সড়কে রিকশা আছে যাত্রী কম

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৭ এপ্রিল, ২০২১ at ৩:৪৮ পূর্বাহ্ণ

সিএনজি অটোরিকশার চালক আবুল কাসেম। থাকেন চান্দগাঁও শমশের পাড়া এলাকায়। লকডাউনে গণপরিবহন চলাচলে বিধিনিষেধ থাকায় বেকার হয়ে পরিবারের ভরণপোষণ করতে পারছিলেন তিনি। গত বছরের লকডাউনে সাধারণ মানুষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। লকডাউনের প্রথম দুইদিন বাসায় বসে থাকলেও ঘরে খাবার কেনারও টাকা ছিল না। শুক্রবার সকালে বাধ্য হয়ে পাশের গ্যারেজ থেকে রিকশা নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন আবুল কাসেম। তবে সড়কে আশানুরূপ যাত্রী মেলেনি। সকাল থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে মাত্র তিনশ টাকা আয় হয়েছে তার। বহদ্দারহাট মোড়ে কথা হয় হলে এ অটোরিকশা চালক বলেন, ‘ভাড়ায় সিএনজি অটোরিকশা চালাই। লকডাউনে সরকারি নির্দেশনার কারণে কোম্পানি গাড়ি বের করতে দেয়নি। দুইদিন ধরে কোনো আয় নেই। আমার পরিবারে ৫ ছেলেমেয়েসহ আমরা ৭জন। তিনজন পড়ালেখা করে। আজকে বাসায় রান্নার চালও ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে রিকশা নিয়ে রাস্তায় নেমেছি। এখন দেখি রাস্তায় যাত্রী কম। সকাল সাড়ে আটটা থেকে তিনটা পর্যন্ত মাত্র ৩১০ টাকা আয় হয়েছে। আমার মতো অন্য পেশার অনেকেই এখন রিকশা চালাচ্ছে।’ এদিকে কঠোর লকডাউনের তৃতীয় দিনে সড়কে লোকজনের উপস্থিতি ছিল কম। চলেনি গণপরিবহন। তারপরেও পুরো নগরীতে সাধারণ মানুষের যাতায়াতের একমাত্র বাহন হয়ে দাঁড়িয়েছে রিকশা। লকডাউনে অন্য যানবাহন চলাচলে বাধার সম্মুখীন হলেও রিকশা নিয়ে তেমন বেগ পেতে হয়নি কাউকে। তবে যাত্রী না থাকায় তপ্ত রোধে পেরেশানিতে ভুগেছেন বেশিরভাগ রিকশা চালক। খালি রিকশা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ ঘুরেও অনেকে যাত্রী পায়নি। যাত্রীর জন্য নগরীর সড়ক ও গলির মুখে শত শত রিকশার উপস্থিতি দেখা গেছে। আয় হয়েছে অন্যদিনের চেয়ে অর্ধেক।
নগরীর দেওয়ানহাট মোড়ে কথা হয় রিকশা চালক মো. সুমনের সাথে। কুমিল্লার এ যুবক বলেন, গত ১০ বছর ধরে চট্টগ্রাম শহরে রিকশা চালাই। গত লকডাউনের প্রথম দিনে রিকশাও চলেনি। এবারের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। একদিকে লকডাউন, অন্যদিকে রমজান ও জুমার দিন হওয়ার কারণে বেশিরভাগ মানুষ বাসা থেকে বের হয়নি। আবার লকডাউন শুরু হওয়ার আগে অনেক মানুষ শহরে ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে। এতে নগরীতে মানুষজনও কমেছে। ফলে রাস্তায় যাত্রীও কম।’ সুমন বলেন, ‘আগে দিনে ৮শ-৯শ টাকা ইনকাম হতো। আজকে জুমার পর থেকে রাস্তায় নেমে মাত্র দেড়শ টাকা ভাড়া মেরেছি।’
আগ্রাবাদ মোড়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন রিকশা চালক খুরশিদ আলম। তিনি বলেন, ‘নিউ মার্কেট থেকে একজন যাত্রী নিয়ে দেওয়ানহাট মোড়ে আসি। ওখানে যাত্রী না পেয়ে খালি চালিয়ে আগ্রাবাদ মোড় পর্যন্ত এসেছি। কোথাও যাত্রী নেই। আমার মতো শত শত রিকশা শহরে ঘুরছে। যত রিকশা রাস্তায় আছে, তত যাত্রী নেই। এতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ভাড়াও কম দিতে চাচ্ছেন যাত্রীরা। ফলে সবার আয় কমে গেছে।’
অন্যদিকে যন্ত্রচালিত হওয়ায় রাইড শেয়ারিং বাইকও সাম্প্রতিক সময়ের জনপ্রিয় বাহন। কিন্তু লকডাউনের আগে থেকে রাইড শেয়ারের যাত্রী পরিবহনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার। তারপরেও শুক্রবার রিকশার পাশাপাশি সড়কে রাইড শেয়ারিং বাইকের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। যাত্রীর জন্য মোড়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে, অসংখ্য বাইকারদের।
বহদ্দারহাট মোড়ে ইয়াসির আরাফাত নামের এক বাইকার বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে লকডাউনে আয় বেশি হয়। কারণ স্বাভাবিক সময়ে বাস-মিনিবাস, সিএনজি অটোকিশা চলাচল করে। এখন এগুলো বন্ধ। বাইকে গেলে রিকশার চেয়ে দ্রুত সময়ে যাওয়া যায়। তাই অনেকে বাইকে চড়েন। যুবকদের বেশিরভাগ অংশ রাইড শেয়ারে চড়েন। এখন অ্যাপস বন্ধ থাকলেও রাস্তায় দর কষাকষি করে যাত্রী পাওয়া যায়।’ এই বাইকার বলেন, লকডাউনে এবং শুক্রবার হওয়ায় এক্কেবারে জরুরি না হলে মানুষজন রাস্তায় বের হচ্ছে না। ফলে রাস্তায় যাত্রীর সংখ্যা খুব কম। বাইকের সংখ্যা অনেক বেশি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রবাসীপুত্রের লাঠির আঘাতে হাসপাতালে মা-বাবা
পরবর্তী নিবন্ধদক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশিদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা