করোনাকালে কষ্টে আছে পশু-পাখিগুলো। সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় জুটছে না খাবার। গ্রীষ্মের তাপদাহে অতিষ্ঠ পাখিরাও। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে শিকারি ও মানুষের নিষ্ঠুরতা। বেওয়ারিশ ও পোষা প্রাণির প্রতি ভালোবাসা থেকে জন্ম নেওয়া প্রতিষ্ঠান অ্যানিম্যাল কেয়ার অব চট্টগ্রাম এর সদস্যরা করোনাকালেও থেমে নেই। খবর বাংলানিউজের।
নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কুকুর-পাখিকে খাবার দেওয়া, দুর্ঘটনার শিকার প্রাণিকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা ও প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় দেওয়ার কাজ করছেন ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবী। পাঁচ বছর ধরে চলছে তাদের এই কার্যক্রম। প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও হিসেবে আছেন সুমী বিশ্বাস। সর্বশেষ গত ১৭ এপ্রিল বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার এলাকা থেকে টিয়া ও ময়না পাখির ছানা উদ্ধার করেন অ্যানিম্যাল কেয়ার অব চট্টগ্রামের সদস্যরা।
প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা প্রিন্স মজুমদার বলেন, বেশকিছু টিয়া ও ময়না পাখির ছানা বিক্রির খবর পেয়ে আমরা ক্রেতা হিসেবে বিক্রেতা নারীর সঙ্গে যোগাযোগ করি। একইসময়ে ওয়াইল্ডলাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিট চট্টগ্রাম শাখাকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। সবার যৌথ প্রচেষ্টায় ওই নারীকে ৮টি পাখির ছানাসহ আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ওই নারী প্রথমে পাখির ছানাগুলো রাঙামাটি থেকে বিক্রি করতে এনেছিলেন বলে জানালেও পরে জানান- তিনি এগুলো বাসাতেই ব্রিডিং করিয়েছেন। পরে মানবিক দিক বিবেচনায় তাকে অর্থদণ্ড ও সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রাণি কল্যাণ আইন ২০১৯ অনুযায়ী, অতিথি পাখি ও দেশীয় বন্য প্রাণি বা বন্যপাখি মেরে খাওয়া, অকারণে হত্যা করা, কেনাবেচা করা, আটকে রেখে পালন করা দণ্ডনীয় অপরাধ। মালিকানাধীন বা মালিকবিহীন যেকোনও প্রাণি নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করলে ৬ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে। এছাড়া গৃহপালিত প্রাণির প্রতি নিষ্ঠুরতা, অত্যাচার, ২৪ ঘন্টা স্বল্প পরিসরে আটকে রাখা, খাবার ও চিকিৎসায় অবহেলা করলে জেল-জরিমানা হতে পারে। বিক্রির জন্য হাঁস-মুরগি ঝুড়িতে না নিয়ে ঝুলিয়ে নেওয়াও দণ্ডনীয় অপরাধ। অ্যানিম্যাল কেয়ার অব চট্টগ্রামের সদস্যরা জানান, রাস্তায় প্রাণির প্রতি সাধারণ মানুষের নিষ্ঠুরতা কমছে না।
কুকুর-বিড়ালকে আঘাত করা, হত্যা, খাবারে বিষ প্রয়োগ এবং লেজ কেটে দেওয়া, গরম জল ছিটানো ও ইট-পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে প্রায়ই। এ অবস্থায় প্রাণিদের সুরক্ষা দিতে চট্টগ্রামে সরকারি উদ্যোগে কোনও আশ্রয়স্থলও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। অ্যানিম্যাল কেয়ারের প্রতিষ্ঠাতা নগরের সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায় নিজ উদ্যোগে প্রাণির শেল্টার হোম গড়ে তুলেছেন। এখানকার সদস্যরা রাস্তায় দুর্ঘটনায় আহত প্রাণি উদ্ধার করে ভেটেরিনারি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, শেল্টারে থাকা প্রাণির যত্ন, টিকা দান, বেওয়ারিশ প্রাণিকে খাবার বিতরণ করে যাচ্ছে। গত মঙ্গলবার রাস্তার প্রাণির জন্য খাবার দিতে বের হয়ে সিইও সুমী বিশ্বাস ও সহকর্মীরা প্রত্যক্ষ করেন বেদনাদায়ক দৃশ্য। গাড়ির ধাক্কায় মুখের চোয়াল ভেঙ্গে মারা যায় বেওয়ারিশ একটি কুকুর। গাড়ি থামিয়ে রাস্তা থেকে কুকুরটিকে সরিয়ে নেন তারা। নৌ-বাহিনীর সদস্যরা তাদের উদ্ধার তৎপরতা দেখে এগিয়ে আসেন এবং মৃত কুকুরটিকে কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
লকডাউনের মধ্যেও কিভাবে মানুষ বেপরোয়া গাড়ি চালায়, সে প্রশ্নও রাখেন অ্যানিম্যাল কেয়ারের স্বেচ্ছাসেবীরা।