সড়কের পাশে অবৈধ স্থাপনা চলছে দোকান ভাড়া

বায়েজিদ ফৌজদারহাট লিংক রোড

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৪ এপ্রিল, ২০২১ at ৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোড প্রকল্পটি এখনো শেষই হয়নি। এরমধ্যে সড়কের পাশের জায়গাতে চোখ পড়েছে ভূমি দস্যুদের। ইতোমধ্যে অনেকে সেখানে নির্মাণ করেছেন অবৈধ স্থাপনা। কেউ নিজে দোকান বানিয়ে ব্যবসা করছেন, কেউ লাগাচ্ছেন ভাড়ায়। তবে সিডিএ বলছে, বায়েজিদ লিংক রোডের আশেপাশে সিডিএর মালিকানাধীন জায়গায় নির্মিত সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বায়েজিদ লিংক রোডের জঙ্গল সলিমপুর ও জাফরাবাদ এলাকায় প্রবেশ মুখগুলোর আশেপাশে গত দুই মাসের মধ্যে নির্মিত হয়েছে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা। কয়েকটি স্পটে অস্থায়ী দোকান নির্মাণ করে কেউ ব্যবসা করছেন। আবার কিছু স্পটে রাস্তার ফুটপাত লাগোয়া জায়গাতে স্থায়ী টিনশেড দোকান নির্মাণ করে ভাড়ায় লাগানো হচ্ছে। নির্মিত দোকানগুলোতে ভাড়ার নোটিশও টাঙানো হয়েছে। এসব নোটিশে যোগাযোগের জন্য দেওয়া হয়েছে মোবাইল নম্বর। দোকান ভাড়া নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে ওই মুঠোফোনে প্রতিবেদক যোগাযোগ করলে অপরপ্রান্তের ব্যক্তি বলেন, ‘কোন দোকানটি নেবেন? পেছনের দোকানটি ২৮ ফুট লম্বা, ৩০ ফুট মুখ। এটির জন্য দেড় লাখ টাকা এডভান্স ও ১০ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে। সামনেরগুলোও নিতে পারেন। এগুলা সাড়ে তিন হাজার টাকা ভাড়া, ৪০ হাজার টাকা এডভান্স।’ এডভান্স নিলে কোনো ডকুমেন্টস দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই। এডভান্স দিলে এগ্রিমেন্ট হবে, সেটা আমার মালিকানা জায়গা। আপনি আমার অফিসে আসেন।’ এরপর তার নাম জানতে চাইলে বলেন- আতিকুর রহমান রনি। ঠিকানা দেন বায়েজিদের আরেফিন নগর বাজার এলাকা। পরে প্রতিবেদক নিজের পরিচয় দিয়ে জানতে চাইলে আতিকুর রহমান রনি বলেন, ‘পেছনেরগুলো আমার মালিকানা জায়গা, সামনেরগুলো লিজ নেওয়া। আমি আমার মালিকানা জায়গায় দোকান তুলছি, সিডিএ থেকেও লিজ নিয়েছি। উপরের যে জায়গা রাস্তায় পড়েছে, সেই রাস্তা একোয়ারের (অধিগ্রহণ) টাকা আমি পাই নাই। সিডিএ আমার জায়গার উপর রাস্তা বানিয়েছে। সেজন্য দরখাস্ত দিয়েছি। দেড় মাস হয়েছে। সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’ এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘শেরশাহে অনেক সাংবাদিক আছে, সবার সাথে আমার পরিচয় আছে। আপনি (প্রতিবেদক) কিছু বললে আমার অফিসে এসে বলতে পারেন। আর যদি লেখবেন, লেখেন আমার কোনো অসুবিধা নেই।’ শুধু আতিকুর রহমান রনি নয়; সড়কটির ডানপাশের অংশের অনেক জায়গায় তৈরি হয়েছে স্থাপনা।
তবে বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোডের দুপাশে কোনো জায়গা লিজ দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী রাজিব দাশ গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘সড়কের এলটমেন্ট অনুযায়ী সিডিএর আওতাধীন যতটুকু জায়গা রয়েছে সবগুলোই নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। ইতোমধ্যে সড়কটির পাশে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে একটি ফাইলও অনুমোদন করা আছে। কোভিড পরিস্থিতির কারণে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ বিলম্বিত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি সড়কটি আমরা ভিজিট করেছি। সড়কটির পাশে কিছুর স্থানে অবৈধ স্থাপনা উঠেছে। আগামী ২৮ এপ্রিল থেকে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ ওখানে সিডিএর পক্ষ থেকে কোনো জায়গা লিজ দেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।
জানা যায়, চট্টগ্রাম শহরের যানজট নিরসনে ঢাকাগামী যানবাহনগুলোর নগরীতে আসা যাওয়া নির্বিঘ্ন করতে ১৯৯৭ সালে বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোড করার উদ্যোগ নেয় সিডিএ। নানা জটিলতার কারণে প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটি দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে। বর্তমানে প্রকল্পের মূল সড়ক নির্মাণ শেষ হয়েছে। ফৌজদারহাট প্রান্তে একটি ওভারপাস নির্মাণ শেষ করার পাশাপাশি প্রকল্পের জন্য কাটা খাড়াপাহাড়গুলো নতুন করে রক্ষণাবেক্ষণ করার মাধ্যমে চলতি বছরের মধ্যেই পুরো প্রকল্পটি শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সিডিএ কর্মকর্তারা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজ্বলন্ত ভবনে সবাইকে জাগিয়ে নিজে গেলেন মৃত্যুর পথে
পরবর্তী নিবন্ধবিশেষ বিবেচনায় কুয়েত ও বাহরাইনে ফ্লাইট কাল থেকে