নগরে আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে না বইমেলা। সাত মাস পিছিয়ে নভেম্বর মাসে বইমেলা আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক)। এর আগে পূর্ব নির্ধারিত তারিখ থেকে ছয়দিন পিছিয়ে আগামীকাল বইমেলা উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণ করেছিল সংস্থাটি। সর্বশেষ গতকাল শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় মেলা পেছানোর কথা জানান মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
মেলার প্রস্তুতি তুলে ধরার জন্য আন্দরকিল্লা নগর ভবনে বিকেল সাড়ে ৩টায় আয়োজন করা হয় সংবাদ সম্মেলন, যা নির্ধারিত সময়ের প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত সংবাদ সম্মেলন রূপ নেয় মতবিনিময় সভায়। শুরুতে রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ২৩ মার্চ বইমেলা শুরুর কথা ছিল। আমরা সব আয়োজন শেষ করেছি। অনিবার্য কারণে সেটা পিছিয়েছে। দেশে দিন দিন করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে। কোনো ব্যাপারে যেন বইমেলা প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে। তাই আজকে সবাই যে পরামর্শ দেবেন সে আলোকে বইমেলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
মেয়রের সূচনা বক্তব্যের পর প্রকাশকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজন তাদের মতামত তুলে ধরেন। এদের কেউ বর্তমান পরিস্থিতিতে বইমেলা না করার এবং অনেকে তারিখ পেছানোর প্রস্তাব দেন। কেউ কেউ আবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে বইমেলা পূর্বনির্ধারিত তারিখে শুরু করার পরামর্শ দেন। পরে মেয়র বলেন, আমি মেলা বন্ধ করার পক্ষপাতি নই। পরিস্থিতি বিবেচনায় তারিখ পিছিয়ে দেয়া যায়। তিনি বলেন, আজকে সবার পরামর্শে এ সিদ্ধান্ত হলো, মেলা নভেম্বর মাসের মাঝমাঝি থেকে বিজয় মেলার আগ পর্যন্ত সময়ে আয়োজন করা হবে।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, কোভিড নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসন বিভিন্ন নির্দেশনা জারি করেছে। বইমেলার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলাম আমরা। অন্যবারের চেয়ে সুন্দর ও সমৃদ্ধ করতে চেয়েছি বইমেলা। পরিবেশ, পরিস্থিতি ও আপনাদের আলোচনার ভিত্তিতে বলছি, বইমেলা পিছিয়ে দিতে হচ্ছে।
বলাকা প্রকাশনের স্বত্ত্বাধিকারী জামাল উদ্দিন বলেন, ঢাকার বইমেলায় কর্মচারী ছাড়া পাঠক নেই বললেই চলে। আগে যেখানে দিনে ৫০ হাজার টাকা বিক্রি হতো এখন সেখানে দুই হাজার টাকাও হচ্ছে না। ৮-১০ জন স্টাফ আছে, যে বিক্রি হচ্ছে তা দিয়ে নাশতার পয়সাও হচ্ছে না। তিনি ঈদের পর এক মাসব্যাপী বইমেলা করার প্রস্তাব দেন।
তিনি বলেন, প্রকাশকদের সাথে কথা বলেছি। তারা দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে শুরু করলেও সরকার থেকে বন্ধের নির্দেশনা আসলে আর্থিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা করছেন। তারচেয়ে ঈদের পর শুরু করার পক্ষে তারা।
আবীর প্রকাশনের স্বত্ত্বাধিকারী নুরুল আবছার বলেন, দিন দিন প্রেক্ষাপট খারাপের দিকে যাচ্ছে। ঢাকায় আমার স্টল আছে। পাঁচ হাজার টাকাও বিক্রি হয়নি। বর্তমান অবস্থায় বইমেলা করা উচিত হবে না।
অধ্যাপক মাসুম চৌধুরী বলেন, প্রাণের বইমেলা বলা হয়, এখন সে প্রাণ নাই। তাই মেলা পিছিয়ে দেয়া উচিত।
বইমেলা মিডিয়া উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও লেখক শুকলাল দাশ বলেন, কোভিড মোকাবিলায় নিজের সচেতনতাটাই প্রধান। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেলা করা যায়। বিশ্বজিৎ পালও মেলা শুরুর পরামর্শ দেন।
বইমেলা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও চসিক কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু বলেন, বইমেলাকে ঘিরে ওয়েবসাইট করেছি। আজ সেটা উদ্বোধনের কথা ছিল। আমার মনে কষ্ট, প্রথমবার দায়িত্ব পেলাম, কিন্ত নানা কারণে মেলা পিছিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, জিমনেশিয়াম মাঠে উন্নয়ন মেলা হচ্ছে। সেখানে যে অবকাঠামো তা অপসারণ করে মেলা উপযোগী করতে কমপক্ষে এক থেকে দুইদিন সময় লাগবে। এরপর ৩০ মার্চ শুরু করলেও রমজানের কারণে মেলার সময় কমে যাবে। এতে তো প্রকাশকরা তাদের বিনিয়োগ তুলে আনতে পারবেন না। তিনিও মেলা পেছানোর কথা বলেন।
মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও চসিক প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া বলেন, মেলা না হলেও সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক ক্ষতি হবে। আমরা লিফলেট ছাপিয়ে ফেলেছি। প্রচারের জন্য রেকর্ডিং সম্পন্ন করেছি। স্টল করে ফেলেছি। আমরা সব প্রস্তুতিই নিয়েছি।
তিনি বলেন, অতিথিদের সাথে যোগাযোগ করেছিলাম। তারাও কোভিডের কারণে আসতে চাচ্ছেন না। দর্শক আনতে পারবো কিনা সেটা নিয়েও চিন্তিত। আবার হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় কিনা সেটা নিয়েও চিন্তা করতে হচ্ছে।
এ সময় বক্তব্য দেন কবি হোছাইন কবির, আ ফ ম মোদাচ্ছের আলী, বিশ্বজিৎ পাল, দেওয়ান মকসুদ, মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত হোসেন, দীপেন চৌধুরী আল রহমান। উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক ও রুমকি সেনগুপ্ত।
প্রসঙ্গত, নগরের এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে গত দুই বারের ন্যায় এবারও চসিকের ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত উদ্যোগে বইমেলা হওয়ার কথা ছিল। গত ২ মার্চ বইমেলাকে ঘিরে আন্দরকিল্লা নগর ভবনে সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ, সাহিত্যিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং অন্যান্য শিল্প-সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে জড়িতদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। ওইদিন ২৩ মার্চ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বইমেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পরে ২০ মার্চ জেলা প্রশাসন চসিককে জানায়, ২৭ ও ২৮ এপ্রিল জিমনেশিয়াম মাঠে উন্নয়ন মেলা করবে তারা। পরে ২১ মার্চ বইমেলা বাস্তবায়ন কমিটির জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল ২৯ মার্চ মেলা শুরু হবে।