গত মার্চ থেকে চট্টগ্রামেও শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় দ্বিতীয় ঢেউয়ে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। চিকিৎসকরা দাবি করেছেন দ্বিতীয় ঢেউয়ের এ ভাইরাস প্রথম দিকের ভাইরাসের তুলনায় অনেক বেশি সংক্রমনশীল। অর্থাৎ দ্বিতীয় ঢেউয়ের ভাইরাসের সংক্রমনের তীব্রতা বেশি। আক্রান্ত হলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই রোগীর শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ছে। এর জন্য ভাইরাসের কোন ভ্যারিয়েন্ট দায়ী তা এতদিন জানা ছিল না। তবে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যায়ের (সিভাসু) এক দল গবেষক সমপ্রতি এ তথ্য উদঘাটন করেছেন। চট্টগ্রামের দশটি নমুনা থেকে নভেল করোনাভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকুয়েন্স বা জীবন রহস্য উন্মোচনের মাধ্যমে তারা এ তথ্য উদঘাটন করেন। এতে দশটি নমুনার মধ্যে ৬টিতে ইউকে (যুক্তরাজ্য) ভ্যারিয়েন্ট (ই.১.১.৭), ৩টিতে দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট (ই.১.৩৫১) ও একটিতে অস্ট্রেলিয়ান ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পেয়েছে গবেষক দল। অর্থাৎ চট্টগ্রামে আক্রান্তদের মাঝে ৬০ শতাংশের শরীরে ইউকে ভ্যারিয়েন্টের ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। আর ৩০ শতাংশের শরীরে পাওয়া গেছে দক্ষিন আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট-এর ভাইরাস।
‘কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি মূল্যায়ন’ বিষয়ে এক গবেষণা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ভাইরাসের এই জিনোম সিকুয়েন্স করেছেন গবেষকরা। সিভাসুর এই গবেষক দলে রয়েছেন প্রফেসর ড. পরিতোষ কুমার বিশ্বাস, প্রফেসর ড. শারমিন চৌধুরী, ডা. ইফতেখার আহমেদ রানা, ডা. ত্রিদীপ দাশ, ডা. প্রনেশ দত্ত, ডা. মো. সিরাজুল ইসলাম ও ডা. তানভীর আহমদ নিজামী। সিভাসুর পোল্ট্রি রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং সেন্টারের (পিআরটিসি) আর্থিক সহায়তায় এ গবেষণার সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন সিভাসুর উপাচার্য প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ। তিনি বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর গত ২৬ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সংগ্রহ করা নমুনার মধ্যে দশটি নমুনা জিনোম সিকুয়েন্সের জন্য ঢাকার বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে (বিসিএসআইআর) পাঠানো হয়। বিসিএসআইআরের দুজন গবেষক এবং মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সেলিম খান ও ড. মো. মোরশেদ হাসান সরকার এ গবেষনা কার্যক্রমে অংশ নেন।
জিনোম সিকুয়েন্সে পাওয়া ফলাফল প্রসঙ্গে গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন, দ্বিতীয় ঢেউয়ে চট্টগ্রামে যে ধরণের ভাইরাস সংক্রমন ছড়াচ্ছে, তার ৬০ শতাংশ ইউকে ভ্যারিয়েন্ট এবং ৩০ শতাংশ দক্ষিন আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট। তবে বর্তমান সময়ে ভারতে যে ভ্যারিয়েন্টটি পাওয়া গেছে, তা এর মধ্যে পাওয়া যায়নি। যদিও মাত্র দশটি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সে শতভাগ সঠিক চিত্র পাওয়া গেছে, এমনটি বলা যাবে না। চট্টগ্রামে ভারতের ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে কী না, তা জানতে আরো বড় পরিসরে (বেশি সংখ্যায়) জিনোম সিকুয়েন্স করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
দ্বিতীয় ঢেউয়ে যে ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে, তা আগের ভাইরাসের তুলনায় তিনগুন বেশি সংক্রমন ছড়ায় জানিয়ে জিনোম সিকুয়েন্সের এ তথ্য পাবলিক ডাটাবেজে (জিআইএসএআইডি) জমা দেয়া হয়েছে বলে জানান সিভাসুর উপাচার্য। উল্লেখ্য, প্রথম ঢেউয়ে চট্টগ্রামের ৮টি নমুনার জিনোম সিকুয়েন্স করেছিল সিভাসু।