মীরসরাইয়ে নলকূপে উঠছে না পানি, কষ্টে সাড়ে ৩ লাখ মানুষ

লামা-আলীকদমের পাহাড়ি পল্লীতেও সংকট

মীরসরাই ও লামা প্রতিনিধি | রবিবার , ৯ মে, ২০২১ at ৬:০২ পূর্বাহ্ণ

মীরসরাইয়ে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় নলকূপে পানি উঠছে না। ফলে দিশেহারা উপজেলার সাড়ে ৩ লাখ মানুষ। ওদিকে লামা ও আলীকদম উপজেলার পাহাড়ি পল্লীগুলোতে জনসংখ্যার তুলনায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক নলকূপের অভাবে বিশুদ্ধ পানির সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।
একদিকে নলকূপে পানি না উঠা অন্যদিকে পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক ও আয়রন থাকায় মীরসরাইয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে এসব মানুষ। ২০০২-২০০৩ অর্থবছরে এই অঞ্চলে নলকূপের পানি পরীক্ষা করা হলেও পরে ভাটা পড়ে যায়। দীর্ঘ ১৮ বছর পর পুনরায় চলতি মাস থেকে আর্সেনিক পরীক্ষার কাজ শুরু হবে বলে জানান, উপজেলার সহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী কে এম সাঈদ মাহমুদ। অপরদিকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের সাধারণ টিউবওয়েলগুলোতে উঠছে না পানি। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মীরসরাই অংশের পূর্ব পাশে অপরিকল্পিতভাবে অসংখ্য শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। এসব শিল্প কারখানায় পানি ব্যবহার করা হচ্ছে ভূগর্ভ থেকে। ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সাধারণ নলকূপে পানি উঠছে না। জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের দেওয়ানপুর গ্রামের বাসিন্দা সজল চন্দ্র নাথ ও প্রতাপ বণিক রানা এবং সোনাপাহাড় এলাকার বাসিন্দা মো. মহিউদ্দিন মেম্বার, সজীব দাশ কৃষ্ণ জানান, কিছু বৃহৎ শিল্প কারখানার কারণে আমাদের বাড়ির গভীর নলকূপসহ এলাকার প্রায় ৬০টি টিউবওয়েলে পানি উঠছেনা। এসব ব্যাপারে জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মকসুদ আহম্মদ চৌধুরী ও হিঙ্গুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন হারুন বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনাপাহাড় এলাকার পূর্ব পাশে বেশ কিছু গ্রামের নলকূপে পানি উঠছে না।
অন্যদিকে পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক ও আয়রন থাকায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে এসব মানুষ। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মীরসরাইয়ের ১৬ ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভার বিভিন্ন গ্রামের নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক রয়েছে। সর্বশেষ ২০০২-২০০৩ সালে ৭৫ হাজার ৩৬৬টি পরিবারের ৩২ হাজার ৪৮০টি সাধারণ নলকূপ পরীক্ষা করা হয়েছে। নলকূপগুলোর পানিতে গড়ে ৩৯.৭৭ মাত্রায় আর্সেনিক পাওয়া যায়। এর মধ্যে ১২ হাজার ৮৩৩টি নলকূপের প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলিগ্রামের অধিক মাত্রায় আর্সেনিক পাওয়া যায়। এসময় নলকূপগুলোকে লাল রঙ দিয়ে পানি পান না করতে সর্তক করা হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী কেএম সাঈদ মাহমুদ জানান, ৫০ জন মানুষের জন্য একটি গভীর নলকূপ প্রয়োজন। ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১হাজার ১২০টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও চলতি মে মাস থেকে পুনরায় নলকূপের পানিতে আর্সেনিক পরীক্ষা শুরু হবে।
এদিকে লামা ও আলীকদম উপজেলার পাহাড়ি পল্লী গুলোতে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। লামা পৌরসভা এলাকার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে করে পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রতিদিন বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, লামা ও আলীকদম উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভায় বর্তমান শুষ্ক মৌসুমে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। লামা উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা এবং আলীকদমের ৪টি ইউনিয়নে জনসংখ্যার তুলনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক নলকুপ না থাকায় এমনিতে বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে। বর্তমান শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নীচে নেমে যাওয়ায় শতকরা নব্বই ভাগ রিংওয়েল এবং টিউবওয়েলে পানি পাওয়া যাচ্ছেনা। এছাড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক স্থাপিত নলকূপ গুলোর প্রায় ৮০ শতাংশই দীর্ঘদিন ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। জনস্বাস্থ্য বিভাগ এসব অকেজো নলকূপ মেরামত বা সংস্কারে কোন উদ্যোগ নিচ্ছেনা বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, এক কলস বিশুদ্ধ পানির জন্য ৩ কিলোমিটার পথ পর্যন্ত পাড়ি দিতে হচ্ছে। লামা পৌরসভার পানি প্রকল্পটি চালু থাকায় উপজেলা সদর এলাকায় পানি সংকট কিছুটা কম হলেও দুর্গম এলাকার পাহাড়ি পল্লী গুলোতে তীব্র পানি সংকট বিরাজ করছে। আলীকদমের নবগঠিত দুটি ইউনিয়নসহ ৪ ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামেই পানির সঙ্কট চলছে। উপজেলার পানবাজার, উত্তর পালংপাড়া, পূর্ব পালংপাড়া, প্রভাতপাড়া, সিলেটি পাড়া ও আবু মাঝি পাড়া, কলার ঝিরি, পুনর্বাসন, বাঘের ঝিরি, যোগেন্দ্র পাড়া, তারাবুনিয়া, রোয়াম্ভূ, নয়াপাড়া, মংচা পাড়া, জানালী পাড়া, কুরুকপাতা, পোয়ামুহুরীসহ বিভিন্ন এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংকট দেখা দিয়েছে। যে সকল রিংওয়েল ও টিউব ওয়েলে পানি পাওয়া যাচ্ছে, সকাল-বিকাল সে সকল রিংওয়েল টিবওয়েল গুলোতে মহিলারা কলসি নিয়ে দীর্ঘ লাইন ধরে ভিড় জমাচ্ছেন।
লামা পৌরসভার মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় ও অতি খরার কারণে পৌরসভা এলাকার বিভিন্ন স্থানে তীব্র পানি সংকট দেখা দিয়েছে। পৌরসভার মানুষের পানীয় জলের সংকট লাঘবে ভৌর্তুকি দিয়ে পানি সরবরাহ প্রকল্পটি চালু রাখা হয়েছে। এর পরেও যাদের বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে সে সকল পাড়া-মহল্লায় ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে করে প্রতিদিন বিনামূল্যে খাবার পানি সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছি। পানি সংকট লাঘব না হওয়া পর্যন্ত পানি সরবরাহ অব্যাহত থাকবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিবির ক্যাডার কফিল গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধচকবাজারে অস্ত্রসহ ৬ ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার