পৃথিবীর অনেক দেশে যুগে যুগেবহু যুদ্ধ হয়েছে সে যুদ্ধে বহু মারণাস্ত্র ব্যবহার হয়েছে আবার কিছু কিছু অস্ত্র অস্ত্রাগারে সযত্নে রক্ষিত থেকেছে সে অস্ত্রগুলো কোন যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়নি ফলে সে অস্ত্রগুলো অক্ষত চকচকে রয়ে গেছে, সে সকল যুদ্ধে পরাজয়-বিজয়ে এই অস্ত্রগুলোর কোনো অবদানই ছিলনা কিন্তু আজ এদের ইমেজ আকাশচুম্বী এরা হলো ক্লিন ইমেজ অস্ত্র! বাংলাদেশের ৭৫ পরবর্তী ৮০-৯০ দশকের রাজনীতিতে যে সকল রাজনৈতিক নেতাকর্মী রাজপথে লড়াই-সংগ্রাম করেছে জীবন দিয়েছে রক্ত দিয়েছে লাঠি গুলি টিয়ারগ্যাস জেল-জুলুম হুলিয়া নিয়ে লড়াইয়ের ময়দানে সংগ্রাম চালিয়ে গেছে মরতে মরতে যারা বেঁচে গেছে তারা ক্ষতবিক্ষত হয়েছে তাদের কেউই অক্ষত নয়। তাদের জীবনে কোন না কোন আঘাত এসেছে তারা কোন না কোন ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে বারে বারে। রাজনীতিবিদরা মামলার শিকার না হলে হামলার শিকার না হলে আহত রক্তাক্ত ষড়যন্ত্র সমালোচনা চক্রান্ত কলঙ্কের শিকার না হলে নাকি অলংকৃত হয়না। মামলা হামলা লাঠি গুলি টিয়ারগ্যাস এগুলো নাকি রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর অলংকার স্বরূপ, নারীকে যেমন অলংকার না পরলে মানায়না, মামলা হামলা লাঠি গুলি টিয়ার গ্যাস ষড়যন্ত্র সমালোচনা কলঙ্কের শিকার না হলে নাকি রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের সৌন্দর্যবর্ধন হয়না এটা কি প্রতারণা নয়। জীবন যৌবন রাজপথে কাটিয়ে অনেক লড়াই সংগ্রাম শেষে আজ যখন ন্যায্য রাজনৈতিক অধিকারের কথা আসে তখন কেন সেদিনের সেই কথাগুলো আসে না? আসে ক্লিন ইমেজের কথা!
যুদ্ধে অব্যবহৃত অস্ত্রের মতো যাদের কখনো রাজপথে দাঁড়াতে হয়নি মিছিল স্লোগান দিতে হয়নি মামলা হামলার শিকার হতে হয়নি যাদের পুলিশের সেনাবাহিনীর থ্রি নট থ্রি রাইফেলের সামনে দাঁড়াতে হয়নি আজ সেই সকল সুবিধাভোগীরা এই ক্লিন ইমেজ এর ফাঁকফোকর দিয়ে প্রবেশ করে দলের ভেতরে জায়গা করে নিচ্ছে। ভোগ করছে দলীয় সুযোগ-সুবিধা ও বড় বড় পদ পদবী। আর ৭৫ পরবর্তী ৮০-৯০ দশকের রাজপথের সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা যারা বারে বারে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে সর্বস্ব হারিয়েছে। সেই সকল ত্যাগীরা বর্তমান রাজনীতির কঠিন বাস্তবতায় দুঃখজনকভাবে হেরে যাচ্ছে দুচোখে অশ্রু আর বুকে দহন নিয়ে স্বৈরাচার জোট সরকার বিরোধী আন্দোলনে বিজয়ীরা আজ পরাজয়ের গ্লানি টানছে আর নীরবে-নিভৃতে কাঁদছে। আজ কোথায় আমাদের সেই নেতারা যারা বলেছিলেন মামলা হামলা জেল-জুলুম লাঠি-গুলি, টিয়ার গ্যাস ষড়যন্ত্র চক্রান্ত সমালোচনা কলঙ্ক এই সবই রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর অলংকার! তবে কেন আজ কেড়ে নেওয়া হচ্ছে ৮০-৯০ দশকের সাবেক ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের রাজনৈতিক অধিকার। এটা নিদারুণ রসিকতা বা তিরস্কার নয় কি?