করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সরকারি বিধি-নিষেধ অনুযায়ী পর্যটন কেন্দ্র এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট হোটেল-মোটেল ও গণপরিবহণ বন্ধ থাকার কথা। কিন্তু কক্সবাজারে সেটি কতটুকু মান্য করা হচ্ছে- তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে এ করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন তারকা হোটেলের ঈদ প্যাকেজ ঘোষণার বিষয়টি অনেকের মাঝে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। গত সপ্তাহে কক্সবাজারের একটি হোটেল থেকে এক তরুণীর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। অথচ করোনা সংক্রমণ মোকাবেলায় এপ্রিল মাসের শুরু থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও হোটেল মোটেলসহ সকল পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই কারণে আন্তঃজেলা গণপরিবহণ চলাচলও বন্ধ রয়েছে। সরকারি এই বিধি-নিষেধ আগামী ১৬ মে পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। কিন্তু এ বিধি নিষেধের মাঝেও কিছু হোটেল খোলা রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রকাশ্যে ফেসবুকে ঈদ প্যাকেজও ঘোষণা করছে। আবার আন্তঃজেলা গণপরিবহণ চলাচল বন্ধ থাকার কথা থাকলেও তাও মানা হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য সরকারি বিধি-নিষেধ অনুযায়ী কোনো আবাসিক হোটেল খোলা থাকার কথা নয়। আন্তঃজেলা গণপরিবহণ চলাচলেরও কথা নয়। কিন্তু যারা সরকারি আদেশ অমান্য করছে, তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি জানান, শুক্রবার সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রাম যাওয়ার সময় হানিফ পরিবহনের দুইটি বাসকে ১১ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট। একইভাবে কাউন্টার খোলা রাখায় শ্যামলী পরিবহনের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। একই দিনের অভিযানে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করার অপরাধে আরো ৬টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে।
তবে কঙবাজারের অন্তত ৪টি তারকা হোটেল এ করোনা পরিস্থিতিতেও ঈদ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। বর্তমানে ওই হোটেলগুলো পুরোদমে চালু রয়েছে। তারা পর্যটকদের কক্ষ ভাড়াও দিয়ে যাচ্ছে। শুধু এসব হোটেল নয় কঙবাজারের অধিকাংশ আবাসিক হোটেলই গোপনে কক্ষ ভাড়া দিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ অনেকের।
কঙবাজার সমুদ্র সৈকতের ব্যবসায়ী ফরিদ বলেন, শহরের রেস্তোরাঁ ও সৈকতের ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়া প্রায় সকল আবাসিক হোটেল এখন খোলা রয়েছে। হোটেলগুলো পর্যটকদের খাবারের প্যাকেজসহ রুম ভাড়া দিচ্ছে। হোটেলগুলোর ভেতরেই এখন রেস্তোরাঁ বানানো হয়েছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে হোটেল মালিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম সিকদার বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত দেশি-বিদেশি কর্মকর্তাদের মাসিক ভিত্তিতে অবস্থানের কারণে কিছু হোটেল খোলা রাখা হয়েছে। তবে তা ৩০টির বেশি হবে না। হোটেল থেকে তরুণীর লাশ উদ্ধারের বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু অনুমোদিত ফ্লাটে কক্ষ ভাড়া দেয়া হচ্ছে- এটা ঠিক। তবে তারা আমাদের সংগঠনভুক্ত কোনো হোটেল নয়।
কঙবাজার শহরের টেকপাড়ার বাসিন্দা শাহেদ বলেন, কঙবাজার শহরের কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখি না। মানুষ ও যানবাহনের ভিড়ে শহরে হাঁটাও যায় না। একই পরিস্থিতি গ্রামের হাটবাজারগুলোতেও বলে জানান তিনি। তবে কঙবাজার জেলা প্রশাসন স্বাস্থ্যবিধি কার্যকরে নিয়মিতভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।