একটি উদ্বেগজনক সংবাদ : ‘তিন মাসের ব্যবধানে মশার ঘনত্ব দ্বিগুণ, করোনার ঊর্ধ্বগতির মাঝেই দুঃসংবাদ, বৃষ্টি হলেই বাড়বে এডিসের প্রজননস্থল।’ প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক আজাদীতে ১০ এপ্রিল। এতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় আতংকে আছে নগরবাসী। এর মাঝেই দুঃসংবাদ বয়ে আনছে মশা। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে শহরে কিউলেঙ মশার ঘনত্ব বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। যা জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলছে। অবশ্য বৃষ্টি শুরু হলে কিউলেঙের ঘনত্ব কিছুটা কমে যাবে। তখন বৃদ্ধি পাবে এডিস মশার প্রজনন স্থান। এতে বাড়তে পারে ডেঙ্গুর প্রকোপ। চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিভিল সার্জন কার্যালয় যৌথভাবে গত ৬ মার্চ থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত নগরে কিউলেঙ মশার ঘনত্ব পরিমাপে জরিপ চালায়। সমপ্রতি জরিপ টিমের সদস্যরা প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে মশার ঘনত্ব দ্বিগুণ হওয়ার বিষয়টি ওঠে আসে। এছাড়া এডিসের প্রজনন স্থান বৃদ্ধির বিষয়েও সতর্ক করা হয় প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে মশা প্রতিরোধে চসিককে আট দফা সুপারিশ করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক। এতে বলা হয়, অফিস-আদালত ও বাসাবাড়ির আঙ্গিনা ও আশপাশ এলাকা সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য মাইকিং, লিফলেট বিতরণসহ নিয়মিত ‘আইইসি’ কার্যক্রম পরিচালনা করতে বলা হয়। ওয়ার্ড ভিত্তিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং কীটনাশক ছিটানোর কার্যক্রম যথাযথভাবে করা হলে কিউলেঙ মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলেও উল্লেখ করা হয়।
বলা হয়, মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে বছরব্যাপি জরিপ পরিচালনা করে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করা শ্রেয়। মশক নিধনের জন্য ব্যবহৃত কীটনাশকের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা হলে মশার বংশবিস্তার হ্রাস সহজতর হবে।
লার্ভিসাইড এবং এডালটিসাইড সময়মতো প্রয়োগের সুপারিশ করে বলা হয়, সূর্যোদয়ের পরপর এবং সূর্যাস্তের পূর্বে এডালটিসাইড ছিটানো।এছাড়া দক্ষ মশক নিধন কর্মীর দ্বারা কীটনাশক ছিটানোর সময় মনিটরিং টিম গঠন করে সুপারভিশন জোরদার করার সুপারিশ করা হয়।
আসলে মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরজীবন। ঘরে-বাইরে বাসা কিংবা অফিস সব জায়গাতেই মশার উপদ্রব। মশক নিধনে সিটি করপোরেশনের নামমাত্র ওষুধ ছিটানো ছাড়া তেমন কোনো কার্যক্রম এখনও পরিলিক্ষিত হচ্ছে না। সিটি মেয়র রেজাউল করিম দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে প্রতিশ্রুত গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন কার্যক্রম সূচনা করেন মশা নিধন কর্মসূচি উদ্বোধন করে। এই কার্যক্রমে মশকনিধন ও পরিচ্ছন্নতাকে প্রথম অগ্রাধিকার দিয়ে উদ্যোগ গ্রহণের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, মশার বিস্তার নাগরিক দুর্ভোগ ও অস্বস্তির বড় অসহনীয় উপসর্গ। তা নিরসনে প্রথম ২০ দিনের সময় বেঁধে দিয়ে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডকে কয়েকটি জোনে ভাগ করে মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালিত হবে। তবে মশক নিধন কার্যক্রম বা অভিযান পরিচালিত হলেও মশা কমে নি। মশা কেন মরে না- এবিষয়ে গবেষণাও কম হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মশক নিধনে নিয়োজিত কর্মীদের অধিকাংশই অদক্ষ। কখন ওষুধ দিতে হবে, কোথায় দিতে হবে, কতটুকু দিতে হবে-এ সবই তাঁদের জানা থাকতে হবে। স্প্রে বা ধোঁয়া দেওয়ার সময় কী গতিতে হাঁটতে হবে, সেটাও একটা জরুরি বিষয়। সুতরাং প্রশিক্ষিত কর্মীর বিকল্প নেই। আর দরকার নিবেদিতপ্রাণ প্রশিক্ষিত সুপারভাইজার। সুপারভাইজার দক্ষ, সৎ ও নিবেদিত হলে অদক্ষ কর্মী বাহিনী দিয়েও কাজ চালানো যায়।
যতই দিন অতিবাহিত হচ্ছে, ততই বাড়ছে মশা। মশার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চায় নগরবাসী। সিটি করপোরেশনের অনেকগুলো কাজ আছে, যেগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা জরুরি। মশক নিধন সে-রকম একটি কাজ। এখানে অবহেলা মোটেই কাম্য নয়। নিয়ম অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশনের ওষুধ ছিটানো কার্যক্রম আরো বেশি জোরালো করা উচিত। লকডাউনের কারণে নগরবাসীর বেশিরভাগ মানুষ ঘরেই অবস্থান করছেন। কিন্তু মশার জ্বালায় তাঁরা সেখানে শান্তিতে বসবাস করতে পারছেন না। এজন্য সিটি করপোরেশনের সমস্ত শক্তি এক করে মশা প্রতিরোধে নামা উচিত বলে নগরবাসী মনে করেন।