বিগত সময় থেকে শিক্ষা নিয়ে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা যথাযথভাবে কার্যকর করায় দেশের আমদানি-রপ্তানির প্রবেশদ্বার চট্টগ্রাম বন্দর পুরোদমে সচল ভয়াল করোনা কিংবা লকডাউনের মাঝেও। দেশজুড়ে কঠোর বিধিনিষেধ চললেও স্বাভাবিক রয়েছে বন্দরের কার্যক্রম। নিয়মিত খালাস হচ্ছে ভোগ্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্য। তৈরি পোশাকসহ রপ্তানি পণ্যও জাহাজীকরণ হচ্ছে নিয়মিত। টানেলসহ বিভিন্ন মেগাপ্রকল্পের পণ্য নিয়মিত খালাস হচ্ছে।
বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জানান, কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে শুধু দাপ্তরিক কাজের জন্য শিফট করে কাজ চলছে। বন্দরের অপারেশনের কর্মীরা নিয়মিত কাজ করছেন। তাই স্বাভাবিক সময়ের মতো চট্টগ্রামবন্দর সচল রয়েছে। গতবারের মতো এবারও কোনো সমস্যা হবে না। মেগাপ্রকল্পের পণ্যগুলো দ্রুত ছাড় দেয়া হচ্ছে। গত বছর করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বন্দরের পণ্য খালাস ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। আটকা পড়ে মেগাপ্রকল্প পদ্মা সেতুর ৩৫০ কোটি টাকার সরঞ্জাম। গতবারের অবস্থা থেকে এবার শিক্ষা নিয়ে নতুন অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে বলেও জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, বন্দর পুরো সচল। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কোনো ব্যাপার নেই। কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাজের এবং অফিসের ধরনে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে মাত্র। এদিকে কাস্টমস, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার, ব্যাংকসহ আমদানি-রপ্তানি ও ডেলিভারি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোও সচল। এতে করে সবার সম্মিলিত চেষ্টা এবং সেবার ভিত্তিতেই পুরোদমে কাজ চলছে চট্টগ্রাম বন্দরে।
বন্দরের আমদানি-রপ্তানি পণ্য ওঠানামা সচল রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী ট্রাফিক বিভাগের এক কর্মকর্তা গতকাল দৈনিক আজাদীকে জানান, সরকার কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে বহু কর্মকর্তা কর্মচারীর সমস্যা হচ্ছে। তবুও আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টার মাধ্যমে বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রেখেছি।
বন্দরের শীর্ষ কর্মকর্তারা জেটিতে-শেডে দাঁড়িয়ে থেকে কাজ তদারক করছেন। এতে কর্মীদের কাজে গতি আসছে। এটি সাধারণ কর্মচারীদের মাঝে টনিকের মতো কাজ করছে বলেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
বন্দরের অভ্যন্তর থেকে কন্টেনার খালাসে বিশেষ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। যা বেশ সন্তোষজনকভাবে কার্যকর হচ্ছে। এর সুফলও মিলতে শুরু করেছে। বন্দরে কন্টেনার খালাস, জাহাজীকরণ এবং জাহাজ থেকে নামিয়ে রাখার ক্ষেত্রে গতবার লকডাউনের সময় যে সমস্যাগুলো হয়েছিল এবার তার কোনোটি নেই বলেও উল্লেখ করেন বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক।
বন্দর সূত্র জানায়, গত মার্চ মাসে বন্দরে ১ লাখ ১৭ হাজার টিইইউএস আমদানিপণ্য ভর্তি ৬০ হাজার ১৫২ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। এর আগের ফেব্রুয়ারি মাসে যা ছিল যথাক্রমে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭০০ টিইইউএস এবং রপ্তানি পণ্য বোঝাই ছিল ৫৭ হাজার ৮৫৪টিইইউএস।
করোনাভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণ কিংবা লকডাউনের মতো পরিস্থিতিতেও আমদানি-রপ্তানির গতি এবং বন্দরের কার্যক্রম বাড়াতে বড় সফলতা বলে মনে করছেন বন্দরের শীর্ষ কর্মকর্তারা। তারা বিষয়টি ধরে রাখতে চান বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। বন্দর সচল থাকায় পণ্য পরিবহন নেটওয়ার্কে কোনো সমস্যা হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তারা।