হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের ঘটনায় আট বছর আগে মতিঝিল থানার ও পল্টন থানার সামপ্রতিক মামলায় সংগঠনটির বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ। মোহাম্মদপুর থানার নাশকতার মামলায় সাত দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল সোমবার তাকে হাজির করে আরও দুই মামলায় ১০ দিন করে রিমান্ড চায় পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরী মতিঝিল থানার মামলায় তিনদিন ও পল্টন থানার মামলায় চারদিন করে মোট সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
এ সময় মামুনুলকে এজলাসে তুলে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছিল বলে তার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন মেজবাহ জানান। তিনি বলেন, আমরা তার রিমান্ড বাতিল চেয়েছিলাম। কিন্তু শুনানি নিয়ে তা নাকচ করা হয়। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বিচারকে উদ্দেশে মামনুল বলতে থাকেন, তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করে বলেন, ভিডিও ফুটেজ তাকে (মামুনুল) দেখা গেছে। তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বলে পুলিশে কাছে স্বীকারও করেছেন।
তবে মামুনুল বলেন, গত ২৬ মার্চ আমি বাংলাবাজারে জুমার নামাজ পড়াই। এসময় সেখানে পুলিশি প্রটেকশন ছিল। নামাজ শেষে জানতে পারি বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিরা জড়ো হয়েছেন। এসময় একজন ডিআইজি পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তার অনুরোধে বায়তুল মোকাররমে যাই। সেখানে পুলিশের অনুরোধে আমি বক্তব্য রাখি। আমিতো কোনো অন্যায় করিনি। ভবিষ্যতে পুলিশ অনুরোধ করলে আমরা তো কোথাও যেতে পারব না।
এসময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা মামুনুলের বক্তব্য বিষয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘তিনি এভাবে বক্তব্য দিতে পারেন না।’ তবে আদালত মামুনুলকে বলতে বলেন। মামুনুল তখন বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি চাইলে আমার ওইদিনের কল রেকর্ড চেক করতে পারেন।’
২০১৩ সালে রাজধানীর শাপলা চত্বরে সমাবেশের সময় হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় মতিঝিল থানার মামলা ও চলতি বছরের মার্চে বায়তুল মোকারমে হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় পল্টন থানায় এই দুটি মামলা করা হয়। ১৮ এপ্রিল দুপুরে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা থেকে মামুনুল হককে গ্রেপ্তার পুলিশ। পরদিন তাকে মোহাম্মদপুর থানার একটি ভাঙচুর ও নাশকতার মামলায় তাকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত। ওই রিমান্ড শেষে গতকাল তাকে আবার আদালতে হাজির করা হয়।
একই বিচারক এদিন পল্টন থানার দুটি ও মতিঝল থানার একটি মামলায় হেফাজত নেতা মাওলানা জুনায়েদ হাবিবীর ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তিন মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ৯ দিন করে ২৭ দিন রিমান্ড চায়। বিচারক উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে একসঙ্গে ১০ দিন মঞ্জুর করেন। আরেক নেতা মাওলানা জালাল উদ্দিনকে পল্টন ও মতিঝিল থানার দুই মামলায় ১৭ দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানি নিয়ে মোট ৬ দিন মঞ্জুর করেন বিচারক। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু এসব তথ্য জানান। ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির নামে লাঠিসোটা, ধারালো অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও আরামবাগসহ আশপাশের এলাকায় যানবাহন ও সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এঘটনায় মতিঝিল থানায় মামলা করা হয়।











