিক দূরত্ব বজায় নিশ্চিত রেখে কার্যক্রম পরিচালনা সহ পার্কের মূল প্রবেশ দ্বারের বাইরে থার্মাল স্ক্যানার বসানো, দর্শনার্থী পরীক্ষা পূর্বক টিকেট সংগ্রহ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার, ফুড কোর্ট আর রাইডগুলো নিয়মিত স্যানিটাইজ করা সহ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্যবিধি এবং বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী সকল ব্যবস্থা বাপা’র (বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব এমিউজম্যান্ট পার্ক স এন্ড এট্রাকশনস) পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে এবং তা নিশ্চিত করেই পার্কগুলো পরিচালনা করে আসছিল।
উল্লেখ্য, ৫০ শতাংশের কম দর্শনার্থীর কথা বলা হলেও বাস্তবে ধারণ ক্ষমতার ২০ শতাংশ দর্শনার্থীও এখন আসে না। সমপ্রতি নিউ ইয়র্কের বিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেট-এ প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে ঘরের চেয়ে বাইরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কম হয়। এ বিবেচনায় বিনোদন পার্কগুলো যেহেতু খোলা জায়গায় অবস্থিত সেহেতু এখান থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেক কম থাকে। ৬ ফিটেরও অধিক দূরত্ব হতে দর্শনার্থীদের সেবা প্রদান করা সম্ভব যা অন্যান্য সেক্টর গুলোতে বজায় রাখা সম্ভব নয়।
বিনোদন ও পর্যটন খাতে প্রচুর বিনিয়োগ এবং ব্যাংক লোন রয়েছে। লকডাউনে এ সেক্টর দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় যে ধ্বস নেমেছে তাতে শুধু প্রতিষ্ঠানের মালিকদের বড় একটি অংশের ঋণখেলাপী হওয়ার আশংকা রয়েছে। এ সেক্টর বন্ধ থাকলে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি সময় মতো পরিশোধ করা সম্ভব হবে না এবং অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী চাকরিচ্যুত হবে। সেই সাথে এর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত লক্ষ লক্ষ পরিবারের জীবন জীবিকা নির্বাহ করা দিন দিন দুরূহ হয়ে পড়বে।
গত বছর লকডাউনের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ সেক্টর সমূহের জন্য সরকার ঘোষিত প্রণোদনা দেওয়া হলেও পর্যটন শিল্প তথা বিনোদন পার্কগুলোকে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় আনা হয় নি। তাই সরকার ঘোষিত সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ঈদের আগে অন্যান্য সেক্টরের মত পার্কগুলো খুলে দেওয়ার বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।
কঙবাজার, কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকত বা পার্বত্য জেলা সমূহের মতো খোলা জায়গায় দর্শনার্থীদের যে ঢল নামে সেখানে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব হলেও আমরা মনে করি বেসরকারিভাবে পরিচালিত বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এবং যা আমরা এ লকডাউনের আগেও গাইডলাইন অনুযায়ী সঠিকভাবে পার্কগুলো পরিচালনা করেছি।
এছাড়াও বাংলাদেশে যত ওয়াটার পার্ক আছে সেখানের পানি ক্লোরিন দ্বারা পরিশোধিত, আর ক্লোরিন মিশ্রিত পানি করোনা ভাইরাস সংক্রমণের অন্তরায় (সূত্র: আন্তর্জাতিক এসোসিয়েশন অব এমিউজম্যান্ট পার্ক স এন্ড এট্রাকশনস)। এমতাবস্থায়, উপরোক্ত বিষয়সমূহ সদয় বিবেচনাপূর্বক আসন্ন ঈদের আগে অন্যান্য সেক্টর / প্রতিষ্ঠানের ন্যায় বিনোদন পার্কসমূহ খুলে দেওয়া এবং সরকার কর্তৃক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষিত হলে বিনোদন শিল্পকে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতাভুক্ত করতে সবিনয়ে অনুরোধ করছি।
লেখক : মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর, (বাপা)।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিষ্পাপ অটিজম ফাউন্ডেশনের ঈদ উপহার বিতরণ
পরবর্তী নিবন্ধনগরীর ৩শ মানুষ পেল জেলা প্রশাসনের নগদ অর্থ সহায়তা