ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে আগামীকাল রোববার থেকে দোকানপাট এবং শপিংমল খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট খোলার রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। দোকানপাট, শপিং মল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে স্বস্তি ফিরেছে সাধারণ ব্যবসায়ীদের মাঝে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে গত বছর সবকিছু বন্ধ থাকায় আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্যবসায়ীরা। এবার রোজার প্রথম কয়েকদিন বন্ধ রাখা হলেও সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট খোলার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। নতুন নির্দেশনা পেয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট খুলতে প্রস্তুতি শুরু করেছে ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ব্যবসায়ীদের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে দোকানপাট খুলে দেওয়ার জন্য সরকারকে সাধুবাদ জানাই। কোভিড পরিস্থিতিতে গত বছর ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকা লোকসান দিয়েছেন। রমজানের আগে যাবতীয় পণ্য সংগ্রহ করার পর লকডাউনে এসব পণ্য বিক্রি করতে পারেনি। পরিশোধ করতে পারেনি ব্যাংক ঋণ। গোডাউনে নষ্ট হয়েছে সেসব পণ্য। এবারও ব্যবসায়ীরা রমজানকে সামনে রেখে দেশি-বিদেশি নতুন নতুন পণ্য সংগ্রহ করেছিল। রমজানের শুরুতে লকডাউন শুরু হওয়ায় ব্যবসায়ীদের মাঝে নতুন করে উৎকন্ঠা তৈরি করেছিল। তিনি বলেন, এখন ব্যবসায়ীদের কষ্ট অনুধাবন করে সরকার দোকানপাট খুলে দেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। ব্যবসায়ী, দোকান কর্মচারী সর্বোপরি ক্রেতাদের এখন সচেতনভাবে কেনাকাটা করতে হবে। ক্রেতারা যাতে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পড়ে বাজারে, শপিংমলে যান। ভিড় যাতে না করেন। আবার দোকানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও যাতে সজাগ থাকেন। তারাও যাতে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে কোন শৈথিল্য না দেখান। কারণ জীবিকা বাচাঁনোর আগে জীবন বাঁচাতে হবে। তাই মাস্ক পরিধান অপরিহার্য। প্রত্যেক দোকানে ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নিয়ম মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি। এ বিষয়ে টেরি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মান্নান দৈনিক আজাদীকে বলেন সরকারকে আমরা আন্তুরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের ব্যবসায়ীদের মনের দুঃখ বুঝতে পেরে তিনি দোকানপাট ও শপিংমল খুলে দিয়েছেন। আমরা সরকারকে কথা দিচ্ছি-শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা ব্যবসা পরিচালনা করবো।
তামাকুমণ্ডি লেইন বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. আবু তালেব দৈনিক আজাদীকে বলেন, অবশেষে ব্যবসায়ীদের জয় হলো। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মানার যে ওয়াদা সরকারের সাথে করেছিলাম, সেটি অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো। আমাদের মার্কেটের প্রবেশমুখগুলোতে সিকিউরিটি থাকবে। যেসব ক্রেতার মুখে মাস্ক থাকবে না, তাদেরকে আমরা মার্কেটে প্রবেশ করতে দিবো না। ‘নো মাস্ক, নো এন্ট্রি।’
স্যানমার ওশান সিটি ও নাসিরাবাদের ফিনলে স্কয়ার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আসাদ ইফতেখার বলেন, আমরা সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ। বারবার বলে আসছিলাম, এবার ঈদে যদি ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে না পারেন, তাহলে তারা একেবারে পথে বসে যাবে। ব্যবসায়ীদের জীবিকার কথা মাথায় রেখে মার্কেট খুলে দেয়ায় আমরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা প্রতিটি ব্যবসায়ীকে কড়া নির্দেশনা দিবো যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা পরিচালনা করা হয়।
জহুর হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফজলুল আমিন বলেন, অবশেষে আমরা শঙ্কামুক্ত হলাম। আমরা অবশ্যই শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা করবো।
আখতারুজ্জামান সেন্টার দোকান মালিক সমিতির আহ্বায়ক ইকবাল হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, গত বছর ব্যবসায়ীরা মোটা অংকের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তার উপর করোনাকালে তেমন ব্যবসায় হয়নি। তারপরেও এবারের রমজানে প্রত্যেক দোকান শোরুমে ঈদের পণ্য মজুদ করা হয়েছিল। লকডাউন শুরু হওয়ায় শংকা তৈরি হয়েছিল। দোকান খোলা রাখার সরকারি ঘোষণায় সেই শংকা কেটে গেছে। এখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা দোকান খোলার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানানো।