আলফ্রেড হিচকক একজন খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার ও লেখক। বিশ্বের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে পঞ্চাশের দশকেরও বেশি সময় কাজ করেছেন তিনি। হিচককের জন্ম ১৮৯৯ সালের ১৩ আগস্ট লন্ডনে এক ক্যাথলিক পরিবারে। তাঁর ছেলেবেলা তেমন আনন্দময় ছিল না। বাবা কড়া শাসনে রাখতেন। শৈশব কেটেছে একাকিত্ব আর নিঃসঙ্গতায়। লেখাপড়া করেছেন ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড নেভিগেশন মেকানিকস, ইলেকট্রিসিটি এবং অ্যাকোস্টিকস-এ। কর্মজীবনের সূচনা হেনেলি টেলিগ্রাফ কোম্পানিতে। এ সময় থেকেই তাঁর লেখালেখিরও সূচনা। বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হতে থাকে তাঁর লেখা ছোটগল্প, নিবন্ধ ইত্যাদি। একসময় হিচকক সিনেমা, ফটোগ্রাফি এবং ডিজাইন বিষয়ে উৎসাহী হয়ে ওঠেন। টাইটেল ডিজাইন করেন কিছু নির্বাক চলচ্চিত্রের। ২৩ বছর বয়সে ‘নাম্বার ১৩’ ছবিটি পরিচালনার মধ্য দিয়ে পুরোদমে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ হিচককের। স্ত্রীর সহযোগিতায় নির্মাণ করেন বেশ কিছু সিনেমা। তাঁদের কন্যা প্যাট্রিসিয়া এসবের কয়েকটিতে অভিনয় করেন। হলিউড থেকেও মুক্তি পায় হিচককের কিছু চলচ্চিত্র। হিচককের কাজের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ছিল এই যে, তিনি স্ক্রিপ্ট দেখে শুট্যিং করতেন না, চিত্রনাট্য লিখেও সাথে সাথে ছবির কাজ শুরু করতেন না। পুরো কাহিনিটা হৃদয়ঙ্গম করে, দৃশ্যগুলো কল্পনায় সাজিয়ে তবেই ছবি তৈরিতে হাত দিতেন। তাঁর অধিকাংশ ছবিতেই আছে ভয়, উৎকণ্ঠা, রহস্যময়তা, কল্পনা আর ভায়োলেন্স। শাশ্বত প্রেমের ছবিও তৈরি করেছেন তিনি। তাঁর উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে : ‘সাইকো’, ‘দ্য লজার’, ‘ব্ল্যাকমেইল’, ‘দি বাডস’, ‘রেবেকা’, ‘ভারটিগো’, ‘রিয়ার উইন্ডো’ ইত্যাদি। উল্লেখযোগ্য ছোটগল্প : ‘গ্যাস’, ‘দ্য উম্যানস পার্টি’, ‘অ্যান্ড দেয়ার ওয়াজ নো রেইনবো’ প্রভৃতি। ১৯৫৫ সালে হিচকক যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে হিচকক ‘আলফ্রেড হিচকক প্রেজেন্টস’ নামে একটি টিভি শো করে ব্যাপক প্রশংসিত হন। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পেয়েছেন অস্কার, গোল্ডেন গ্লোব, লরেল প্রভৃতি সম্মানজনক পুরস্কার। ১৯৮০ সালের ২৯ এপ্রিল হিচকক প্রয়াত হন।