‘ওয়ান সিটি টু টাউন‘ স্বপ্নের দ্বার উন্মোচনে চার লেনের বঙ্গবন্ধু টানেল সংযোগ সড়ক প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল শনিবার নিজ বাসা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এই প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করেন। ৪০৭ কোটি টাকার এই প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ ৩ মাস আগে শুরু হলেও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে কাজের গতি আরো বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে আনোয়ারা কালাবিবির দীঘি পর্যন্ত সাড়ে ৮ কিলোমিটার এবং আনোয়ারা উপজেলা সদর হতে কালাবিবির দীঘি পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটারসহ মোট সাড়ে ১১ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণে প্রকল্পটি অর্থনৈতিক বিবেচনায় বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। একটি জাতীয় মহাসড়ক, একটি আঞ্চলিক সড়ক ও বঙ্গবন্ধু টানেল হয়ে এটি চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হবে। পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মাধ্যমে মাতারবাড়ি পাওয়ার হাব, মহেশখালী গভীর সমুদ্র বন্দর ও টেকনাফ স্থলবন্দরের সঙ্গে যুক্ত হবে। কর্ণফুলী টানেল হয়ে যে সড়ক কক্সবাজার যাবে তা কোনো একসময় মিয়ানমার হয়ে প্রসারিত হবে চীনের কুনমিং সিটি পর্যন্ত। মহাপরিকল্পনার আওতায় চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে বিদ্যুৎ হাব। এই নেটওয়ার্ক ধরে মহেশখালীর মাতারবাড়িতে বাস্তবায়িত হচ্ছে এলএনজি টার্মিনাল। চট্টগ্রাম হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বার খুলে দেওয়ার যে স্বপ্ন সরকার দেখছে, সেটির অন্যতম সংযোগ হয়ে উঠবে সাড়ে ১১ কিলোমিটারের বিকল্প সড়কটি।
গতকাল উদ্বোধনের পর সেতুমন্ত্রী বলেন, এই সংযোগ সড়কটি হবে বিশাল অর্থনৈতিক নেটওয়ার্কের মিলনস্থল। প্রকল্পের আওতায় প্রায় সাড়ে ১১ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ ছাড়াও শিকলবাহা, কর্ণফুলী টানেল সংযোগস্থল এবং কালাবিবির দিঘিতে তিনটি ইন্টারসেকশন নির্মাণ করা হবে। সড়কটি কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বাস্তবায়নাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (কর্ণফুলী) টানেল, চায়না ইকোনমিক জোনকে যুক্ত করে পর্যটন নগরী কঙবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।
সূত্র জানায়, ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন কর্ণফুলী টানেলের অর্ধেকের বেশি কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। টানেল নির্মাণের পাশাপাশি সড়ক নেটওয়ার্ক আধুনিকায়নে দ্রুতগতিতে চলছে সংযোগ সড়কের কাজ। গতকাল প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও এর কাজ শুরু হয়েছে ৩ মাস আগে। ইতোমধ্যে শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে চাতরী চৌমুহনী পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের গাছ কেটে রাস্তা প্রশস্ত করার কাজ চলছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ জানান, প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সড়কটির প্রশস্ততা হবে ১৬৫ ফুট। সড়ক নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ আগেই শেষ হয়েছে।
সওজ সূত্র জানায়, শিকলবাহা-আনোয়ারা সংযোগ সড়ক প্রকল্প বাস্তবায়নে পিএবি সড়কের দুই পাশে প্রায় দেড় হাজার গাছ কাটা হয়েছে। পাশাপাশি সড়কের দুই পাশে চলছে সীমানা নির্ধারণের কাজ। রাস্তার বাঁক সোজা করতে কয়েকটি স্থানে ‘পকেট ল্যান্ড‘ অধিগ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে। এজন্য ৭ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করা হতে পারে।
জানা যায়, টানেল সংযোগ সড়কের সাথে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কঙবাজার সড়ক নেটওয়ার্ক সংযুক্ত হবে। ৪শ কোটি টাকার এই প্রকল্পে সড়ক উন্নয়নে ব্যয় হবে ২৯৫ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার সাথে কঙবাজারের দূরত্ব কমবে ৫০ কিলোমিটার। চট্টগ্রামের সঙ্গে কঙবাজারের দূরত্ব কমবে ১৫ কিলোমিটার।
ছয় লেনের এই প্রকল্পে দুই লেন হবে ধীরগতির যানবাহনের জন্য। বাকি চার লেনে চলবে দ্রুতগতির যান। ২০২২ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)।