চলচ্চিত্র জগতে কিংবদন্তি জুটি হিসেবে ধরা হয় ওয়াসিম-রোজিনাকে। ৭৫টিরও বেশি ছবিতে তারা জুটি বেঁধে দর্শকের সমানে এসেছেন। যা বাংলা ছবির ইতিহাসেও বড় একটি মাইলফলক। শুধু রূপালি পর্দাতেই নয়, বাস্তবেও তারা ছিলেন বন্ধুসম। দেখা-সাক্ষাতের দূরত্ব বাড়লেও প্রতিনিয়ত তারা একে-অপরের খোঁজ রাখতেন। প্রিয় নায়ক, বন্ধুকে হারিয়ে একধরনের হাহাকারের মধ্যে আছেন রোজিনা। বলেছেন সদ্য প্রয়াত সুপারস্টার ওয়াসিমকে নিয়ে-
নায়িকা হিসেবে ‘রাজমহল’ আমার প্রথম সিনেমা। নায়ক ছিলেন ওয়াসিম। তিনি তখন সুপারস্টার। আর আমি একেবারেই নতুন। আর নতুন হিসেবে এত বড় নায়কের সঙ্গে অভিনয় করতে যাওয়া ছিলো বিশাল ব্যাপার। কিন্তু তিনি সে ব্যবধান বুঝতে দেননি। ‘রাজমহল’ আমার জীবনের গল্প বদলে দিয়েছিলো। জীবন বদলে যাওয়ার ঘটনাটিও আমার অভিনয় জীবনের স্মরণীয় একটি ঘটনা। এটি কখনোই ভুলবো না।
তার সঙ্গে আমি প্রচুর ছবিতে কাজ করেছি। সেটা প্রায় ৭০-৮০টি তো হবেই। এত ছবিতে একসঙ্গে কাজ করাটাও বিশেষ। এমন কোনও ঘরানার ছবি নেই যে, আমরা একসঙ্গে অভিনয় করিনি। সামাজিক, রাজনৈতিক, লোক, গ্রাম, দস্যু, রাজকাহিনী- সবই। রাজমহল, মানসী, বিনি সুতার মালা, ভাগ্যলিপি, মায়ের আঁচল- কত সব হিট ছবি আমাদের।
আমি কারও সঙ্গে কারও তুলনা করতে চাই না। সেসময় রাজ্জাক, আলমগীর, ফারুক, সোহেল রানা, জাফর ইকবাল ভাই স্ট্যাবলিশ, সুপারস্টার। সবার সঙ্গে আমাদের ফ্রেন্ডলি সম্পর্ক। তবে ওয়াসিম ভাই অন্যরকম আন্তরিক ছিলেন। খোশ মেজাজে থাকতেন। অন্যকে হাসিখুশি রাখতে পছন্দ করতেন। দেখা গেল, শুটিংয়ের মধ্যে নিজেই ‘কাট’ বলে আবার অভিনয় শুরু করে দিলেন।
আবার ওয়াসিম ভাইয়ের সঙ্গে যখন কাজ করতাম, মনে হতো একেবারে বাস্তবে আছি আমরা।
ওয়াসিম ভাইয়ের সঙ্গে সর্বশেষ দেখা হয়েছিল দুই বছর আগে। বিটিভিতে বুশরা চৌধুরীর অনুষ্ঠানে। এছাড়াও গত শিল্পী সমিতির নির্বাচনে দেখা হয়েছিল। আমি বলেছিলাম, তার সঙ্গে আড্ডা দিতে যাব। সেটা আর হয়নি। তবে কথা হতো না, তা নয়। মাঝে-মধ্যেই কথা হতো।
সমপ্রতি আমার পরিচালিত ছবি ‘ফিরে দেখা’র কাজে গোয়ালন্দ ছিলাম। তখন ওয়াসিম ভাইয়ের একটি ছবি আমাকে একজন পাঠিয়েছিল। দেখলাম, শরীরটা ভীষণ খারাপ। মাত্রই আমি গোয়ালন্দ থেকে ফিরলাম। কিন্তু তাকে দেখতে আর যাওয়া হলো না। এমন পরিপাটি, বিনয়ী ও আন্তরিক মানুষের বড় অভাব এখন। তিনি চলে যাওয়াতে সেই হাহাকার আরও বেশি করে তাড়া করছে আমাকে।