চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত ওষুধ কোম্পানি সিনোফার্মের তৈরি করা করোনা ভাইরাসের টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা- ডব্লিউএইচও। পশ্চিমা দেশগুলোর বাইরে উদ্ভাবিত করোনা ভাইরাসের কোনো টিকা এই প্রথম বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সবুজ সংকেত পেল। চীনা দুটি কোম্পানির তৈরি টিকার কয়েক কোটি ডোজ ইতোমধ্যে সেদেশে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেওয়া হয়ে গেছে। এর মধ্যে সিনোফার্মের তৈরি দুটি টিকার একটি হল বিবিআইবিপি-করভি (ইইওইচ-ঈড়ৎঠ)। শুক্রবার এ টিকার অনুমোদন দেওয়ার কথা জানিয়ে ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গ্যাব্রিয়াসুস বলেন, বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত ‘স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভাইজরি গ্রুপ অব এক্সপার্টস’ ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য এই টিকার দুই ডোজ সুপারিশ করেছে। খবর বিডিনিউজের।
এর মাধ্যমে কোভিড-১৯ টিকার তালিকা আরেকটু দীর্ঘ হল, যেখান থেকে কোভ্যাঙ কিনতে পারবে। একই সঙ্গে অন্যান্য দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনের ক্ষেত্রেও আস্থা বাড়াবে এবং টিকার প্রয়োগ ও আমদানির সুযোগ তৈরি হবে।
বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশ ইতোমধ্যে সিনোফার্মের টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। সিনোফার্মের পাশাপাশি সিনোভ্যাকের টিকার জন্যও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে আবেদন করা হয়েছিল। তবে ওই টিকার বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত জানায়নি ডব্লিউএইচও। এছাড়া কনভিসিয়া নামে আরো একটি চীন টিকা এখনো ট্রায়ালের পর্যায়ের রয়েছে।
রয়টার্স লিখেছে, কোনো ধরনের সংক্রামক রোগের জন্য চীনে উদ্ভাবিত কোনো টিকা এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছ থেকে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পায়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছ থেকে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পাওয়ার মানে হল, দেশগুলো এ টিকার মান ও কার্যকারিতা নিয়ে আস্থা রাখতে পারে।
আর ডব্লিউএইচওর তালিকায় নাম উঠলে সেই টিকা কোভ্যাঙের মাধ্যমেও দেওয়ার পথ তৈরি হয়। মূলত গরিব দেশগুলোর টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে কোভ্যাঙ নামের এই প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা হয়েছে। ডব্লিউএইচও এর আগে ফাইজার-বায়োএনটেক, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, জনসন অ্যান্ড জনসন এবং মডার্নার টিকা জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দিয়েছিল।
এর মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার তিন কোটি ডোজ ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে কিনে গত ফেব্রুয়ারিতে গণটিকাদান শুরু করে বাংলাদেশ। কিন্তু ভারত টিকা রপ্তানি বন্ধ রাখায় কেনা টিকার পুরো চালান বাংলাদেশ সময়মত পাচ্ছে না। ফলে অন্য উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ নিতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
এর অংশ হিসেবে ২৯ এপ্রিল সিনোফার্মের টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশের ওষুধ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তার আগে রাশিয়ায় তৈরি স্পুৎনিক ভি টিকাও বাংলাদেশে অনুমোদন পায়। সিরোফার্মের ভাষ্য, পরীক্ষামূলক প্রয়োগে তাদের টিকা ৭৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ কার্যকারিতা দেখিয়েছে। তবে এ টিকার কার্যকারিতার হার এবং ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তথ্য নিয়ে ‘অস্বচ্ছতার’ অভিযোগ অনেক দিন ধরেই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে আলোচনায় রয়েছে।