করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া সরকারি-বেসরকারি বেশ কয়েকটি হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা, আইসিইউ শয্যা ও তাতে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সকল দফতরে নিয়মিত পাঠিয়ে থাকে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগ। তথ্যগুলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে নিয়মিত হালনাগাদ হয়ে থাকে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য দশটি আইসিইউ শয্যাসহ মোট একশটি শয্যা রয়েছে। আইসিইউ’র আনুষঙ্গিক হিসেবে দশটি ভেন্টিলেটর থাকার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে। তবে হাসপাতালটির সাধারণ শয্যা ও আইসিইউতে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা শূন্য দেখানো হয়েছে।
অর্থাৎ ভেন্টিলেটরসহ দশটি আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত থাকার পরও সেখানে একজন রোগীও ভর্তি নেই! অথচ একটি আইসিইউ শয্যার জন্য চারদিকে হাহাকার চলছে। সরকারি-বেসরকারি কোনো হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা খালি নেই। করোনা আক্রান্তদের মাঝে বিশেষ করে শ্বাসকষ্টের মুমূর্ষু রোগীদের বাঁচাতে একটি আইসিইউ শয্যার খোঁজ করছে রোগীর স্বজনরা।
কিন্তু নিরাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে তাদের। কোথাও মিলছে না একটি আইসিইউ। এমন পরিস্থিতিতে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ভেন্টিলেটরসহ দশটি আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত থাকার তথ্য প্রতিনিয়ত দিয়ে আসছে স্বাস্থ্য বিভাগ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা থাকলেও তা অনেকটা কাগজে-কলমে। বাস্তবে এসব আইসিইউ শয্যার সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আইসিইউ শয্যা দশটি থাকলেও মেশিনসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম রয়েছে ৬টি আইসিইউর। সেন্ট্রাল অক্সিজেন না থাকায় ভেন্টিলেটর সাপোর্টের সুযোগ নেই এখানে। সবমিলিয়ে ৬ জন রোগীকে অক্সিজেন সেবা দেওয়া যাবে, তাও সিলিন্ডারের সাহায্যে। অপর দিকে সেন্ট্রাল অক্সিজেন না থাকায় উচ্চ মাত্রায় অক্সিজেন প্রয়োজন, এমন রোগীকে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলায় অঙিজেন সরবরাহের সুযোগ নেই হাসপাতালটিতে।
সিলিন্ডার থাকলেও তা নিয়মিত রিফিলের ক্ষেত্রে রয়েছে নানামুখী সংকট। তাছাড়া আইসিইউ পরিচালনায় চিকিৎসকের পাশাপাশি প্রশিক্ষিত জনবল প্রয়োজন, তারও ঘাটতি রয়েছে এখানে। চিকিৎসক-নার্স ও কর্মচারী সংকট তো রয়েছেই। সবমিলিয়ে নানামুখী সংকটে মুমুর্ষু অবস্থা থেকে এক বছরেও উত্তরণ ঘটেনি হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালের। কিন্তু ভেন্টিলেটর-আইসিইউসহ হাসপাতালটি সার্বিকভাবে প্রস্তুত, এমন মনগড়া তথ্য প্রতিনিয়ত প্রচার করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে একশটি শয্যা প্রস্তুত থাকার তথ্য উল্লেখ করা হলেও সবমিলিয়ে ৬০টি শয্যা থাকার কথা জানিয়েছেন হাসপাতালটির দায়িত্বে থাকা সহকারী পরিচালক ডা. মনোয়ার হোসেন। এর মধ্যে ৫৪টি সাধারণ শয্যা এবং বাকি ৬টি আইসিইউ শয্যা বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা না পাওয়ায় এখনো রোগী ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়নি জানিয়ে ডা. মনোয়ার হোসেন বলেন, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর কর্তৃক গঠন করা একটি টিম শনিবার হাসপাতাল পরিদর্শন করে গেছেন। তারা এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন জমা দেবেন। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে হাসপাতালে রোগী ভর্তি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত আমাদের জানানো হবে। নির্দেশনা পেলে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। তবে আইসিইউ পরিচালনাসহ হাসপাতালের নানামুখী সংকটের বিষয়টি স্বীকার করেন ডা. মনোয়ার হোসেন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের মে মাসের শেষ দিকে অনেকটা ঘটা করে করোনা রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয় হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে। উদ্বোধনের প্রায় ১০ দিন পর ১ জুন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল থেকে করোনা আক্রান্ত ৬ জন রোগীকে এখানে ভর্তি করা হয়। ওই ৬ জনই ছিলেন পুলিশ সদস্য। এভাবে জেনারেল হাসপাতাল থেকে মোটামুটি সুস্থ হয়ে উঠা রোগীদের এখানে স্থানান্তর করলেও সরাসরি রোগী ভর্তির সুযোগ এখানে তেমন ছিল না।
তবে জেনারেল হাসপাতাল থেকে রোগী এনে ভর্তি রাখা হলেও প্রথম দিকে রোগীদের খাবারের ব্যবস্থাও ছিল না এ হাসপাতালে। নিজেদের উদ্যোগ ও খরচে খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়েছে রোগীদের। ফলে খাবার নিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হয় ভর্তি থাকা করোনা আক্রান্ত রোগীদের।
যদিও পরবর্তীতে জেনারেল হাসপাতালের একটি ইউনিট হিসেবে এ হাসপাতালের জন্য আলাদা বরাদ্দ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এতে করে খাবারের সংকট কেটে যায়। তবে জনবলসহ অন্যান্য সংকট থেকে গেছে। নানামুখী সংকটের আবর্তে একবছরেও মুমূর্ষু অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটেনি হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালের।











