শুরুতে রোগীর অবহেলা অবস্থা হচ্ছে সংকটাপন্ন

| শুক্রবার , ১৬ এপ্রিল, ২০২১ at ৭:০৮ পূর্বাহ্ণ

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত নয় দিনেই মারা গেছেন ৭১৯ জন, যার মধ্যে ৬৯৩ জন মারা গেছে হাসপাতালে। চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত ফুসফুস সংক্রমণ ছাড়াও বছরের শুরুতে রোগটির প্রতি অবহেলার কারণেই অনেকে এখন সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ১০ হাজার ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এক সপ্তাহে বেশ কয়েকবার ভঙ্গ হয়েছে একদিনে মৃত্যুর রেকর্ড। সর্বশেষ গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টাতে মারা গেছে ৯৪ জন। খবর বিবিসি বাংলার।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউ বিভাগের কনসালটেন্ট সাজ্জাদ হোসেন বলছেন, এখন শুরুতেই দ্রুত সংকটাপন্ন হওয়ার পরে হাসপাতালে আসছেন অনেক রোগী। আবার হাসপাতালে এসেও অনেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বিলম্ব করছেন। তিনি বলেন, আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের ফুসফুস দ্রুত সংক্রমণ হচ্ছে ফলে খুব দ্রুত ড্যামেজ হছে। ফুসফুস ফুটবলের মতো হয়ে যায়। আমাদের এখানে যত রোগী আসছে প্রায় সবার একই অবস্থা। আমরা চেষ্টা করছি সবদিক দিয়ে। অনেকে আবার দ্রুত লাইফ সাপোর্ট সুবিধা নিতে রাজী হয় না। অর্থাৎ শুরুতেই ফুসফুসের অবস্থা চরমভাবে খারাপ হয়ে হাসপাতালে আসার পর চিকিৎসার ক্ষেত্রে আবার রোগীর দিক থেকে নানা সিদ্ধান্তহীনতাও হাসপাতালে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। অথচ গত বছর মার্চেও করোনা সংক্রমণ শুরুর পর স্বাস্থ্য বিভাগ থেকেই আক্রান্তদের বাসায় চিকিৎসা নিতে উৎসাহিত করা হয়েছিল। তখন জটিল রোগীদেরই হাসপাতালে আনার পরামর্শ দেয়া হতো।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাওসার আফসানা বলছেন, এবার সেকেন্ড ওয়েভ শুরুর আগে দুমাস মানুষ যেমন গুরুত্ব দেয়নি তেমনি কর্তৃপক্ষের দিক থেকেও সেকেন্ড ওয়েভ বা দ্বিতীয় ঢেউয়ের যথাযথ প্রস্তুতি নেয়া হয়নি। গতবার ধীরে ধীরে সংক্রমণ বাড়ছিল। রোগটিতো চলে যায়নি। একটু কমে গিয়েছিল। কিন্তু রোগটা আবার যখন মাথাচাড়া দিবে তখন তো এমনিই হবে। জনগণেরও যেমন অবহেলা আছে আবার যাদের প্রস্তুতি নেয়ার দরকার ছিল পাবলিক হেলথ থেকে সেটিও আমরা করিনি। দেশে আইসিডিডিআরবির গবেষণা করোনা ভাইরাসে দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব পাওয়ার পর জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকরা এটিকে আরও বেশি সংক্রামক ও জটিল বলে বর্ণনা করেছেন। এবার দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ শুরুর পর রোগীদের অবস্থা দ্রুত খারাপ হয়ে যাওয়ার প্রবণতা পাছেন চিকিৎসকরা। ফলে অনেকে হাসপাতালে এসেও অক্সিজেন, আইসিইউ, এমনকি লাইফ সাপোর্ট সুবিধা পেলেও শেষ পর্যন্ত হেরে যাছেন ভাইরাসের কাছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা যাছে গত সাতই এপ্রিল যে ৬৩ জন ও দশ এপ্রিল যে ৭৭ জন মারা গেছে তাদের সবাই হাসপাতালেই মারা গেছে। আবার গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৯৪ জনের মধ্যে ৯০ জন, বুধবার মারা যাওয়া ৯৬ জনের মধ্যে ৯৪ জনই হাসপাতালে মারা গেছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসেন বলছেন, বছরের শুরুতে চরম অবহেলার কারণেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে যারা সংক্রমিত হয়েছেন তারা মনেই করেননি যে এটা করোনা। তারা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভেবে চুপ ছিলেন। প্রথম থেকে গুরুত্ব দিলে গুরুতর অবস্থায় যাওয়ার আগেই প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু হতো। তাহলে এ অবস্থা হতো না। তবে এবার দ্বিতীয় দফার সংক্রমণে ঢাকার বাইরেও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার তথ্য আসছে। সে অনুপাতে চিকিৎসা সুবিধা অপ্রতুল হওয়ায় জেলা ও উপজেলায় চিকিৎসা নিয়েও অবস্থা ভালো না হওয়ায় অনেকে ঢাকায় আসছেন। ঢাকার কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তারা বলছেন এসব বিলম্বে আসা রোগীদের পরে সারিয়ে তোলা কঠিন হয়ে যাছে। অন্যদিকে ঢাকার হাসপাতালগুলো এখন রোগীতে সয়লাব। আইসিইউ সুবিধা প্রায় দুর্লভ। ফলে সংকটাপন্ন অবস্থায় এসে রোগী সময়মত হাসপাতালে ভর্তি হতে পারছেন না। আর হাসপাতালে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এসব বিষয়ই ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধুর ডাকা সেই খোকা আমি জাবেদ
পরবর্তী নিবন্ধকরোনায় চলে গেলেন আবদুল মতিন খসরু ও শামসুজ্জামান খান