একতার মাধ্যমে পৃথিবীতে এমন কোন কর্ম নেই যা নিস্পন্ন করা সম্ভব নয়। অতি ক্ষুদ্র বালু কণার সমবায়ে গড়ে উঠে দেশ মহাদেশ। যে দেশ ও জাতির মধ্যে ঐক্যের অভাব পরিলক্ষিত হয়, সেই দেশ বা জাতি বর্হিঃশত্রুর আক্রমণ মোকাবেলা করতে পারে না। ইংরিজেতে প্রবাদ আছে ুটহরঃবফ বি ংঃধহফ ফবারফবফ ধৎব ভধষষচ বিশেষ শিশুদের সামাজিক অবস্থান দৃঢ় করতে হলে, সামাজিক ঐক্যের কোন বিকল্প নেই।
মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হলেও সে কখনো একক ভাবে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারেনা। শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের পিছনে রয়েছে অন্য কারও অনুপ্রেরণা, সহযোগিতা, কিংবা উপদেশ, আদেশ- নির্দেশ। বিশেষ শিশুদের সামাজিক শিক্ষার ক্ষেত্রেও প্রয়োজন সমাজের দলবদ্ধ সহানুভূতি পূর্ণ, সহযোগিতামূলক মনোভাব। মানুষ সমাজে একত্রে বসবাস করতে গিয়ে একে অপরের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠাই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ জীবের যথার্থতা। যে কোন কঠিন সমস্যা মোকাবেলা, দুর্যোগ, কিংবা নিয়তির নির্মম পরিহাসের শিকার হলে সবচেয়ে আগে প্রয়োজন সহিষ্ণুতা ও সচেতনতা বৃদ্ধি। সমস্যা মোকাবেলার প্রথম ধাপ সচেতনতা। কারণ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম পন্থা। বিশেষ শিশুগুলোর জন্মগত স্নায়ুবিক ক্রটি থেকে তাদের মধ্যে কম বেশী আচরণ গত সমস্যা বিদ্যমান থাকে। কিন্তু বিশেষ শিশুদের বিশেষ অধিকার বিবেচনায় তারা সমাজেরই মূল অংশ। তাই তাদের চলার পথকে কঠিন না করে মসৃণ করার দায়িত্ব সমাজের বিবেকবান প্রত্যেকটি মানুষের উপর বর্তায়। সহযোগিতা মূলক আচরন যেমন তাদের শ্রেষ্ঠত্বের দ্বার প্রান্তে নিয়ে যায় আবার অসহযোগিতা পূর্ণ আচরণ তাদেরকে এবং তাদের পরিবার সহ কোনঠাসা করে ফেলে। চলার গতিকে সীমিত করে। বিশেষ শিশুদের নাগরিক মৌলিক অধিকার রয়েছে। পরিবারের সদস্যরা সেই অধিকার আদায়ের পরিপ্রেক্ষিতে শিশুকে সামাজিকতা শিখাতে চেষ্টা করে। কিন্তু সেই ক্ষেত্রে অপরিহার্য হয়ে পড়ে, সামাজিক দলবদ্ধ সু-আচরণ ও সচেতনতা। মৌলিক চাহিদা গুলোর পাশাপাশি তাদের জন্য প্রয়োজন বিনোদন, খেলাধুলা, সংস্কৃতি, যাতায়াত প্রক্রিয়ার সুবিধাকরণ, পুনর্বাসন। কিন্তু সমাজের সচেতনতার অভাব থাকলে তারা সেই অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত হবে। তাই আজ দৃঢ় কন্ঠে উচ্চারিত করতে চাই সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির কোন বিকল্প নাই। কারণ, এর কুফল বিবেচনা করলে দেখা যাবে, তাদেরকে অবহেলার প্রভাব প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমাজ সর্বপরি রাষ্ট্রের উপরই বর্তাবে। ভবিষ্যৎ এ একটি পূর্ণাঙ্গ উন্নত জাতির জন্য প্রয়োজন পিছিয়ে পড়া জন গোষ্ঠীকে মানব সম্পদে রূপান্তর করা। বিশেষ শিশুদের মধ্যে বিশেষ দক্ষতা থাকে, এই বিষয়টা গোটা বিশ্বের চিত্র দেখলেই বোঝা যায় যা তারা প্রমাণ করতে পেরেছে। তাই তাদের দক্ষতাকে আড়াল করে, নিরাশার চাদরে আবৃত করার কোন সুযোগ নাই।
তবে, সবচেয়ে মূল্যবান সত্যি কথা হল, সচেতনতাই পারে পরিবার গুলোর মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করতে। যার সুফল ভোগ করে বিশেষ শিশুরা দক্ষতা অর্জনে এগিয়ে যেতে পারবে। একতা প্রদর্শন করে পরিবার গুলোর লোক লজ্জার ভয় কাটানোর দায়িত্ব সমাজের উপর বর্তায়। যুগে যুগে উদাহরণ হিসাবে উন্নত দেশগুলো দেখাচ্ছে। তাদেরকে সামাজিক মর্যাদা না দিয়ে মেরুদ- শক্ত রাখা যাবে না। কারণ স্নায়ুবিক সমস্যা নিয়ে জন্মানো মানুষগুলো বোবা হয়ে থাকলে, একটি জাতির উন্নতি পূর্ণতা পাবে না। বিশেষ শিশুদের ভেতরের সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত করার সুযোগ সৃষ্টি করলে তারা অভাবনীয় সফলতা দেখাতে পারে। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির সুফলই তাদের প্রতিকারের প্রথম এবং শেষ ধাপ। পরিশেষে জাতির প্রতি বিশেষ শিশু ও পরিবারের পক্ষ থেকে আকুতি জানাই, দেশ ও জাতির কল্যাণের স্বার্থে এবং তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও পুনর্বাসনের সুবিধার্থে, ভুক্তভোগী পরিবার গুলোর সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে, মানবতার কোটি কোটি হাত এক যোগে কাজ করলে, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের ‘বিশেষ দিবস’ পালন করা হবে ৩৬৫ দিনই।