চট্টগ্রামে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের এক বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। গতবছর ঠিক সময়ে একরকম অসহায়ত্ব লক্ষ্য করা গেছে এখানকার করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায়। তখন হাসপাতালে ছিল শয্যা সংকট। অভাব ছিল আইসিইউ বেডের। মাঝখানে সংক্রমণের হার কমলেও এখন ঊর্ধ্বমুখি। বলা হচ্ছে, এখন চলছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। ফলে প্রশ্ন ওঠেছে, এক বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে দ্বিতীয় ধাপে করোনা চিকিৎসায় কতটুকু প্রস্তুত চট্টগ্রাম?
চিকিৎসা সেবার প্রস্তুতি বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর দৈনিক আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রামে সংক্রমণের হার ২০ শতাংশের কাছাকাছি, যা সারা দেশে ২৩। চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমাদের প্রস্তুতি আছে। যদি প্রস্তুতি না থাকতো তাহলে তো এখনই অবস্থা বেহাল হতো। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১৫০ শয্যা আছে। সেখানে ৭৩ জন ভর্তি আছে, বাকিগুলো খালি আছে। সংক্রমণ বাড়ছে ঠিকই। মানুষ সুস্থ হয়ে বাড়িও যাচ্ছে।
তিনি বলেন, যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে তা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আমরা সবসময় ঝুঁকির মধ্যে থাকবো। তাই সংক্রমণ কমাতে হবে। সংক্রমণ কমানোর জন্য সরকারের ১৮ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে জোর দিচ্ছি। আমরাও বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। প্রাথমিক পর্যায়ে সন্ধ্যা ৬ টার পর থেকে রেস্টুরেন্ট এবং শপিং মল বন্ধ রাখার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কার্যকর করার জন্য জেলা প্রশাসক নির্দেশনা জারি করেছেন। আগামীকাল (আজ) থেকে এটা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। কক্সবাজার ও পার্বত্য জেলাগুলোর পর্যটন স্পট নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। আমাদের এসব সিদ্ধান্তগুলো ঢাকায়ও প্রশংসিত হয়েছে। তারা বলছে, চট্টগ্রামে সম্ভব হলে ঢাকায় হবে না কেন?
চট্টগ্রামে প্রস্তুত থাকা করোনা চিকিৎসার শয্যা বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, সরকারি হাসপাতালে প্রায় ৬০০ বেড আছে। আইসিইউ মেশিনই আছে ৭৫টি, বেড ধরলে আরো বেশি হবে। আউসিউ মেশিনের উপর খুব বেশি নির্ভরশীল না আমরা। বেশি থাকলেও লাভ হয় না। বেশি দরকার হয় অক্সিজেনের। আমরা বেডে ‘হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা’ রাখছি। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ২৩টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা আছে। আবার সবগুলোর ব্যবহারও সবসময় দরকার হয় না। কারণ এটার ব্যবহার নির্ভর করে পালস অক্সিমিটারের উপর।
তিনি বলেন, আমরা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চিন্তা করছি। নিয়ন্ত্রণ করা না গেলেই বিপদ। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লে হাসপাতালে চাপ বাড়বে। তখন সমস্যা হতে পারে।
গতবার অনেকগুলো আইসোলেশন সেন্টার গড়ে উঠেছিল। এবার তেমন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইসোলেশন সেন্টারের দরকার হচ্ছে না। এবার হাসপাতালগুলোতে জায়গা আছে। গতবার তো শুরুতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও ভর্তি করা হয়নি, জুনের ২১ বা ২২ তারিখের দিকে এসে ভর্তি শুরু হয়। বেসরকারি হাসপাতালেও প্রথম দিকে ভর্তি করায় নি। আমরা মেবাইল কোর্ট পর্যন্ত পরিচালনা করেছিলাম। সেটা কিন্তু ওই সময় ঢাকাতেও পারেনি। বর্তমানে বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড ও নন-কোভিড ভাগ করা আছে। সবমিলিয়ে আমরা ভাল অবস্থায় আছি।
এ স্বাস্থ্য পরিচালক বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে এবার অবহেলা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নির্দেশনা মানছেন না। টিকা দিয়েও অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে। তারা মনে করছেন, টিকা দিয়েই নিরাপদ হয়ে গেছেন। তাই স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সমস্যা নাই। এক্ষেত্রে তাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। আমরা বার বার সচেতন করার চেষ্টা করছি। নিজেরা যদি না বুঝে তা হলে সমস্যা বাড়বে। আসলে তারা তখনি বুঝবেন যখন আপজনের ক্ষতি হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা সেটা চাই না। আশা করছি, আমরা যেসব উদ্যোগ নিয়েছি সেগুলো কার্যকর করা গেলে সংক্রমণ পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।