চৈত্র মাসের শেষ দিন আজ, বাংলার চিরায়ত উৎসব চৈত্র সংক্রান্তি। আবার এটি বাংলা বর্ষের শেষ দিনও। আজ বিদায় নিচ্ছে বাংলা সাল ১৪২৭। জীর্ণ পুরাতন সবকিছু ভেসে যাক, ‘মুছে যাক গ্লানি’ এভাবে বিদায়ী সূর্যের কাছে আহ্বান জানায় বাঙালি। থাকে বর্ষবিদায়ের নানা আয়োজন। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে গত বছর বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ ছিল আড়ম্ভরহীন। করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামসহ সারাদেশে এবারও থাকছে না কোনো আয়োজন। আজ পুরনো বছরকে বিদায় আর পরের দিন নতুন বছরকে বরণ করে নেয়া হবে তেমন কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই।
করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে পহেলা বৈশাখসহ সবধরনের সমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। সারা দেশে কাল থেকে সাত দিনের জন্য কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এই অবস্থায় চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে কোনো অনুষ্ঠান আয়োন নেই।
সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ, চট্টগ্রামের আহ্বায়ক নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার আজাদীকে বলেন, এবারও আমরা পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতে পারছি না। সরকারি বিধি-নিষেধ আছে। তার উপর প্রতিনিয়ত মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। আমরা প্রথম দিকে ভেবেছিলাম আড়াই ঘন্টার প্রভাতী একটি অনুষ্ঠান করবো ডিসি হিলে, সীমিত পরিসরে। এ নিয়ে কথাও হয়েছিল। কিন্তু এখন মহামারী মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, আমাদের করাটা সমীচীন হবে না। এটার বিকল্প হিসেবে হতে পারে অনলাইনে উদযাপন। কিন্তু অনলাইনেতো সম্মিলিতভাবে উদযাপন করার সুযোগ নেই। কারণ আমাদের অনুষ্ঠানে ৯০টা সংগঠন অংশ নেয়। এখন অনলাইনে সকলের অংশগ্রহণতো সম্ভব নয়। তাই তাদের বলেছি, তারা যদি অনলাইনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, আমরা তাদের সাথে আছি। গতবছর খুব অসহায় লেগেছিল, আয়োজন না করতে পেরে। আর এবছর যেভাবে মৃত্যুহার বাড়ছে, সেটি বিবেচনা করে পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে আমরা করছি না। তবে আমার ব্যক্তিগত ফিলিংস হলো, আমি যদি ডিসি হিলে যেতে না পারি, সে গাছের তলায় থাকতে না পারি, তার ছায়াটা না পাই, তাহলে সে অনুভবটা হয় না। ওটা অনলাইনে হয় না।
শিল্পকলা একাডেমি, চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু বলেন, প্রতি বছরের মতো উন্মুক্ত স্থানে বর্ষ বিদায় ও বর্ষ বরণের অনুষ্ঠান আমরা করতে পারছি না। তবে অনলাইনে সেটা করছি। আমরা সকাল ১০ টা থেকে অনলাইনে অনুষ্ঠান শুরু করবো। সেখানে আবৃত্তি, কথামালা, সঙ্গীত, নৃত্য থাকবে। আমরা চাইছি, অনলাইনে হলেও মনের অভিব্যক্তিটা তুলে ধরতে।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বাঙালিরা করোনা মহামারি থেকে শীঘ্রই মুক্তির প্রত্যাশা নিয়েই আজ পুরনো বছরকে বিদায় জানাবে, আর আগামীকাল নতুন বছরকে বরণ করে নেবে।