মাত্র সাড়ে পাঁচ মাসের মাথায় বিলুপ্ত করা হয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাংগঠনিক কমিটি। গত রাত ১১টার দিকে এক ভিডিওবার্তায় কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেন সংগঠনটির আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। এর আগে ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠন করা হয়েছিল সংগঠনটির ১৫৩ সদস্যের কমিটি। সেখানে প্রয়াত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ছেলেসহ তার অনুসারী ৪০ থেকে ৫০ জনকে বাদ দেওয়া হয়। যারা পূর্বের কমিটিতে শীর্ষ পদে ছিলেন। এদিকে শীঘ্রই নতুন কমিটি হবে বলে ঘোষণা করেছেন শফীন্থীরা। আহমদ শফীর অনুসারী হেফাজতের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহী গতকাল এক ভিডিওবার্তায় বলেন, শীঘ্রই হেফাজতের নতুন কমিটি গঠন করা হবে। তিনি বলেন, শাহ আহমদ শফীর নীতি-আদর্শের ভিত্তিতে এগিয়ে যাব আমরা।
গত মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে চট্টগ্রাম ও রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ করে হেফাজতে ইসলাম। এ সময় সহিংসতায় জড়িয়ে পরে সংগঠনটির কর্মীরা। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হাটহাজারীতে প্রাণহানিও ঘটে। এ ঘটনায় দায়ের হয় মামলা। পরবর্তীতে সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুল হক এক নারীসহ আটকের পর সমালোচিত হয় দলটি। গত ১৮ এপ্রিল গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। এরপর সংগঠনটির অনেক নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। যারা ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকা অবরোধকে কেন্দ্র করে সহিংস ঘটনায় মতিঝিল থানায় হওয়া মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। নাশকতায় জড়িত সংগঠনটির আরো একাধিক শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে পুলিশ জানায়। গ্রেপ্তার এড়াতে যারা আত্মগোপনে আছেন। এমন পরিস্থিতিতে সাংগঠনিক কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।
গতকাল এক মিনিট ২৪ সেকেন্ডের ভিডিওবার্তায় আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় অরাজনৈতিক, দ্বীনি ও ইমান-আকিদার সংগঠন হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের পরামর্শক্রমে কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো। ইনশাল্লাহ, আগামীতে আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে আবার হেফাজত ইসলামের কার্যক্রম শুরু হবে।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে হেফাজত ইসলামের কয়েকজন নেতা দৈনিক আজাদীকে বলেন, গত শনিবার রাতে স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ হাটহাজারী মাদ্রাসায় উপস্থিত হয়ে সাক্ষাৎ করেন জুনায়েদ বাবুনগরীর সঙ্গে। প্রায় ঘন্টাখানেক বৈঠক করেন তারা। ওই বৈঠকের আলোচনাকে ঘিরেই বিলুপ্ত করা হয় সাংগঠনিক কমিটি।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক হেফাজত নেতা বলেন, হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে সম্প্রতি যেসব সহিংসতা হয়েছে তার দায়ভার এড়াতেই কমিটি বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত হয়। এক্ষেত্রে নিজের গ্রেপ্তার এড়াতে জুনায়েদ বাবুনগরীর সঙ্গে সরকারের সমঝোতা হয়েছে বলেও ধারণা করছেন তিনি।
হেফাজত ইসলামের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, দেশের শতাধিক কওমি মাদরাসার শিক্ষকদের নিয়ে ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে হেফাজতে ইসলাম। শাহ আহমদ শফী এবং ইসলামী ঐক্যজোটের তৎকালীন চেয়ারম্যান মুফতি ইযহারুল ইসলাম সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠা থেকে আমৃত্যু সংগঠনের সর্বোচ্চ আমির পদে দায়িত্ব পালন করেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী। ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মারা যান তিনি। ২০১০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি নগরের লালদীঘি মাঠে ‘ধর্মহীন শিক্ষানীতি প্রণয়ন, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল’সহ বিভিন্ন দাবিতে সমাবেশের ডাক দেয়। এরপর ২০১৩ সালের মে মাসে শাপলা চত্বর ঘটনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনায় আসে হেফাজত ইসলাম।