বৃষ্টিহীন নগরীতে চড়ছে গরমের পারদ। বছরের এ সময়ে স্বাভাবিক বৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও মৌসুমী বায়ু সঠিকভাবে মানিয়ে নিতে না পারার কারণে বৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে মানুষের মাঝে স্বাভাবিক তাপমাত্রাতেও বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান দৈনিক আজাদীকে বলেন, এখন গ্রীষ্মকাল চলছে। তাপমাত্রা বেশি হওয়া স্বাভাবিক। গতকাল শনিবার তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি হয়েছে। এটি ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও গরমের প্রভাব একই থাকবে। কারণ বর্তমানে উত্তর, উত্তর পশ্চিম দিক থেকে যে বায়ু প্রবাহিত হচ্ছে, তা অপেক্ষাকৃত শুষ্ক এবং জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কম। বাতাস থাকার কারণেও তাপমাত্রার প্রভাব তেমনটি অনূভূত হচ্ছে না। যদি দক্ষিণ, দক্ষিণ পশ্চিম দিক থেকে, অর্থাৎ বঙ্গোপসাগরের দিক হতে বাতাস প্রবাহিত হত, তাহলে বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বাড়তো। এতে ভ্যাপসা গরম অনুভূত হত।
তিনি বলেন, চলতি সপ্তাহে চট্টগ্রামে আর বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আগামী ১-২ মে চট্টগ্রামে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এই কয়দিন তাপমাত্রা আরো বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
গতকাল চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের সন্ধ্যা ৬টার স্থানীয় পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ১০-১৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে।
গতকাল চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৭.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এদিকে গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পরিলক্ষিত হয়েছে যশোরে, ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন ছিল শ্রীমঙ্গলে। ১৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৩৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এতে আংশিক মেঘলাসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। চট্টগ্রাম, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগসহ শ্রীমঙ্গল অঞ্চলের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরণের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা অব্যাহত থাকতে পারে এবং বিস্তার লাভ করতে পারে। সারাদেশের দিনের ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
এদিকে শনিবার তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করেছে সাধারণ মানুষ। কোথাও তীব্র কোথাও মাঝারি আকারে তাপদাহ অনুভূত হয়েছে চট্টগ্রামজুড়ে। দৈনন্দিন কাজে ঘর থেকে বের হওয়া লোকজনকে গরমে কাবু হতে হয়েছে। চলতি কঠোর লকডাউনে সড়কে বেশি চলাচল করছে রিকশা। গরমের তীব্রতায় রিকশাচালকদের বেশি কাবু হতে হয়েছে।
দুপুরের দিকে নগরীর বিভিন্ন স্থানে গাছের কিংবা দালানের ছায়ায় গা এলিয়ে দিতে দেখা গেছে অনেককে। দুপুর আড়াইটার দিকে নগরীর সিআরবি এলাকায় দেখা গেছে, কয়েকজন রিকশা চালক নিজের রিকশায় বসেই ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছেন। অনেকে রিকশায় তালা দিয়ে পাশের ফুটপাতে গাছের ছায়ায় ঘুমিয়ে বাতাসে শরীর জুড়িয়েছেন।
সিআরবি এলাকায় রিকশা চালক আবদুল করিম বলেন, গত দুইদিন ধরে গরম বেড়ে গেছে। একটি ভাড়া নিয়ে গেলে সাথে সাথে আরেকটি নিতে ইচ্ছে করছে না। এখানে গাছের ছায়ায় একটু জিরিয়ে নিচ্ছি। পাশে থাকা আরেক রিকশা চালক সাহেব মিয়া বলেন, বৈশাখ মাসের একই সময় প্রতিবছর বৃষ্টি হয়। এ বছর হচ্ছে না। রোজা রেখেছি। তীব্র গরমে গা জ্বালাপোড়া করছে। তাই খালি রিকশা নিয়ে এখানে চলে এসেছি। এখানে বাতাস আছে। শরীরে কিছুটা স্বস্তি মিলছে।
অন্যদিকে গরম বেশি অনুভূত হলেও সাধারণ মানুষের শরীরে গরমজনিত রোগ বালাইয়ের তীব্রতা চোখে পড়েনি। হাসপাতালগুলোতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও কম রোগী রয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দায়িত্বশীল এক চিকিৎসক বলেন, করোনার তীব্রতা বাড়ার কারণে হাসপাতালে রোগী আসার সংখ্যা অনেক কমে গেছে। গরমে ডায়রিয়াজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি থাকে। গত দুইদিন ধরে গরম বেশি পড়লেও এ ধরনের রোগী বাড়েনি। হয়তো কেউ শরীরে অস্বস্তিবোধ করলে ঘরেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। করোনার কারণে হাসপাতালে আসতে চাইছেন না।











