করোনা পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হওয়ায় সাধারণ মানুষের উদ্বেগ আরও ঘনীভূত হচ্ছে। অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতির দিকে না থাকিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খোলার সুযোগ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন নগরীর বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, আমরা সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছি। প্রশাসন আমাদের জানিয়েছে, দোকান খোলার বিষয়ে সরকার বৃহস্পতিবার (আজ) সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তাই আমরা পূর্বনির্ধারিত বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি স্থগিত করেছি। আমরা করোনায় না মরলেও কিন্তু অনহারে মরে যাবো। সারাদেশে ৪ কোটি দোকান কর্মচারী আছে। মার্কেট বন্ধ থাকলে কোনো মালিক কর্মচারীদের এক টাকাও বেতন দিতে পারবেন না। আমরা তো সরকারের কাছ থেকে ট্যাক্স মাফ পাইনি। গত বছর করোনার কারণে ঈদ বাজার হারিয়েছিলাম। এবার সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ঋণ করে অনেক ব্যবসায়ী বিনিয়োগ করেছেন। তাই সরকারকে অবশ্যই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দোকান খোলার অনুমতি দিতে হবে। এদিকে দোকান খোলার দাবিতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন টেরি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান এ প্রসঙ্গে বলেন, গত বছরের করোনার ক্ষতি আমরা এখনো পুষিয়ে নিতে পারিনি। তাই এবারও যদি ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে না পারে, তবে মরা ছাড়া আমাদের হাতে আর কোনো উপায় থাকবে না। আমাদের দাবি, অন্তত নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হলেও টেরিবাজার লাকডাউনের আওতামুক্ত রাখা হোক। আমরা অন্তত সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ব্যবসা করার সুযোগ চাই।
সানমার ওশান সিটি ও নাসিরাবাদের ফিনলে স্কয়ার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আসাদ ইফতেখার বলেন, রমজানকে কেন্দ্র করে আমরা ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলেছি। আর এই মুহূর্তে সরকার আমাদের লকডাউনের গ্যাঁড়াকলে ফেলে দিল। গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্প কারখানা যদি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে চালানো যায়, তাহলে আমাদের দোষ কী? গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় জিইসি মোড়ে দেখলাম, ভ্যান গাড়িতে করে হকাররা প্যান্ট শার্ট বিক্রি করছেন। এছাড়া আজ (গতকাল) থেকে সিটি এলাকায় গণপরিবহনও চালু করে দেয়া হয়েছে। এখন সবখানে লোকে লোকারণ্য। গত বছর আমরা সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখিয়ে একদিনের জন্যও মার্কেট চালু করিনি। কিন্তু এবার আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।
তামাকুমন্ডি লেইন বণিক সমিতির সভাপতি আবু তালেব বলেন, শুধুমাত্র তামাকুমন্ডি লেইনে ১১০টি মার্কেট আছে। এখানে ছোট বড় প্রায় ১৪ হাজার দোকান রয়েছে। এসব দোকানের ব্যবসায়ী কর্মচারী মিলে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ কাজ করে। গত বছরের করোনার ক্ষয়ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। সারা বছর ব্যবসা হয় কেবল রমজান মাসে। তামাকুমন্ডি লেইনের ২৫ শতাংশ দোকানের ব্যবসা কেবল ঈদকেন্দ্রিক। এবারের লকডাউনের কারণে তারা ব্যবসা করতে না পারে তাহলে নিশ্চিত তাদের পথে বসতে হবে। এছাড়া দোকান খুলতে না পারলে কর্মচারীদের বেতন দেয়া সম্ভব হবে না। একই কথা বলছেন সংগঠনটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুজাম্মেল হক। তিনি বলেন, লকডাউন কোথাও নেই, কেবল মার্কেটের ব্যবসায়ীদের জন্যই লকডাউন। সরকাররকে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে হবে। আমরা সরকারের সহযোগী। সরকারের কাছে দাবি একটাই- নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আমরা ব্যবসার সুযোগ চাই।
জহুর হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফজলুল আমিন বলেন, গত বছর করোনা ভাইরাস আমাদের ব্যবসায়ীদের একপ্রকার নিঃস্ব করে দিয়েছে। সরকারকে অবশ্যই ব্যবসায়ীদের ভাষা বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে আমি মনে করি। কারণ এখানে অনেকগুলো পরিবারের রুটি রুজির বিষয় জড়িত।