ভারতে হাসপাতালে ঠাঁই নেই ঘরেও চলছে বাঁচার লড়াই

| মঙ্গলবার , ২৭ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:১৫ পূর্বাহ্ণ

ভারতের রাজধানী দিল্লিসহ অনেক নগরীতে হাসপাতালগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই; ফলে বন্ধ নতুন রোগী ভর্তি। বাধ্য হয়ে লোকজন বাড়িতেই কোভিড-১৯ আক্রান্ত স্বজনদের চিকিৎসা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার মরিয়া চেষ্টা করছে। কিন্তু বাড়িতে চিকিৎসা দেওয়াও অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। করোনাভাইরাস আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের চিকিৎসায় সবচেয়ে জরুরি অঙিজেন কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। নেই ওষুধও। তাই বাধ্য হয়েই রোগীর স্বজনরা ছুটছেন কালোবাজারে। কয়েকগুণ বেশি দাম দিয়ে কিনে আনছেন অক্সিজেন সিলিন্ডার, ওষুধ। যারা সামর্থ্যবান তারা বাড়িতে নার্স নিয়োগ দিচ্ছেন। খবর বিডিনিউজের। গতকাল সোমবারও ভারতে তিন লাখ ৫২ হাজার ৯৯১ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। এ নিয়ে টানা পঞ্চম দিন দেশটিতে সাড়ে তিন লাখের বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হলো। দিল্লির বাসিন্দা আনশু প্রিয়া তার শ্বশুরের জন্য দিল্লি ও তার উপকণ্ঠ নয়ডায় অনেক খুঁজেও হাসপাতালে একটি শয্যার ব্যবস্থা করতে পারেনি। করোনাভাইরাস আক্রান্ত আনশুর শ্বশুরের অবস্থা দিন দিন অবনতির দিকে। বিবিসি জানায়, আনশু রোববার সারাদিন খুঁজেও একটি অঙিজেন সিলেন্ডার যোগাড় করতে পারেননি। তাই তিনি বাধ্য হয়ে কালোবাজারে যান এবং সেখান থেকে ৫০ হাজার রুপিতে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনেন। অথচ, ভারতে সাধারণত একটি অক্সিজেন সিলিন্ডারের দাম ছয় হাজার রুপি। আনশুর শাশুড়িও কোভিড-১৯ আক্রান্ত। তিনি জানেন, যদি প্রয়োজন পড়ে তারপরও তিনি শাশুড়ির জন্য এখন কালোবাজার থেকে আরেকটি অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনতে পারবেন না।
এ চিত্র শুধু দিল্লির নয়। বরং নয়ডা, লক্ষ্মৌ, এলাহাবাদ, ইন্দোর এবং আরো অনেক বড় বড় নগরীর। যেখানে লোকজন হাসপাতালে জায়গা না পেয়ে মরিয়া হয়ে কোভিড আক্রান্ত স্বাজনদের বাড়িতে চিকিৎসা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে চাইছেন।
যদিও ভারতের বেশির ভাগ পরিবারের পক্ষেই বাড়িতে চিকিৎসার আয়োজন করা সম্ভব না। এরই মধ্যে অনেক রোগী হাসপাতালের সামনে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন বলে খবর আসছে। তাদের স্বজনরা তাদের জন্য ওষুধ বা অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করতে পারেনি। বিবিসি থেকেও অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করে এমন কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তারা সবাই স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত ১০ গুণ বেশি দাম চেয়েছেন। কেউ কেউ কয়েকগুণ বেশি দাম দিয়ে কালোবাজার থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডিার বা ওষুধ যোগাড় করতে পারলেও বাড়িতে বসে রোগীর রক্ত পরীক্ষা, সিটি স্ক্যান বা এঙরে করা সম্ভব না।
হাসপাতালের মত ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতেও রোগী উপচে পড়েছে। ফলে রীতিমত সিরিয়াল দিয়ে পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। পরীক্ষার ফলও তিন দিনের আগে পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ, কোভিড-১৯ আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের অবস্থা প্রতিমুহূর্তে পরিবর্তন হয়। তাই তাদের অবস্থা প্রতিনিয়ত মনিটর করতে হয়। ফলে বাড়িতে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের জীবন উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়।
কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন কিনা তা পরীক্ষার জন্য আরটি-পিসিআর টেস্ট করা হয়। সেই পরীক্ষার ফল জানতেও কয়েকদিন লেগে যাচ্ছে। ফলে গুরুতর অসুস্থ অনেক রোগীর স্বজনরা কোনো মতে হাসপাতালের একটি শয্যার ব্যবস্থা করতে পারলেও কোভিড-১৯ পজিটিভ হওয়ার সনদ হাতে না থাকায় হাসপাতালে ভর্তি হতে পারছেন না। ভারতের বেশিরভাগ হাসপাতালগুলো শয্যা খালি না থাকায় এখন আর নতুন রোগী ভর্তি করছে না। আবার কোনও কোনও হাসপাতাল অক্সিজেন সরবরাহের অনিশ্চয়তার কারনেও নতুন রোগী ভর্তি বন্ধ রেখেছে।
দিল্লিতে হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ না থাকায় অক্সিজেনের অভাবে একসঙ্গে অনেক রোগী মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মরিয়া হয়ে অক্সিজেন যোগাড় করতে চাইছে। প্রতিদিনই তারা অক্সিজেন যেকোনও সময় ফুরিয়ে যাওয়ার সতর্কবার্তা পাঠাচ্ছে। কেউ কেউ অক্সিজেন পেতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে।
হাসপাতাল থেকে সরকারের কাছে অক্সিজেনের জন্য আবেদন করার পর যে পরিমাণ অক্সিজেন পাঠানো হচ্ছে তাতে সর্বোচ্চ একদিন চলছে বলে জানান এক চিকিৎসক। বলেন, দিল্লিতে এভাবে হাসপাতালগুলো কাজ চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এবং সত্যি সেখানে এখন ভয়ঙ্কর আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে ৫শ আসামির জামিন
পরবর্তী নিবন্ধগ্রীষ্মকালে ঘন কুয়াশা