ফলবোঝাই কন্টেনার নিয়ে বিপাকে বন্দর

ইয়ার্ডকে গুদাম হিসাবে ব্যবহার ।। দ্রুত খালাসের নির্দেশনা

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২২ এপ্রিল, ২০২১ at ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত রেফার কন্টেনার নিয়ে বিপাকে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। রমজান উপলক্ষে আমদানিকৃত বিপুল পরিমাণ তাজা ফল বোঝাই এসব কন্টেনার বন্দর থেকে খালাস না করে ঈদসহ পরবর্তী সময়ের জন্য বন্দর ইয়ার্ডকে গুদাম করে রাখায় কন্টেনার জটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ গতকাল বুধবার এক নির্দেশনায় শুক্র, শনি ও রোববার পুরোদমে রেফার কন্টেনার খালাস করে নিয়ে যেতে নির্দেশ প্রদান করেছে। বন্দরের অভ্যন্তরে গতকাল প্রায় দুই হাজার টিইইউএস রেফার কন্টেনারসহ প্রায় ৩৩ হাজার কন্টেনার জমা হওয়ায় কর্তৃপক্ষ জরুরি এই নির্দেশনা জারি করে।
বন্দর সূত্র জানিয়েছে, রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে প্রচুর পরিমাণ ফলবোঝাই এফসিএল কন্টেনার আমদানি করা হয়েছে। বাজার পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে ফল আমদানিকারকরা এসব কন্টেনার খালাস করছেন। জাহাজ থেকে নামানোর পর ফ্রি টাইম পার হলেও অধিকাংশ আমদানিকারকই বন্দর ইয়ার্ডকে গুদাম বানিয়ে রেখেছেন। তারা ফলভর্তি কন্টেনার খালাস না করে বন্দরের ইয়ার্ডে ফেলে রাখছেন এবং করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিকসহ ঈদ পরবর্তী বাজার ধরার চিন্তা করছেন।
তবে তাজা ফলসহ পচনশীল পণ্যভর্তি এসব কন্টেনার যেখানে সেখানে ফেলে রাখা যায় না। সার্বক্ষণিক বৈদ্যুতিক সংযোগসহ ফ্রিজের মতো করে কন্টেনারগুলো সংরক্ষণ করতে হয়। প্রতিটি কন্টেনারে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার জন্য রয়েছে আলাদা বৈদ্যুতিক পয়েন্ট। বন্দরের অভ্যন্তরে সর্বমোট ১৭৮২টি প্লাগ পয়েন্ট রয়েছে, যেখান থেকে বিশাল বিশাল কন্টেনারে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। কিন্তু গতকাল বন্দরের অভ্যন্তরে সর্বমোট ১৯১৬ টিইইউএস রেফার এফসিএল (পুরো পণ্য এক আমদানিকারকর) কন্টেনার রয়েছে। এর বাইরে কন্টেনার রয়েছে ৩২ হাজার ৩৭৬টি।
বন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরে আসা জাহাজ থেকে খালাসের পর সব এফসিএল কন্টেনার ও এলসিএল কার্গো চারদিন ফ্রি টাইমের মধ্যে নিয়ে যাওয়ার কথা। কোভিড এবং লকডাউন পরিস্থিতির মাঝে বন্দর কর্তৃপক্ষ নতুন নির্দেশনা প্রদান করে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রেখেছে। কিন্তু রেফার এফসিএল কন্টেনারের পাহাড় বন্দর কর্তৃপক্ষকে সংকটে ফেলছে। বিশেষ ব্যবস্থায় আনা এসব কন্টেনার যথাযত ভাবে খালাস করার সুবিধা তৈরি না হলে কন্টেনার খালাসেও জটিলতা তৈরি হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে রেফার কন্টেনার রাখায় প্লাগ পয়েন্টে ক্রমে বড় সংকটের সৃষ্টি হবে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
স্বাভাবিকভাবে শুক্র, শনি ও রোববার ব্যবসায়ীরা রেফার কন্টেনার খালাস করতে চান না। বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে সোম, মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার তারা খালাস করেন। তবে গতকাল নতুন সার্কুলার জারি করে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, অন্যান্য দিনের মতো শুক্র থেকে রোববারও পুরোদমে রেফার এফসিএল কন্টেনার খালাস করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল ম্যানেজার গতকাল এই নির্দেশনা জারি করেন।
বন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশে আমদানি পণ্যের প্রায় ৯০% খালাস হয়। পবিত্র রমজান মাস পরবর্তী সময়ে স্বাভাবিক চাহিদার চেয়ে আমদানি ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। যে পরিমাণ কন্টেনারবোঝাই পণ্য আমদানি হয় সে অনুযায়ী পণ্য ডেলিভারি না নেয়ার তৈরি হয় কন্টেনার জট।
চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল ম্যানেজার বলেন, বন্দরের গতিশীলতা এবং দেশের সাপ্লাই চেইন নিরবচ্ছিন্ন তথা চট্টগ্রাম বন্দরে আসা কন্টেনারবাহী জাহাজ হ্যান্ডলিং স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। রেফার কন্টেনার খালাস দ্রুত সময়ে হলে বন্দরের সার্বিক অপারেশনাল কাজে গতিশীলতা আসবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭০ টন সরকারি চাল জব্দের ঘটনায় আড়তদার গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধএ বছর ফিতরা সর্বনিম্ন ৭০ টাকা