লকডাউনের প্রভাবে কমে গেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) রাজস্ব আদায়। পূরণ হচ্ছে না লক্ষ্যমাত্রা। এতে নিজস্ব আয়ের উপর নির্ভরশীল উন্নয়ন কাজ পরিচালনায় বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে সংস্থাটিকে। এছাড়া রাজস্ব আয় না বাড়লে আগামীতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধেও হিমশিম খেতে হবে।
চসিকের রাজস্ব শাখা সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটির রাজস্ব আয়ের বড় খাত পৌরকর এবং ট্রেড লাইসেন্স ফি। গত মাসে (এপ্রিল) এ দুই খাতে আগের মাসের (মার্চ) চেয়ে আয় কমেছে দুই কোটি ৯৬ লাখ ৭৫ হাজার ৪১১ টাকা। এর মধ্যে শুধু পৌরকর খাতে আদায় কমেছে দুই কোটি ২০ লাখ ৮৭ হাজার ৯৬ টাকা। ট্রেড লাইসেন্স খাতে কমেছে ৭৫ লাখ ৮৮ হাজার ৩১৫ টাকা।
এছাড়া ভূমি হস্তান্তর কর, বিজ্ঞাপন কর (গাড়ির স্টিকার, ব্যানার, ফেস্টুন), সপসাইন, চলচ্চিত্র ও বিনোদন কর, যান্ত্রিক যানবাহন ফি, অযান্ত্রিক যানবাহন ফি (রিক্সা ভ্যান, ঠেলাগাাড়ি) ও এস্টেট শাখায়ও কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় হয়নি।
কর আদায়কারীরা বলছেন, গত মাসে সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটি ছিল ১০ দিন। এর বাইরে কঠোর লকডাউন শুরু হলে রাজস্ব আদায় কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। লকডাউনের কারণে ১৫ থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত আদায় সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে আদায় শুরু হলে করোনাপরিস্থিতিতে আর্থিক সংকটের অজুহাতে পৌরকর পরিশোধে অনীহা প্রকাশ করে আসছে হোল্ডিং মালিকরা। এছাড়া লকডাউনের কারণ যানবাহন সংকট থাকায় করদাতাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। সবমিলিয়ে কমে গেছে আদায়।
এ বিষয়ে চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, আদায় অনেক কমে গেছে। যেমন গতকাল আদায় হয়েছে মাত্র ৫ লাখ টাকা। যা অন্য সময়ে ৪০ লাখ টাকা হতো। তিনি বলেন, লকডাউনের প্রভাবেই আদায় কমেছে। লকডাউন যতদিন থাকবে ততদিন এরকম আদায় কম হবে। তারপরও আদায়কারীদের চাপ দিচ্ছি। তারা যেন করদাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে রাজস্ব আদায় করেন।
প্রসঙ্গত, করোনা পরিস্থিতির কারণে গতবছরও (২০২০) ২৫ মার্চ থেকে ৪ মে পর্যন্ত পৌরকর আদায় সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। এরপর ৫ মে থেকে আদায় শুরু হলেও পরবর্তী কয়েক মাস বেসরকারি পর্যায়ে আদায় হার ছিল নামমাত্র। রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় অর্থ সংকটের কারণে গত বছরের এপ্রিল মাসের বেতন নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ করতে পারেনি চসিক। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে এপ্রিল মাসের বেতন তিন ধাপে পরিশোধ করা হয়। গত মে মাসের বেতনও নির্দিষ্ট তারিখে দেয়া সম্ভব হয়নি। জুন মাসে দুই ধাপে পরিশোধ করা হয়েছে।
রাজস্ব আদায়ের চিত্র :
নগরে এক লাখ ৯৭ হাজার ৩৮৩টি হোল্ডিং আছে। এর মধ্যে সরকারি এক হাজার ৫১৬ টি এবং বেসরকারি হোল্ডিংয়ের সংখ্যা এক লাখ ৯৫ হাজার ৮৬৭ টি। হোল্ডিংগুলোর বিপরীতে গত মাসে পৌরকর আদায় হয়েছে চার কোটি ৪৯ লাখ ৮৯ হাজার ১৫২ টাকা। যা মার্চ মাসে ছিল ছয় কোটি ৭০ লাখ ৭৬ হাজার ২৪৮ টাকা। গত মাসে আদায়কৃত পৌরকরের মধ্যে সরকারি হোল্ডিংয়ের বিপরীতে তিন কোটি তিন লাখ ১৪ হাজার ২৬১ টাকা এবং বেসরকারি হোল্ডিংয়ের বিপরীতে আদায় হয়েছে এক কোটি ৪৬ লাখ ৭৪ হাজার ৮৯১ টাকা। এ ছাড়া গত মাসে ট্রেড লাইসেন্স ফি খাতে আদায় হয়েছে ২১ লাখ ১১ হাজার ১০০ টাকা। যা মার্চ মাসে ছিল ৭৭ লাখ ৯৯ হাজার ৪১৫ টাকা।
এদিকে নগরে উন্নয়নে একনেক অনুমোদিত প্রকল্পে ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ অর্থের যোগান দেয় সরকার। বাকি ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ অর্থ নিজস্ব তহবিল থেকে দিতে হয়। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও সরকারি প্রকল্পের অর্থ ছাড় বন্ধ হয়নি। ফলে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সমস্যা হচ্ছে না। তবে নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্প বাস্তবায়ন, প্যাচওয়াক, পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম এবং কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন-ভাতা পরিশোধ নির্ভর করে রাজস্ব শাখার আয়ের উপর। রাজস্ব আদায় কমে গেলে প্রভাব পড়ে সেখানে।