উৎপাদনে ঘাটতি নেই তবু কেন বিদ্যুৎ বিভ্রাট

| মঙ্গলবার , ২৭ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:৩৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন প্রয়োজনীয় একটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। জানতে চাইলেন, ‘উৎপাদনে ঘাটতি নেই, তবু কেন বিদ্যুৎ বিভ্রাট’। তিনি নগরবাসীকে হাওয়াই-মিঠাইয়ের প্রলোভন না দেখিয়ে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গত রোববার দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, দেশব্যাপী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মাত্রাতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংক্রমণ রোধে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জনগণকে ঘরে রাখা। এজন্য সরকার দ্বিতীয় দফায় লকডাউন ঘোষণা করেছে। লকডাউনকালীন ঘরে থাকার সময় জনগণের অপরিহার্য উপাদানগুলোর সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও প্রদান করা হয়েছে। আমরা নাগরিক উদ্যোগের পক্ষ থেকেও সেবা সংস্থাসমূহকে লকডাউন এবং রমজানে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে বারবার আহ্বান জানিয়েছিলাম। সেবা সংস্থার প্রধানরা নগরবাসীকে আশ্বাস দিয়েও প্রতিশ্রুতি পূরণে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছেন। নগরীর আসকার দীঘির পাড়, ঈশান মহাজন রোড, হালিশহর, শরীফ কলোনিসহ বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের ভেল্কিবাজি চলছে। লকডাউন ও রমজান ছাড়া ছুটির দিনেও নগরীর বিভিন্ন স্থানে কোনো প্রকার পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে যা নগরবাসীর সঙ্গে প্রতারণার শামিল। আমরা বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছি বর্তমানে বিদ্যুতের কোনো ঘাটতি নেই। তারপরও কি কারণে নগরবাসী বিদ্যুৎ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবে তা আমাদের বোধগম্য নয়। পিডিবির প্রধান প্রকৌশলীর প্রতি অনুরোধ, কালবিলম্ব না করে নগরবাসীকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রদান করুন।
এর আগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী নগরীতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ নিশ্চিত করে নগরবাসীর দুর্ভোগ ও ভোগান্তি লাঘবের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মেয়র বলেন, রমজান মাসে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে বললেও পিডিবি ও চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতির পরও নগরীর কোনো কোনো এলাকায় ঘনঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট চলছে। ওয়াসার নিয়ম অনুযায়ী পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনা বিঘ্নিত হচ্ছে। গ্রীষ্মকালের তীব্র তাপদাহের সময় বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ লাইনের বিপর্যয় সাময়িক হলেও রমজান মাসে রোজাদারদের জন্য এই ভোগান্তি দুঃসহ ও মারাত্মক।
মেয়র আশা প্রকাশ করে বলেন, সংশ্লিষ্ট সংস্থা এই দুর্ভোগ লাঘবে নিরবচ্ছিন্নভাবে সরবরাহ ব্যবস্থাপনা কার্যকর করবে। তিনি নগরবাসীকে আশ্বস্ত করেন, করোনাকালের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তা সুরক্ষায় লকডাউন প্রলম্বিত হলেও সিটি করপোরেশনের জরুরি সেবা কার্যক্রম সার্বক্ষণিক চলমান থাকবে।
বিদ্যুতের এতো উৎপাদন, তবু বিদ্যুৎ বিভ্রাট-এই ঘটনায় সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। যার প্রতিধ্বনি পাওয়া গেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসকের বিবৃতিতে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সম্প্রতি বলেছেন, ‘বিদ্যুৎ খাতে অটোমেশন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করবে। ডিসেম্বরের মধ্যেই দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চল থেকে শুরু করে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ এলাকায় সাবমেরিন ক্যাবল এবং সোলার মিনি গ্রিডের মাধ্যমে শতভাগ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে। ইতোমধ্যে গ্রীড এলাকায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে তাল মিলিয়ে দেশের বিদ্যুৎ খাতও সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজ হচ্ছে। এরই মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগ ইআরপি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে। স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার, স্মার্ট গ্রিড সিস্টেম, স্ক্যাডা সিস্টেম, আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবলিং, বিগ ডাটা এনালাইসিস সব প্রস্তুতিই বিদ্যুৎ বিভাগ নিয়েছে।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের আগের তিনটি শিল্প বিপ্লব পাল্টে দিয়েছে সারা বিশ্বের গতিপথ। প্রথম শিল্প বিপ্লবটি হয়েছিল ১৭৮৪ সালে বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের মাধ্যমে। এরপর ১৮৭০ সালে বিদ্যুৎ ও ১৯৬৯ সালে ইন্টারনেটের আবিষ্কার শিল্পবিপ্লবের গতিকে বাড়িয়ে দেয় কয়েক গুণ। ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের ক্ষেত্রে আমাদেরকে টিকে থাকতে হলে বেশি জোর দিতে হবে দক্ষতা অর্জনের উপর। এ কারণে প্রযুক্তি বিষয়ে আমাদের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করতে হবে। কেননা, আগামী দিনের সৃজনশীল শহরের বিদ্যুৎ ও পানির চাহিদা পূরণে প্রয়োজন পেশাদারত্বের সঙ্গে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো। প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি ও উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে আগামীর চাহিদা সামনে রেখেই বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা দরকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে