পেট্রোলের সাথে কেরোসিন মিশিয়ে দেশের ১৯ জেলায় নিম্নমানের জ্বালানি সরবরাহের অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল বিপিসির বাঘাবাড়ি ডিপো পরিদর্শন করেছেন কমিটির তিন সদস্য।
জানা যায়, সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি রিভারাইন অয়েল ডিপোটি সরাসরি বিপিসির মালিকানাধীন। এখানে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানি এই ডিপো থেকে তাদের ডিলারদের চাহিদামাফিক জ্বালানি সরবরাহ দিয়ে থাকে। ডিপোটি নিয়ন্ত্রণ করেন যমুনা অয়েল কোম্পানি। ডিপো থেকে এই তিন বিপণন কোম্পানি দৈনিক ৫ লক্ষ লিটার জ্বালানি সরবরাহ দিয়ে থাকে। অভিযোগ উঠেছে, ডিপোর তিন কোম্পানির কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী যোগসাজশ করে পেট্রোলের সাথে কম মূল্যের কেরোসিন মিশিয়ে পাম্প মালিকদের কাছে বিক্রি করছে। এ ভেজাল পেট্রোল বিক্রি করে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ ওঠে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। ডিপো ইনচার্জ কোম্পানির সহকারী মহাব্যবস্থাপক শরীফুল ইসলাম এসব অপকর্মের নেতৃত্ব দেন বলে অভিযোগ ওঠে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম থেকে কার্গো ভ্যাসেলে করে এবং বেসরকারি আরেকটি রিফাইনারি থেকে ট্যাংক লরি থেকে জ্বালানি আসে বাঘাবাড়ি ডিপোতে। ওখান থেকে আনলোডের সময় পেট্রোলের সাথে কেরোসিন লোড করা হতো ডিলারদের ট্যাংকলরিতে। পেট্রোল ও কেরোসিন দেখতে প্রায় একই হওয়ার কারণে ভেজাল পেট্রোল চিহ্নিত করার কোনো উপায় থাকে না।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাঘাবাড়ি ডিপো থেকে সাম্প্রতিক প্রতিদিন প্রতিদিন গড়ে ২ লাখ লিটার কেরোসিন এবং ৫ লাখ লিটার পেট্রোল সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে সংশ্লিষ্ট ১৯ জেলায় প্রতিদিন ২ লাখ লিটার কেরোসিনের চাহিদা দেখানো হলেও বাস্তবতার সাথে তার কোনো মিল নেই। গ্রামে কেরোসিনের ব্যবহারও তেমন হয় না। এতে কেরোসিন বিক্রির উৎস নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ডিপোতে প্রতি লিটার পেট্রোল ৮১.৫৬ টাকা, কেরোসিন ৬৩.৫৬ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। তাই পেট্রোলের সাথে ৫০ঃ৫০ অনুপাতে কেরোসিন মিশিয়ে সংশ্লিষ্টরা প্রতি লিটারে ১৮ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি তদন্তের উদ্যোগ নেয় বিপিসি।
বিপিসির চট্টগ্রাম প্রধান কার্যালয়ের ডিজিএম (অপারেশন) জাহিদ হোসেনকে আহ্বায়ক এবং ডিজিএম (বিপণন) মোরশেদ হোসাইন আজাদ ও যমুনা অয়েল কোম্পানির ডিজিএম (অপারেশন) গোলাম মোহাম্মদ আবদুল মুঈদকে সদস্য করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। গতকাল এই কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তদন্তদল ডিপোর ট্যাংকগুলোর ডিপ সংক্রান্ত তথ্য, জ্বালানির নমুনা সংগ্রহ করেছেন। পাশাপাশি ডিপোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদও করছেন বলে জানা গেছে। তদন্ত কমিটি তথ্য উপাত্ত ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে চট্টগ্রামে এসে প্রতিবেদন দিলেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিপিসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে জানতে ডিপো ইনচার্জ শরীফুল ইসলামের মোবাইলে বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কমিটির প্রধান বিপিসির ডিজিএম (অপারেশন) জাহিদ হোসেন গত রাতে আজাদীকে বলেন, আমরা বিষয়টি তদন্তের জন্য এসেছি। আমাদের কাজ চলছে। এরপর আমরা প্রতিবেদন দেব। তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে কোনো তথ্য দেওয়া যাবে না।