চট্টগ্রাম সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী মশক নিধন কার্যক্রম ও চলমান ক্রাশ প্রোগ্রামকে জোরদার করার জন্য ওয়ার্ড পর্যায়ে কাউন্সিলর এবং সচেতন নগরবাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি গত শুক্রবার নয়াবাজার মোড় থেকে ফইল্যাতলী বাজার পর্যন্ত রাস্তার ময়লা আবর্জনা অপসারণ ও মশক নিধন স্প্রে কাজ চলমানকালে নগরবাসীর প্রতি এ আহ্বান জানান।
চট্টগ্রাম যেন এখন মশার নগরী। কেবল মশা আর মশা। রাতে মশা, দিনেও মশা। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরবাসী। মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গুসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এখানকার মানুষ। মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে দিনের বেলায়ও মশারির ভেতর আশ্রয় নিচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে নেই মশার উৎপাত। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যমতে, প্রতিবছর মশক নিধন বাবদ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বড় অঙ্কের টাকা খরচ করে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরেই মশকনিধন কার্যক্রমের জন্য ওষুধ ও মালামাল ক্রয় খাতে কয়েক কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে গত নভেম্বর মাসে প্রায় ৫ কোটি টাকার ওষুধ ক্রয় করা হয়। এ ছাড়া ফগার মেশিন বাবদ খরচ করা হয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। বর্তমানে চসিকে আছে ১৫০ জন স্প্রেম্যান, উন্নতমানের ১৬৫টি ফগার মেশিন ও ৪২০টি সাধারণ স্প্রে মেশিন।
নগর বিশেষজ্ঞদের মতে, মশক নিধনে কীটনাশক যতটা কার্যকর, এ ক্ষেত্রে তার চেয়ে বেশি কার্যকর খালগুলো দখলমুক্ত করা ও শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। মশক নিধন কার্যক্রম অধিক পরিমাণে কীটনাশকনির্ভর হয়ে পড়ায় মশার যন্ত্রণা থেকে নগরবাসীর মুক্তি মিলছে না। অথচ বর্তমানে সিটি করপোরেশন মশা নিধনের বরাদ্দ ব্যয়ের বেশিরভাগই করে থাকে কীটনাশক কিনতে।
তাঁদের মতে, ক্রমাগত কীটনাশক প্রয়োগের ফলে মশা কীটনাশক সহনশীল হয়ে যাচ্ছে। তাই বর্তমানে উচ্চমাত্রার কীটনাশক প্রয়োগেও মশক নিধন কার্যক্রমে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। মশা থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে সমন্বিত মশক নিধন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি অনুসরণ করা দরকার। আর এই পদ্ধতির প্রথম ধাপ হলো পরিকল্পিত উপায়ে নগর গড়ে তোলার মাধ্যমে শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। এই পদ্ধতির দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে- জৈবিক উপায়ে মশক নিধন করা।
এক্ষেত্রে প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে চিহ্নিত করতে হবে কোথায় মশা জন্মে; এসব জায়গায় যেন মশা জন্মাতে না পারে সে বিষয়ে লক্ষ্য রেখে পদক্ষেপ নিতে হবে। তৃতীয় ধাপে থাকবে কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে মশামুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা। চতুর্থ ধাপে- জনগণকে সচেতন করে মশার প্রজনন ক্ষেত্র নষ্ট করতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এই সমন্বিত পদ্ধতিতে কীটনাশক প্রয়োগ তৃতীয় ধাপ হলে বর্তমানে তা প্রথমে প্রয়োগ করতে দেখা যায়।
অনেকের অভিযোগ, সিটি করপোরেশন ওষুধ ছিটালেও মশার উপদ্রব কমাতে স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। ওষুধ দিলে সাময়িক মশার উৎপাত কমে, ওষুধের কার্যকারিতা কমে গেলে আবারো উপদ্রব বেড়ে যায়।
এরপর আসে নাগরিক দায়িত্ব পালনের বিষয়টি। সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী সেটি স্মরণ করিয়ে দেবার চেষ্টা করছেন তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে। রাষ্ট্র যেমন নাগরিকদের বিবিধ সুযোগ-সুবিধা এবং অধিকার দিয়ে থাকে, তেমনি রাষ্ট্রের প্রতিও নাগরিকদের কতগুলো দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হয়। অধিকার ও কর্তব্য পরস্পর নির্ভরশীল ও পরিপূরক। প্রত্যেক নাগরিককেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে হবে। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের এমনকি রাষ্ট্রের বেআইনী কোন কাজের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো নাগরিকদের নৈতিক দায়িত্ব। তাহলেই সুশাসন এবং দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা হবে। এছাড়া পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে পালন করতে হবে নিজেদের দায়িত্ব। নিজের বাড়ির চারপাশ সুন্দর রাখা, পরিচ্ছন্ন রাখা এবং অন্যকে এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা সেই দায়িত্বেরই অংশ। যেখানে সেখানে ময়লা অবর্জনা ফেলে পরিবেশ নষ্ট করা আমাদের স্বভাবে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিনের এই খাসিলত বদলাতে হবে। যেখানে মশার বংশ বিস্তারের সুযোগ রয়েছে, সেখানে নিজে দাঁড়িয়ে অন্যকে সঙ্গে নিয়ে তার প্রজনন রোধ করা গেলে সিটি করপোরেশনের কাজে যেমন সহযোগিতা দেওয়া হবে, তেমনি সামগ্রিকভাবে নগরবাসী উপকৃত হবে। সমন্বিত মশক নিধন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি অনুসরণ করার ক্ষেত্রে নগরবাসীকেও সংযুক্ত করতে হবে।