মুরাদপুর থেকে চেরাগী পাহাড় মোড়। স্বাভাবিক সময়ে রুটটির রিকশা ভাড়া ৫০ টাকা। গত কয়েকদিন ধরে রিকশা চালক দাবি করছেন ৬০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। আবার কাপাসগোলা থেকে চেরাগী পাহাড় মোড় পর্যন্ত স্বাভাবিক সময়ের ভাড়া ৫০ টাকা। গত কয়েকদিন ধরেও একই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে এ রুটে। তবে ব্যাটারিচালিত রিকশা ১০ টাকা কমে নিচ্ছে ৪০ টাকা।
চলমান কঠোর লকডাউনের কারণে গত কয়েকদিন ধরে ফাঁকা শহরের প্রধান রাস্তাঘাট। চলছে না গণপরিবহন। তার জায়গা দখলে নিয়েছে রিকশা। চলছে রিকশা চালকদের দাপট। এদের কেউ স্বাভাবিক সময়ের মতো ন্যায্য ভাড়া দাবি করছেন। কেউ চাইছেন বাড়তি। অনেক চালক আবার সম্পূর্ণ মনগড়া ও অযৌক্তিক ভাড়া দাবি করছেন বলেও অভিযোগ আছে। অবশ্য রিকশা চালকরা বলছেন, জোর করে তো নিয়ে যেতে পারব না। পোষালে যাবে, না পোষালে যাবে না। সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, নগরে নিবন্ধিত রিকশা আছে ৭০ হাজার ১টি। এর বাইরে আরো প্রায় ৫০ হাজার নিবন্ধনহীন রিকশা রয়েছে বলে নগরবাসীর ধারণা। এদিকে বাড়তি আয়ের আশায় প্রতি বছর রমজান মাসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নিম্নবিত্ত পরিবারের লোকজন ছুটে আসে চট্টগ্রাম শহরে। যাদের সিংহভাগ ঈদ পর্যন্ত রিকশা চালানোকে সাময়িক পেশা হিসেবে বেছে নেয়। অবশ্য এবার বিগত বছরগুলোর তুলনায় মৌসুমী রিকশা চালকদের উপস্থিতি কম দেখা যাচ্ছে। কারণ, রোজার আগে থেকেই দূরপাল্লার গাড়ি বন্ধ থাকায় অন্য জেলার লোকজন তেমন আসতে পারেননি।
এদিকে গত ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয় লকডাউন, যা ১১ এপ্রিল থেকে দুদিন বাড়িয়ে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। দ্বিতীয় দফায় ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে কঠোর লকডাউন, যা চলব ২১ এপ্রিল পর্যন্ত। শেষ মুহূর্তে এসে সময়সীমা বাড়ার সম্ভাবনা আছে। এ অবস্থায় গত দুই সপ্তাহ ধরে জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হতে হওয়া লোকজন গণপরিবহন না থাকায় বাধ্য হচ্ছেন রিকশায় চড়তে। এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন রিকশা চালকরা। কেউ পূর্বের ভাড়া নিলেও বেশিরভাগই বেশি দাবি করছেন। অবশ্য ভাড়া নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে যাত্রীদের। সন্তুষ্ট ও অসন্তুষ্টি দুটোই আছে তাদের মাঝে।
জিইসি মোড়ে কথা হয় পথচারী আজিজের সঙ্গে। জানালেন, নিকটাত্মীয়কে পাঁচলাইশ এলাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাকে দেখতে যাচ্ছেন। অন্য কোনো যানবাহন না থাকায় বাধ্য হয়েছেন রিকশা নিতে। রিকশাওয়ালা ২০ টাকা বেশি ভাড়া দাবি করায় রাগ হচ্ছে। আবার এই ভেবে তৃপ্ত হচ্ছেন, যদি রিকশাও পাওয়া না যেত তখন কি হতো?
অবশ্য অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন এক গণমাধ্যমকর্মী। তার অফিস আসকার দিঘি পাড় এলাকায়। লকডাউনে অফিস খোলা। আন্দরকিল্লার বাসা থেকে অফিস পর্যন্ত আগে রিকশা ভাড়া দিতে হতো ২৫ থেকে ৩০ টাকা। এখন গুণতে হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়েও নিয়মিত রিকশায় চড়ে অফিসে যেতাম। এখনো যাচ্ছি। আগে যে ভাড়া দিতাম তার চেয়ে এখন বেশি দাবি করছে রিকশা চালক। আমার প্রশ্ন, পূর্বে যা ভাড়া দিতাম তা দিয়ে পোষালে এখন তাদের পোষাবে না কেন? এছাড়া বর্তমানে অন্য যানবাহন না থাকায় রিকশার চাহিদা বেড়েছে। ফলে আগের তুলনায় যাত্রীও বেড়েছে। তবু বেশি ভাড়া নেওয়াটা অযৌক্তিক।
এদিকে বেশি ভাড়া নেওয়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, মৌসুমী রিকশা চালকদের অনেকে শহরে নতুন এসেছে। যারা রাস্তাঘাট ভালোভাবে চিনেন না। পূর্বের ভাড়া সম্পর্কেও তাদের ধারণা নেই। ফলে মনগড়া ভাড়া দাবি করছে তারা। অনেক ক্ষেত্রে বেশি ভাড়া হলেও নিরুপায় হয়ে বা কাজের তাড়া থাকলে লোকজন সেটা দিয়ে দিচ্ছেন। এদিকে মৌসুমী রিকশা চালকরা সেটাকে ন্যায্য ভাড়া ধরে নিয়ে পরের যাত্রীর কাছ থেকেও তা দাবি করছে।