চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ভেজাল বীজ ব্যবহার করে ধানের ফলন বিপর্যয়ের কবলে পড়েছেন এক কৃষক। চলতি বোরো মৌসুমে লাল তীর হাইব্রিড টিয়া জাতের বীজ ধান চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে দাবি মুহাম্মদ মঈন উদ্দীন নামের ওই কৃষকের। চাষাবাদের খরচ ও ফসল ঘরে তুলতে না পেরে ব্যাপক লোকসানে পড়েছেন তিনি। এ অবস্থায় তিনি ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। তাঁর অভিযোগ, লাল তীর হাইব্রিড টিয়া জাতের বীজে উচ্চ ফলন হওয়ার লোভ দেখিয়ে তাকে এই ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু রোপণের ২৮ দিনের মাথায় ধানের শীষ বের হয়ে গেছে। ওই কোম্পানির তদন্ত দল পরিদর্শন করেও কোনো প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়নি। ফলন যেখানে একর প্রতি ১১০-১২০ মণ হবে বলে লোভ দেখানো হয়েছিল সেখানে ফলন হয়েছে মাত্র ১৯ মণ। ফলে এই মৌসুমে জমিতে আর্থিক বিনিয়োগ ও শারীরিকভাবে শ্রম দিয়েও ২ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন তিনি। এতে ঋণ করে চাষাবাদ করা এই কৃষক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়লেও তার এমন ক্ষতির দায়ভার নিতে চাইছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এই বিষয়ে তিনি জেলা বীজ প্রত্যায়ন কর্মকর্তা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক, উপ-পরিচালক এবং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় গ্রামের প্রান্তিক কৃষক মুহাম্মদ মঈন উদ্দীনের সাথে। তিন জানান, উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের বুড়ির দোকান এলাকার কৃষক তিনি। লাল তীর কোম্পানির এস.আর সাইফুল ইসলাম তাকে বলেন, এ জাতের ধান উচ্চ ফলনশীল। এ জাতের ধান গাছের জীবনকাল ১৩০-১৩৫ দিনের মতো। ফলনও একর প্রতি ১১০-১২০ মণ। যা ওই বীজের প্যাকেটের গায়েও লেখা রয়েছে। তার কথা অনুযায়ী রোয়াজারহাট এলাকার ‘বি আলম বীজ ভান্ডার’ নামক দোকান থেকে ৩৫০টাকা হারে ৩৯ কেজি লালতীর কোম্পানির হাইব্রিড টিয়া বীজ ধান ক্রয় করেন কৃষক মুহাম্মদ মঈন উদ্দীন। যার লট নং- ২৭০৭, প্যাকেজিং তারিখ- অক্টোবর ২০২০ এবং মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ২০২১ পর্যন্ত। পরবর্তীতে এই জাতের বীজ দিয়ে সাড়ে ৮ একর জমিতে চাষাবাদ করে তার সবমিলিয়ে ৩ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়। কিন্তু রোপণ করার পর দেখা যায় নিম্ন মানের ভেজাল বীজ ধান। রোপণের মাত্র ২৮ দিনেই ধানে শীষ চলে এসেছে। অপরিপক্ব এসব শীষে ধান নেই, আছে চিটা। বিষয়টি তিনি তাৎক্ষণিক দোকান কর্তৃপক্ষ এবং লালতীর কোম্পানির এস.আর-কে জানালে কোম্পানিটির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এসে সরেজমিনে পরিদর্শন করে। এসময় তারা ফলন বিপর্যয় হওয়াতে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং তার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে ফলন আসার পর ওই এসআর-এর উপস্থিতিতে দেখা যায় ফলন হয়েছে মাত্র একর প্রতি ১৯ মণ করে। বীজ কর্তৃপক্ষকে পরবর্তীতে বিষয়টি বলা হলে তারা কোনো সুরাহা না দিয়ে উল্টো বিভিন্ন ধরণের হুমকিমূলক কথাবার্তা বলতে থাকে। ফলন বিপর্যয়ে দিশেহারা হয়ে ঋণের জালে জর্জরিত হয়ে পড়েছেন ফসলনির্ভর এ চাষী।
তিনি বলেন, ‘তাদের হিসাবে আমার প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা লাভ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উল্টো আমি প্রায় ২ লাখ টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছি। ক্ষতিপূরণ চেয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা আমার সাথে খারাপ আচরণ করেছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লাল তীর কোম্পানির চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন প্রশ্ন এড়িয়ে যান। তবে কথা হয় একই কোম্পানির রাঙ্গুনিয়ার এস.আর সাইফুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, ‘রাঙ্গুনিয়ায় আমরা তিন টন ধানের বীজ বিক্রি করেছি। কোনোটাতে খারাপ রিপোর্ট আসেনি। হয়ত চাষাবাদের কোনো ত্রুটির কারণে ফলন বিপর্যয় হয়েছে। এই বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর তারা এসে সরেজমিন দেখে গেছেন। তবে লকডাউনের কারণে হেড অফিস বন্ধ থাকায় এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি। অফিস খুললে এই বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এই বিষয়ে চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘রাঙ্গুনিয়ায় এক কৃষকের ধানের ফলন বিপর্যয়ের বিষয়ে জেনেছি। এই বিষয়ে একটি অভিযোগের অনুলিপিও পেয়েছি। এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর বরাবর সুপারিশ করা হবে।’
চট্টগ্রাম জেলা বীজ প্রত্যায়ন কর্মকর্তা মো. আবদুস সুবহান বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’