বাবুনগরীসহ ৪৩ জনকে অভিযুক্ত করে পিবিআইয়ের প্রতিবেদন

আল্লামা শফীর মৃত্যু

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৩ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

হেফাজতে ইসলামের সাবেক আমির শাহ আহমদ শফীকে হত্যার অভিযোগে বর্তমান আমির জুনায়েদ বাবুনগরীসহ ৪৩ জনকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ইচ্ছাকৃত অবহেলায় আহমদ শফির মৃত্যু হয়েছে দাবি করে প্রতিবেদনে এজাহারভুক্ত ৩১ জনসহ নতুন করে আরো ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকসহ ৫ জনকে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। প্রায় চার মাস পর গতকাল সোমবার চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুল্লাহ কায়সারের আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মনির হোসেন এ প্রতিবেদন দাখিল করেন।
মামলার বাদী, বাদীর আইনজীবী আবু হানিফ, তদন্ত কর্মকর্তা মনির হোসেন ও পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান আজাদীকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে- ঘটনায় দণ্ডবিধির ১৩৪/৪৪৮/৪২৭/ ১১৭/৩২৩/৩৪১/ ৩৮০/৩০৪/৫০৬/৩৪ ধারায় অভিযোগ দায়ের হলেও তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৪৩/৪৪৮/৪২৭/ ১১৭/৩২২/৩৪১/ ৩৪২/৩০৪/৫০৬/৩৪ ধারার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সত্যতা পাওয়া না যাওয়ায় ১৩৪/৩২৩/৩৮০ ধারাসমূহ তদন্ত প্রতিবেদন থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। নতুনভাবে যুক্ত করা হয়েছে ১৪৩/৩২৩/৩৮০ ধারাসমূহ। তদন্ত প্রতিবেদনে যুক্ত ৪৩ জনের মধ্যে ৩১ জন মামলার এজাহারভুক্ত। তারা হলেন মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির, মাওলানা মীর ইদ্রিস, হাবিব উল্লাহ আজাদী, আহসান উল্লাহ, আজিজুল হক ইসলামাবাদী, জাকারিয়া নোমান ফয়েজী, আব্দুল মতিন, মো. শহীদুল্লাহ, মো. রিজুয়ান আরমান, হাসানুজ্জামান, মো. এনামুল হাসান ফারুকী, মীর সাজেদ, জাফর আহমদ, মীর জিয়াউদ্দিন, মাওলানা আহম্মদ, মাওলানা মাহমুদ, আসাদুল্লাহ, জুবাইর মাহমুদ, হাফেজ জুনায়েদ আহমেদ, আনোয়ার শাহ, ছাদেক জামিল কামাল, কামরুল ইসলাম কাসেমি, মো. হাসান, ওবায়েদুল্লা ওবায়েদ, জুবাইর, মাওলানা মোহাম্মদ, আমিনুল হক, সোহেল চৌধুরী, মবিনুল হক, নাইমুল ইসলাম খান ও হাফেজ সায়েম উল্লাহ।
তদন্তে নতুন করে যে ১২ জনকে দায়ী করা হয়েছে তারা হলেন জুনায়েদ বাবুনগরী, মাওলানা শফিউল আলম, শিব্বির আহমেদ, আবু সাঈদ, হোসাইন আহমদ, তাওহীদ, এরফান, মামুন, আমিনুল, মাসুদুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম ও নুর মোহাম্মদ।
পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান বলেন, তদন্তের দায়িত্ব পাবার পর ২২ জন সাক্ষীসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে আমরা কথা বলেছি। গতকাল সোমবার দুপুরে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছি। এর মধ্যে ৩১ জন এজহারভুক্ত। ১২ জনকে নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে। তদন্তেই এদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। মামুনুলসহ অপরাপর ৫ জনকে বাদ দেয়া হয়েছে। এ ৫ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর দুপুরে চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক শিবলু কুমার দের আদালতে হেফাজতের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে হত্যার অভিযোগ এনে মাওলানা মামুনুল হকসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে এ মামলাটি করেন আল্লামা আহমদ শফীর শ্যালক মাইনুদ্দিন। পরবর্তীতে আদালত মামলাটি গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। মামলায় দণ্ডবিধির ১৩৪/৪৪৮/৪২৭/১১৭/৩২৩/৩৪১/৩৮০/৩০৪/৫০৬/৩৪ ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। এজাহারে বলা হয়, মৃত্যুর আগে অসুস্থ হয়ে পড়লে আল্লামা আহমদ শফীর অঙিজেনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু তাকে অঙিজেন দেয়া হয়নি। তখন আসামিরা বলেছিল, ‘আগে বুড়াকে পদত্যাগ করতে বল, পরে বিদ্যুৎ দিব, অঙিজেন দেব’। পরে হাসপাতালে নেয়ার সময় আল্লামা শফিকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি আটকে দেয়া হয়। এক ঘণ্টা পর এ্যাম্বুলেন্সটি ছাড়া হয়। ফলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে অনেক দেরি হয়ে যায়। যার কারণে তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। পরে ডাক্তারদের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য আল্লামা আহমদ শফীকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ডাক্তাররা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলকডাউনে জরুরি চলাচলে ‘মুভমেন্ট পাস অ্যাপ’
পরবর্তী নিবন্ধএবারও অন্যরকম রমজান