পাকিস্তান ও ভারত- এই দুটি রাষ্ট্রের বিভক্তির মধ্য দিয়ে এই উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে। পাকিস্তানে মুসলিম লীগ সরকারের দমন পীড়নের একটি কালো অধ্যায় ১৯৫৪ সালের ২৪শে এপ্রিল। এই দিন রাজশাহী জেলে রাজবন্দিদের ওপর পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালালে সাত জন রাজবন্দি নিহত হন। আজ এই নৃশংসতম ঘটনার ৬৬তম বার্ষিকী।
পাকিস্তান সৃষ্টির পর পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ওপর অন্যায় নিপীড়ন ও শোষণের বিরুদ্ধে জনগণের মধ্যে বিক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে। পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে ঘটে কৃষক বিদ্রোহ। টংক আন্দোলন, নানকারবিরোধী আন্দোলন, নাচোলের কৃষক বিদ্রোহ সে সময়কার গুরুত্বপূর্ণ সব ঘটনা। কৃষক নেতা ও বামপন্থী রাজনীতিবিদরাও এতে সমপৃক্ত ছিলেন। অনেক কৃষক নেতা ও বামপন্থী ছিলেন জেলে বন্দি। এরই এক পর্যায়ে রাজশাহী জেলের খাপড়া ওয়ার্ডে ঘটে যায় নারকীয় ঘটনা। ১৯৫৪ সালের ২৪শে এপ্রিল জেল সুপার বিল সাপ্তাহিক পরিদর্শনে এলে রাজবন্দিরা তাঁর কাছে খাবারের মানের ব্যাপারে অভিযোগ তোলে। বিল তাঁদের ‘দুষ্কৃতকারী’ বলে ভর্ৎসনা করে জানায়, খাদ্য তালিকায় কোনো পরিবর্তন আনা হবে না। এ নিয়ে রাজবন্দি ও সুপারের সাথে তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে বিল এক রাজবন্দিকে বেত্রাঘাত করতে উদ্ধত হলে অন্য রাজবন্দিরা তাঁকে ওয়ার্ডের ভেতরে নিয়ে যায়। এ সময় জেলার বাঁশি বাজালে পাগলা ঘণ্টি বেজে ওঠে। একদল সেপাই দৌঁড়ে এসে খাপড়া ওয়ার্ডে গুলি চালিয়ে দেয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে কম্পরাম সিং, হানিফ শেখ, আনওয়ার হোসেন, সুখেন ভট্টাচার্য, দেলওয়ার, সুধীন ধর এবং দ্বিজেন সেন- এই সাতজন রাজবন্দি। এই ঘটনা বাংলার ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়।