আশা জাগানিয়া একটা সংবাদ : ‘নতুন মাইলফলকে অর্থনীতি’। গত ২৯ শে এপ্রিল দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, ভয়াল করোনায় বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মাঝেও বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলার স্পর্শ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গতকালকের হিসেবে দেশের রিজার্ভ নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করছে। অর্থনীতিবিদরা বৈদেশিক মুদ্রার এই অবস্থান বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নতুন শক্তি যোগাবে বলে মন্তব্য করেছেন।
বলতে গেলে বাংলাদেশের উন্নয়নে আমাদের অর্ধশত শতাব্দী যাত্রার জন্য আমরা সত্যিই গর্বিত। এটি আমাদের সার্বিক চমকপ্রদ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে দৃশ্যমান। কৃষি খাতে বৈচিত্র্য দৃশ্যমান। শিল্প খাতের অগ্রগতিও আশাব্যঞ্জক। অবকাঠামোতে ভালো রকমের উন্নতি হয়েছে। আরো তাৎপর্যপূর্ণভাবে উন্নয়ন ঘটেছে মানুষের জীবনমানে ও মানব উন্নয়ন সূচকে। প্রকৃতপক্ষে অধ্যাপক অমর্ত্য সেন পর্যায়ক্রমিকভাবে বলেছেন যে নারী শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, প্রত্যাশিত গড় আয়ু প্রভৃতি সূচকে আমরা আসলে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছি। সামষ্টিক অর্থনৈতিক নৈপুণ্যের দিক থেকে পাকিস্তানকেও ছাড়িয়ে গেছি আমরা। মূলত তৎকালীন পাকিস্তানের দুই অর্থনীতির মধ্যে বিপুল বৈষম্য দ্বারা তাড়িত হয়ে আমাদের পুরো মুক্তি-স্বাধীনতা আন্দোলন আবর্তিত হয়েছিল এবং অবশেষে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। ৫০ বছর পর এখন আমরা প্রকৃতপক্ষে মাথাপিছু আয় ও সম্পদ সঞ্চয়ন, প্রজনন হারে নিয়ন্ত্রণসহ আরো অনেক সূচকে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছি। পাকিস্তান আমলে আমাদের বাস্তবতা ছিল জনমিতিক হিসাবে জনসংখ্যায় বেশি হলেও সার্বিক উন্নয়ন থেকে কম সুফল পেয়েছি। আজকে পাকিস্তানের জনসংখ্যা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু মাথাপিছু আয়ে তারা আমাদের চেয়ে কম।
প্রকাশিত সংবাদে বেশ কিছু পরিসংখ্যান মুদ্রিত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ এপ্রিল দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৪ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার। যা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি। অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক শীঘ্রই ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঈদকে সামনে রেখে প্রবাসীরা প্রচুর রেমিটেন্স পাঠান। যা রিজার্ভকে সমৃদ্ধ করে। গত ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ৪৪.৮৫ বিলিয়ন বা চার হাজার ৪৮৫ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় তিন লাখ ৮১ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)। যেকোনো দেশের তিন মাসের আমদানী ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকলে ওই রিজার্ভকে যথাযথ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশে প্রতিমাসে ৫ বিলিয়ন ডলারের মতো রপ্তানি ব্যয় হয়। এতে ১৫ বিলিয়নের বেশি ডলার থাকলেই রিজার্ভ নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয় না। সেক্ষেত্রে গত ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ যেখানে ঠেকেছে তা দিয়ে নয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। প্রয়োজনের তিনগুণ বেশি রিজার্ভ দেশের অর্থনীতিকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা দৈনিক আজাদীকে জানান, এটি প্রবাসীদের অবদান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা অন্তত এক কোটি প্রবাসী হুন্ডির পরিবর্তে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠানোর ফলেই রিজার্ভ এভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রবাসীদের রেমিটেন্স না থাকলে দেশের রিজার্ভ সংকটে পড়তো উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, করোনাকালে রপ্তানি কমে গেছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তো রিজার্ভে। কিন্তু রেমিটেন্সই তা পড়তে দেয়নি।
আজকে বাংলাদেশ যে পর্যায়ে এসেছে, তা অত্যন্ত সন্তোষজনক একটা পর্যায়। আমাদের প্রবৃদ্ধি ৬-৭ শতাংশের বলয় থেকে বেরিয়ে এসেছে। নিঃসন্দেহে এটি ইতিবাচক। প্রবাসী আয়প্রবাহ ঊর্ধ্বমুখী। বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চিতি বাড়ছে।
এরপরও আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। আমরা এ পর্যন্ত যা অর্জন করেছি তা স্বীকার করে আমাদের এখন এগিয়ে যেতে হবে। এতে আত্মপ্রসাদে ভুগলে চলবে না। বরং আমরা ভবিষ্যতে যা অর্জন করতে পারব, তার জন্য প্রস্তুতি নেয়াই হবে অধিকতর ফলপ্রসূ। এখন বিশ্বে একটা স্থবিরতা এসেছে। এটা মোকাবেলা করতে হবে। শুধু অভ্যন্তরীণ নয়, বহিঃস্থ চ্যালেঞ্জও আছে। এখন বিশ্বে যে স্থবিরতা এসেছে, তাকে মোকাবেলা করতে হবে শক্তি দিয়ে। তাতে শুধু অভ্যন্তরীণ নয়, বহিঃস্থ চ্যালেঞ্জও আছে। এই প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক সংকটে অর্থায়ন বড় গুরুত্বপূর্ণ। সংকট মোকাবেলা করে উত্তরণ বড়ো চ্যালেঞ্জ।