গণ টিকাদান শুরুর পর ২৭ ফেব্রুয়ারি করোনার টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন বেসরকারি এক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অভিজিৎ দাশ। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল কেন্দ্রে তিনি এ টিকা নেন। ৮ সপ্তাহ বা দুই মাস ব্যবধানে তার দ্বিতীয় ডোজ টিকা গ্রহণের সময় দাঁড়ায় ২৬/২৭ এপ্রিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের এক সপ্তাহ পার হলেও দ্বিতীয় ডোজের কাঙ্ক্ষিত এসএমএস তিনি পাননি। এদিকে মহানগরের কেন্দ্রগুলোতে এসএমএস ছাড়া টিকা দেয়াও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে টিকার দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া নিয়ে জটিলতায় পড়েছেন অভিজিৎ। এসএমএস জটিলতার পাশাপাশি দুটি ডোজ গ্রহণের পর টিকা সনদ পেতেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। দুই ডোজ টিকা গ্রহণের এক মাস পরও সুরক্ষা প্লাটফর্মের ওয়েসাইট থেকে অনেকে টিকা সনদ সংগ্রহ করতে পারছেন না। সনদ পেলেও সেখানে টিকা গ্রহণের তারিখে গরমিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে টিকা গ্রহণের পর প্রত্যেক টিকাগ্রহীতার তথ্য নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে ইনপুট দিতে (হালনাগাদ করতে) হয়। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতায় যথাসময়ে (টিকাগ্রহণের দিন) এই অনলাইন এন্ট্রি দিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। কেউ ৫ মার্চ টিকা নিলেও তার অনলাইন এন্ট্রি দেয়া হয়েছে ২৫ মার্চ। আবার যেদিন অনলাইন এন্ট্রি দেয়া হয় টিকা গ্রহণের তারিখ হিসেবে অনলাইনে সেদিনের তারিখই এন্ট্রি হয়। পিছনের তারিখ উল্লেখের সুযোগ নেই। এতে করে প্রথম ডোজ ৫ মার্চ নিলেও অনলাইনে এন্ট্রির ক্ষেত্রে সেটি হয়ে যাচ্ছে ২৫ মার্চ (অনলাইন এন্ট্রির দিন)। যার কারণে যথাসময়ে ২য় ডোজের এসএমএস পাচ্ছেন না টিকাগ্রহীতারা। টিকা গ্রহণের পর বিলম্বে অনলাইন এন্ট্রির কারণে এক মাসেও মিলছে না টিকা সনদ। তাছাড়া অনলাইন এন্ট্রির ক্ষেত্রে পিছনের তারিখ উল্লেখের সুযোগ না থাকায় টিকা গ্রহণের তারিখেও গরমিল রয়ে যাচ্ছে টিকা সনদে। সবমিলিয়ে টিকাগ্রহীতাদের তথ্য অনলাইন এন্ট্রিতে (ওয়েবসাইটে হালনাগাদে) হ-য-ব-র-ল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
অনলাইনে তথ্য হালনাগাদে বিলম্ব ও জটিলতার বিষয়টি স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারাও। প্রথমদিকে ওয়েবসাইটের সার্ভারজনিত সমস্যা ও জনবল সংকটের কারণে এমন জটিলতায় পড়তে হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম সিটিকর্পোরেশন (চসিক) ভ্যাকসিন প্রদান কমিটির সদস্য সচিব ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী ও চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। কয়েকদিনের মধ্যেই এ জটিলতা কেটে যাবে বলে দাবি করেছেন তারা।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি টিকার প্রথম ডোজ নেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ডা. ইমরান বিন ইউনুস। দ্বিতীয় ডোজ নেন ১৩ এপ্রিল। দুটি ডোজ গ্রহনের ১৫ দিন পরও তিনি টিকা সনদ নিতে পারছিলেন না। বারবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছিলেন। এ নিয়ে তিনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। ফেসবুকে পোস্ট দেখে এগিয়ে আসেন এক চিকিৎসক। ওই চিকিৎসক তাঁর কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়ে নেন। পরে টিকা সনদ হাতে পান তিনি। তবে সনদে টিকাগ্রহনের তারিখের গরমিল চোখ এড়ায়নি এই চিকিৎসকের।
ডা. ইমরান বিন ইউনুস আজাদীকে বলেন, আমি ৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম ডোজ নিলেও টিকা সনদে উল্লেখ আছে ১ মার্চ। আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছি ১৩ এপ্রিল। কিন্তু সনদে উল্লেখ করা হয়েছে ২৮ এপ্রিল। তাহলে আমার টিকা গ্রহনের সঠিক সময় তো সনদে আসলো না। যথাযথ তদারকির অভাব ও ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে এমন হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
১০ ফেব্রুয়ারি প্রথম ডোজ গ্রহনের পর ১১ এপ্রিল টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন আসকার দিঘী পাড়ের বাসিন্দা মইনুল ইসলাম খান। যদিও ওই সময় দ্বিতীয় ডোজের এসএমএস পাননি তিনি। টিকাগ্রহনের ২০ দিন পর গত শনিবার তিনি দ্বিতীয় ডোজ গ্রহনের জন্য এসএমএস পেয়েছেন। এসএমএস-এ তার দ্বিতীয় ডোজ গ্রহনের তারিখ হিসেবে আগামী ৫ মে উল্লেখ করা হয়েছে। মইনুল ইসলাম বলেন, ৮ সপ্তাহ ব্যবধান হিসেব করে আমি দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে নিয়েছি। কিন্তু এসএমএস এসেছে শনিবার। এসএমএস-এ ৫ মে দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। প্রথম ডোজ থেকে ব্যবধান হিসেব করলে যা প্রায় তিন মাসে দাড়াঁয়। দ্বিতীয় ডোজ গ্রহনের ২০/২২ দিন পার হলেও এখনো টিকা সনদ পাননি বলেও জানান তিনি।
জানতে চাইলে চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী আজাদীকে বলেন, প্রথম দিকে সফটওয়্যারে ক্রটি-বিচ্যুতি ছিল। সার্ভার ওপেনও হয়নি (খোলা যায়নি)। জনবলেরও সংকট। সবমিলিয়ে যথাসময়ে অনলাইনে এন্ট্রি দেয়া যায়নি। যার কারণে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তবে ধাপে ধাপে সব জটিলতা কেটে যাবে। সবাই সনদও পেয়ে যাবেন। আর এসএমএস নিয়ে কোন সমস্যা থাকলে তাদের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছেন ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী।
সফটওয়্যারে পিছনের তারিখ উল্লেখের সুযোগ নেই জানিয়ে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, সফটওয়্যারে ওভাবে সেট করা। অনলাইনে যেদিন এন্ট্রি দেয়া হয়, টিকা গ্রহণের সময় হিসেবে ওই দিনের তারিখই ইনপুট হয়ে যায়। যার কারণে পিছনের তারিখ বা টিকা গ্রহণের প্রকৃত সময় উল্লেখের সুযোগ নেই। জনবল সংকটসহ বিভিন্ন কারণে অনলাইনে যথাসময়ে তথ্য হালনাগাদ করা সম্ভব হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, তবে এখন দ্রুত কাজ হচ্ছে। দিনের তথ্য দিনেই হালনাগাদ হচ্ছে। আর কয়েকদিনের মধ্যেই সব জটিলতা কেটে যাবে। দুই ডোজ সম্পন্ন করা সবাই টিকা সনদও পেয়ে যাবেন।