মন জুড়ানো পরিবেশ শুরুতেই সাড়া

সুপারমল বালি আর্কেড

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৪ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের প্রথম আন্তর্জাতিক মানের সুপারমল ‘বালি আর্কেড’। গত শুক্রবার এর যাত্রা শুরু হয়। যাত্রা শুরু হতে না হতেই অন্যরকম চিত্র। শুরুতেই সাড়া ফেলেছে। ক্রেতারাও সন্তুষ্ট। করোনা পরিস্থিতির কারণে সুপারমলের সামনে যাতে অযাচিত ভিড় না হয় সেজন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত নিরাপত্তারক্ষী। ক্রেতা-দর্শনার্থীদের প্রবেশগেটে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। হাতে স্যানিটাইজার স্প্রে করার পর প্রবেশে অনুমতি দিচ্ছেন নিরাপত্তারক্ষীরা। ক্রেতারাও শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাকাটা করছেন।
কয়েকজন ক্রেতা বলেন, শুনেছি বালি আর্কেড চট্টগ্রামের প্রথম বিশ্বমানের সুপারমল। সেই আগ্রহ থেকে এসেছি। ভিতরের পরিবেশ দেখে মন জুড়িয়ে গেছে। এছাড়া স্পেসটাও বিশাল। স্বতন্ত্র লেডিস জোন বালি আর্কেডকে বিশেষত্ব দিয়েছে। সিনেপ্লেক্সসহ একই ছাদের নিচে অনেকগুলো সার্ভিস পাচ্ছি। স্বাভাবিকভাবে আমরা খুশি। কারণ চট্টগ্রামবাসী সুপারমলের সেবা আগে পায়নি। গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, পছন্দের পণ্য কিনতে সুপারমলে ছুটে এসেছেন তরুণ-তরুণীরা। অনেকে এসেছেন পুরো পরিবার নিয়ে। সবার মুখে মাস্ক। ক্রেতাদের বিভিন্ন ফ্লোরে ঘুরে পছন্দের জামা-কাপড়, জুয়েলারি কিংবা মেবাইল কিনতে দেখা যায়। বিক্রেতারাও হাসিমুখে তাদের সেবা দেন। কেনাকাটা শেষে অনেকে সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখা এবং ফুডকোটের মজাদার খাবারের স্বাদ নেন।
বালি আর্কেডে আসা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাজরিন হাসপিয়া রুশমি বলেন, কয়েকদিন ধরে ফেসবুক প্রচারণার কারণে বালি আর্কেডে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এসেই নতুনত্বের স্বাদ পেলাম। স্বতন্ত্র লেডিস জোন পছন্দ হয়েছে। চট্টগ্রামের আর কোনো মার্কেটে এই সুবিধা নেই। অনেক সময় আমরা পুরুষ বিক্রেতাদের কাছ থেকে জামা কিনতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না। একজন নারীর রুচিবোধ সম্পর্কে একজন নারীই ভালো বোঝেন।
‘স্পার্ক গিয়ার’ শো-রুমের অফিস ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের ম্যানেজার মো. আবদুর রউফ বলেন, বালি আর্কেডে আমরা ব্র্যাঞ্চ ওপেন করেছি। ক্রেতা সন্তুষ্টিই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। ২ এপ্রিল থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত কেনাকাটায় আমরা ২০ শতাংশ মূল্য ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের শো-রুমে সব ধরনের জেন্টস আইটেম ছাড়াও লেডিস আইটেমেরও সমাহার রয়েছে। ঈদকে কেন্দ্র করে ফ্যাশন সচেতন নারী-পুুরুষের জন্য ফ্যাশনেবল অনেক কালেকশন এনেছি। ঢাকায়ও আমাদের শো-রুম আছে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, আমাদের পোশাকের কালেকশন চট্টগ্রামের রুচিশীল ক্রেতাদের পছন্দ হবে। ঢাকায় ক্রেতাদের পছন্দ ও ট্রেন্ডকে প্রাধান্য দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।
স্পার্ক গিয়ারের ব্যবস্থাপক আবুল খায়ের বলেন, উদ্বোধনের পর থেকেই ভালো সাড়া পাচ্ছি। ক্রেতারা ভালো মানের পণ্য চান। আমরাও ক্রেতাদের চাহিদা বিবেচনায় ভালো ভালো জামা-কাপড়ের সংগ্রহ নিয়ে এসেছি।
বালি আর্কেডের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, করোনাকালীন শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করছি। ক্রেতাদেরও স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য উদ্বুব্ধ করছি। চট্টগ্রামের অত্যাধুনিক সুপারমল বালি আর্কেডের অংশ হতে পেরে আমরা গর্বিত। শুধুমাত্র সুপারমলের স্থাপত্যশৈলী ও ভিতরের কারুকাজ দেখার জন্যও অনেক আসছেন। মাত্র উদ্বোধন হয়েছে, এর মধ্যে ক্রেতাদের ভিড়। নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতারা কেনাকাটা করতে আসছেন। আমাদের বিশ্বাস, এখানে যারা একবার আসবেন তারা বারবার আসবেন।
জানা গেছে, শেঠ গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান শেঠ প্রপার্টিজ লিমিটিডের একটি সিগনেচার প্রকল্প হিসেবে বিশ্বমানের সুবিধা নিয়ে নান্দনিকতায় নির্মিত হয়েছে এই সুপারমলটি। দুটি বেইজম্যান্ট কার পার্কিংসহ ১৪ তলার স্বয়ংসম্পূর্ণ বাণিজ্যিক কমপ্লেঙ হিসেবে প্রকল্পটি নির্মিত হয়েছে চকবাজারের সিরাজুদ্দৌলা রোডে। বালি আর্কেডে সিনেপ্লেঙ, ফুডকোট, কনভেনশন হলসহ মোট ২৫০টি শপ, শো-রুম এবং ডিসপ্লে সেন্টার রয়েছে। বিশ্বমানের আর্কিটেকচারাল ডিজাইনে নির্মিত এই প্রকল্পে রয়েছে ৩০ হাজার বর্গফুটের বৃহৎ এমিউজমেন্ট পার্ক, ৩টি সিনেপ্লেঙের সাথে রয়েছে চট্টগ্রামের প্রথম এবং সর্ববৃহৎ অভিজাত শ্রেণীর ফ্যামিলি এন্টারটেইনমেন্ট ডেস্টিনেশন ‘ক্যাসাব্লাংকা’, সুপারমলে অ্যাপসের মাধ্যমে গাড়ি পার্কিং নিয়ন্ত্রণ, দোকানে পণ্যের বিস্তারিত জানতে এবং অর্ডার করতে পারবেন ক্রেতারা। এছাড়া রয়েছে পৃথক পৃথক কুইজিন বেইস ফুডকোট, স্বতন্ত্র লেডিস জোন, যেখানে ক্রেতা-বিক্রেতা সকলেই নারী। রয়েছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডশপ সম্বলিত মোবাইল ফোন, মোবাইল এঙেসরিজ, কসমেটিক জোন, জেন্টস ব্র্যান্ডশপ, লাইফস্টাইল, পার্লারসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠান ও তাদের শো-রুম। পুরো মল ফ্রি ওয়াইফাই জোনের আওতাভুক্ত। বিজ্ঞাপনসহ বিভিন্ন ভিডিও কনটেন্ট প্রদর্শনে মলের সম্মুখে স্থাপন করা হয়েছে ১১শ বর্গফুটের দুটি জায়ান্ট স্ক্রিন। সুপারমলের চকবাজার তেলিপট্টি মোড় থেকে দক্ষিণে টাক শাহ মিয়ার মাজার ও পশ্চিমে কেয়ারীসহ সমস্ত এলাকা সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত থাকবে।
শেঠ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোলায়মান আলম শেঠ বলেন, চট্টগ্রামে একটি আন্তর্জাতিক মানের সুপারমল করার চিন্তা থেকেই আমরা এটি নির্মাণ করেছি। বালি আর্কেড শেঠ পরিবারের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামের মানুষকে উপহার দিয়েছি। এখানে এসে ক্রেতারা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ড স্টোর থেকে পছন্দসই কেনাকাটা করতে পারবেন। এছাড়া বালি আর্কেডে রয়েছে লেডিস শপিং জোন, ফুড কোট, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক এবং লাঙারিয়াস লাউঞ্জ। মোট কথা হচ্ছে, আমরা একই ছাদের নিচে অনেকগুলো সেবা নিশ্চিত করেছি।
উল্লেখ্য, মরহুম আজিজুর রহমান চৌধুরীর একমাত্র কন্যা, মরহুম মাহাবুবুল আলম শেঠের (বাচ্চু নবাব) স্ত্রী মরহুমা সখিনা বেগমের (বালি) নামে সুপারমল বালি আর্কেডের নামকরণ করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিসিটিভির বাইরে ৫ কেজি ওজনের মরা আঁইড়
পরবর্তী নিবন্ধজাটকা ইলিশ সংরক্ষণে সরকার বদ্ধপরিকর : প্রধানমন্ত্রী