অবশেষে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অনুমোদন মিলেছে কর্ণফুলী গ্যাসের এক লাখ প্রিপেইড মিটার প্রকল্প। অনুমোদনের নথি হাতে পেলেই প্রকল্পটির টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরুর আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ২৫৮ কোটি টাকার ন্যাচারাল গ্যাস ইফিসিয়েন্সি প্রজেক্ট (ইন্সটলেশন অফ প্রি-পেইড গ্যাস মিটার ফর কেজিডিসিএল পার্ট-৩) প্রকল্পটি পুরোপুরি নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল)। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে আবাসিকে আরো ১ লক্ষ গ্রাহক প্রিপেইড মিটারিংয়ের আওতায় আসবে। অন্যদিকে বৈদেশিক অর্থায়ন জটিলতার কারণে প্রস্তাবিত দুই লাখ প্রিপেইড মিটারের দ্বিতীয় প্রকল্পটি এখনো চিঠি চালাচালির মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে।
কেজিডিসিএল সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে আবাসিক গ্রাহকদের ব্যবহৃত গ্যাসের অপচয় রোধের লক্ষ্যে ন্যাচারাল গ্যাস ইফিসিয়েন্সি প্রজেক্ট (ইন্সটলেশন অফ প্রি-পেইড গ্যাস মিটার ফর কেজিডিসিএল পার্ট-৩) নামের তৃতীয় প্রকল্প হাতে নেয় কেজিডিসিএল। এক লাখ গ্রাহককে প্রিপেইড মিটার সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে প্রায় ১৫ মাস আগে নেওয়া প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। তিন বছর মেয়াদী প্রকল্পটি ২০২৪ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা। এর আগে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর প্রকল্প ব্যয়ের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে সম্মতি পায় বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান কেজিডিসিএল। চলতি সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। প্রস্তাবিত প্রকল্পটির আওতায় নগরীর বায়েজিদ, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, চকবাজার, পাহাড়তলী, খুলশী, বাকলিয়া, সদরঘাট, কোতোয়ালী, হালিশহর, ডবলমুরিং, বন্দর, ইপিজেড, পতেঙ্গা, আকবরশাহ ও জেলার কর্ণফুলী, হাটহাজারী, সীতাকুণ্ড, মীরসরাই, পটিয়া, বোয়ালখালী, চন্দনাইশ, আনোয়ারা উপজেলায় প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হবে। সূত্রে জানা গেছে, জাইকার অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রথম প্রকল্পের ৬০ হাজার প্রিপেইড গ্রাহকরা পিওএস (পয়েন্ট অব সেলস) স্টেশন থেকে স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে ক্রেডিট কিনে প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করে গ্যাস ব্যবহার করে থাকেন। প্রস্তাবিত প্রকল্পে গ্রাহকরা ঘরে বসে মোবাইল ব্যাংকিং ও অনলাইনের মাধ্যমেও প্রি-পেইড বিল পরিশোধ করার সুবিধা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
কেজিডিসিএলের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় দৈনিক আজাদীকে বলেন, জাইকার অর্থায়নে প্রথম প্রকল্পে ৬০ হাজার প্রিপেইড মিটার সংযোজন প্রকল্পে ব্যাপক সাড়া পেয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস। প্রকল্পটিতে সংযোজিত মিটারগুলো জাপানি হওয়ায় টেকসইও হয়েছে। এখনও পর্যন্ত মিটারগুলোতে বড় কোন যান্ত্রিক সমস্যা পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, প্রি-পেইড হওয়ার আগে গ্রাহকরা গড়ে মাসে ৬৬ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহৃত করতো। প্রিপেইড মিটার সংযোজিত গ্রাহকদের ক্ষেত্রে গড় ব্যবহার ৪০ ঘনমিটারে নেমে এসেছে। এতে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় হ্রাস পেয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় প্রথমে দুই লাখ মিটার সংযোজনের জন্য দ্বিতীয় প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু ওই প্রকল্পটিতে বিদেশি অর্থায়ন ধরা হয়েছিল। বিদেশি অর্থায়ন নিয়ে ইতোমধ্যে জ্বালানি খনিজ সম্পদ বিভাগে বেশ কয়েকবার বৈঠক হয়েছে। তবে এক লাখ প্রি-পেইড মিটার সংযোজনের প্রকল্পটির পুরোটাই কর্ণফুলী গ্যাসের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্প ব্যয়ের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি মিলেছে প্রায় ৮ মাস আগে। চলতি সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে প্রকল্পটির বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনুমোদনের অফিসিয়াল কপি হাতে পেলেই টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব হবে।
প্রসঙ্গত, ন্যাচারাল গ্যাস ইফিসিয়েন্সি প্রজেক্ট নামে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর ২২২ কোটি ৪৮ লাখ টাকায় ৬০ হাজার প্রিপেইড মিটার সংযোজনের প্রথম প্রকল্প অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ২০১৯ সালের ৩০ জুন শেষ হওয়া ওই প্রকল্পটিতে শেষতক প্রায় ৭৩ কোটি টাকার অধিক ব্যয় সাশ্রয় হয়। সবমিলিয়ে ১৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬০ হাজার প্রিপেইড মিটার সংযোজন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে কেজিডিসিএল।