বাংলাদেশ পরিবর্তনের নজির, ভারত সহযোগী : মোদী

বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঙালির সংগ্রামেরই ইতিহাস

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ২৮ মার্চ, ২০২১ at ৭:৪৮ পূর্বাহ্ণ

অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বাঙালির যে দীর্ঘ ত্যাগ আর সংগ্রামের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনকে তারই প্রতিচিত্র হিসেবে বর্ণনা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গতকাল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে জাতির পিতার সমাধিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর মোদী দর্শনার্থী বইয়ে এভাবেই বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করেছেন।
গতকাল গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দিতে গিয়ে মতুয়া সমপ্রদায়ের মন্দিরে পূজা দিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বে বিকাশ ও পরিবর্তনের শক্তিশালী উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ভারত এই প্রচেষ্টায় সহযাত্রী।
টুঙ্গিপাড়ায় তিনি লিখেছেন, অধিকার, নিজস্ব সংস্কৃতি ও আত্মপরিচয়ের জন্যে বাংলাদেশের মানুষের যে সংগ্রাম, বঙ্গবন্ধুর জীবন তারই প্রতিচিত্র। তার অবিনাশী চেতনা আর অদম্য সাহস কোটি মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে, বহু বাধা বিপত্তি পেরিয়ে তারা পরিণত হয়েছে বিজয়ী জাতিতে। খবর বিডিনিউজের।
সমাধি সৌধ কমপ্লেঙে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুল দিয়ে মোদীকে স্বাগত জানান। বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার উপস্থিতিতে দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করে মোদী সমাধিসৌধ কমপ্লেঙ পরিদর্শন করেন এবং একটি গাছের চারা রোপণ করেন।
দর্শনার্থী বইয়ে তিনি লেখেন, ভারতবাসী বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে একজন বীর হিসেবে, সেই ভারতবাসীর পক্ষে আমি ২০ শতকের এই মহান রাষ্ট্রনেতার প্রতি বিনীত শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম, যে ইতিহাসকে তিনি নতুন রূপ দিয়েছেন দৃঢ় সঙ্কল্প আর আত্মত্যাগের প্রবল শক্তি দিয়ে।
মোদী লিখেছেন, এই ঐতিহাসিক মুজিববর্ষে আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বঙ্গবন্ধুর দিয়ে যাওয়া সাম্য, মুক্তি আর ন্যায়বিচারের চেতনা আমাদের ভবিষ্যতেও পথ দেখিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ পরিবর্তনের নজির, ভারত সহযোগী : বাংলাদেশকে বিশ্বে বিকাশ ও পরিবর্তনের শক্তিশালী উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ভারত এই প্রচেষ্টায় সহযাত্রী। তিনি গতকাল শনিবার গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দিতে গিয়ে মতুয়া সমপ্রদায়ের মন্দিরে পূজা দিয়ে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ভারত আজ সকলের সাথে, সকলের বিকাশ এবং সকলের বিশ্বাস-এই মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ এতে সহযাত্রী। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের সামনে বিকাশ আর পরিবর্তনের একটি শক্তিশালী উদাহরণ পেশ করছে। সেই প্রচেষ্টায় ভারত আপনাদের সহযাত্রী। আমার বিশ্বাস আছে, শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের আশীর্বাদে গুরুচাঁদ ঠাকুরের প্রেরণায় আমরা দুই দেশে একবিংশ শতকের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নিজেদের লক্ষ্য পূরণ করব। ভারত এবং বাংলাদেশ উন্নতি ও প্রেমের পথে বিশ্বে পথপ্রদর্শন করতে থাকবে।
টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কাশিয়ানীতে মতুয়া সমপ্রদায়ের তীর্থস্থান ওড়াকান্দি মন্দিরে পৌঁছান ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি মতুয়াবাদের প্রবক্তা হরিচাঁদ ঠাকুর ও তার ছেলে গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে পূজা দেন এবং পরে এই সমপ্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে অংশ নেন। তিনি বলেন, একভাবে এই স্থান ভারত ও বাংলাদেশের আত্মিক সম্পর্কের তীর্থস্থান।
মোদী বলেন, এই দিনের এই পবিত্র মহূর্তের প্রতীক্ষা আমার বহু বছর ধরে ছিল। ২০১৫ সালে যখন আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবার বাংলাদেশে আসি, তখনই আমি এখানে আসার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলাম। আমার সেই প্রত্যাশা-কামনা আজ পূর্ণ হলো। আমি নিয়মিতভাবে শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের অনুগামীদের থেকে ভালোবাসা ও স্নেহ পেয়েছি, পরিবারের সদস্যদের ঘনিষ্ঠতা পেয়েছি। আর যেভাবে দুই দেশের সরকার ভারত-বাংলাদেশের স্বাভাবিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করছে, সাংস্কৃতিকভাবে এই কাজই ঠাকুরবাড়ী এবং শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের বার্তা বহু দশক ধরে করে আসছে। একদিকে এই স্থান ভারত ও বাংলাদেশের আত্মিক সম্পর্কের তীর্থক্ষেত্র। আমাদের সম্পর্ক মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক। মনের সঙ্গে মনের সম্পর্ক।
মোদী বলেন, ভারত এবং বাংলাদেশ নিজেদের বিকাশ ও প্রগতির চেয়ে সমগ্র বিশ্বের উন্নতি দেখতে চায়। উভয় দেশই পৃথিবীতে অস্থিরতা, সন্ত্রাস এবং অশান্তির পরিবর্তে স্থিতিশীলতা, প্রেম এবং শান্তি চায়। এই শিক্ষাই শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর আমাদের দিয়েছেন। আজ সমগ্র বিশ্ব যে মূল্যবোধের কথা বলে, মানবতার যে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে, সেই মূল্যবোধের জন্য হরিচাঁদজী নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন।
পশ্চিমবাংলায় ঠাকুরনগর সফরে মতুয়া সমপ্রদায়ের সঙ্গে সময় কাটানোর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন মোদী বলেন, পশ্চিমবঙ্গের ঠাকুরনগর থেকে বাংলাদেশের ঠাকুরবাড়ি পর্যন্ত একই রকমের শ্রদ্ধা রয়েছে। একই রকমের আস্থা রয়েছে। একই রকমের অনুভূতি রয়েছে।
মোদী বলেন, আজ সব ভারতবাসীর সৌভাগ্য যে তারা এখানে বাংলাদেশে শ্রী শ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুরের প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। ওড়াকান্দিতে শিক্ষার অভিযানে এখন থেকে ভারতের জনগণও যুক্ত হবে, ওড়াকান্দিতে মেয়েদের মিডল স্কুল আপগ্রেড করবে, নতুন নতুন সুবিধা প্রদান করবে। ভারত সরকার এখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করবে। এটি ভারতের কোটি কোটি জনগণের পক্ষ থেকে শ্রী শ্রী হরিচাদ ঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। আমি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ, যারা এ কাজে আমাদের সাথে রয়েছে।
বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়ে মোদী বলেন, আমি বাংলাদেশের জাতীয় অনুষ্ঠানে ভারতের ১৩০ কোটি ভাইবোনের পক্ষ থেকে আপনাদের জন্য শুভেচ্ছা নিয়ে এসেছি। আপনাদের সকলকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হওয়ায় অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। গতকাল ঢাকায় জাতীয় দিবস পালনের সময় আমি বাংলাদেশের শৌর্য ও ক্ষমতার এবং সংস্কৃতির অপূর্ব প্রদর্শন দেখেছি, যা এই অপূর্ব দেশ দেখিয়েছে, তার অংশীদার আপনারাও।
তিনি বলেন, আজ ভারত এবং বাংলাদেশের সামনে যে ধরনের একই রকম চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তা সমাধানের জন্য শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের অনুপ্রেরণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুই দেশের একজোট হয়ে প্রত্যেকটি চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করা উচিত। এটি আমাদের কর্তব্য, দুই দেশের কোটি কোটি জনগণের কল্যাণের পথ।
মতুয়া মতবাদের প্রবক্তা হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মস্থান গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানার ওড়াকান্দি। ওই গ্রামের মন্দিরটি পরিচিত মতুয়া সমপ্রদায়ের কাছে সর্বোচ্চ মর্যাদার তীর্থস্থান হিসেবে। ভারত-বাংলাদেশ মিলিয়ে মতুয়া সমপ্রদায়ের অনুসারীর সংখ্যা ৫ কোটির বেশি। এর মধ্যে প্রায় ৩ কোটির বসবাস পশ্চিমবঙ্গে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনাজিরহাট-দোহাজারী ট্রেন চলাচল বন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধভারতের উপর দিয়ে যোগাযোগে জোর বাংলাদেশের