স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে সন্ত্রাসীদের বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিয়েছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল সংলগ্ন নির্মাণাধীন একটি বহুতল ভবনে অভিযান চালিয়ে একজনকে আটক করেছে চান্দগাঁও থানা পুলিশ। স্বাধীনতা পার্ক ও কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রের বিপরীতে নির্মাণাধীন ওই ভবনে আগে থেকে নাশকতাকারীরা অবস্থান করছিল বলে জানায় পুলিশ। ঘটনাস্থলে প্রায় দেড় শতাধিক মশাল ও বস্তাভর্তি বোমা সদৃশ বস্তু রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে রাতের বেলায় বোম ডিসপোজাল ইউনিটের বোমা নিষ্কৃয়করণ অভিযান চালানো হয় না, তাই ঘটনাস্থলে ক্রাইমসিন নির্দেশক দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। রাত সাড়ে ১১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছেন। ঘটনার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ করছে বলে জানা গেছে। আটক যুবকের নাম রাব্বী বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সরেজমিনে জানা গেছে, নগরীর চান্দগাঁও বাস টার্মিনালের পূর্ব পাশে বসুধা বিল্ডার্সের নির্মাণাধীন ভবনে সন্ত্রাসীরা নাশকতার পরিকল্পনা করছে, এমন সংবাদের ভিত্তিতে সন্ধ্যার পর প্রাথমিকভাবে অভিযান চালায় চান্দগাঁও থানা পুলিশ। এসময় পুলিশ এক যুবককে আটক করে। এসময় ভবনের তিন তলার একটি কক্ষে প্রায় দেড়শ মশালের পাশাপাশি বোমাসদৃশ বস্তুভর্তি বস্তা থাকার কারণে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটকে খবর দেওয়া হয়। এরপর সিএমপির বেশ কয়েকটি ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থলে যোগ দেয়। যোগ দেয় র্যাব-৭ এর চান্দগাঁও টিমও। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পুরো বিল্ডিংটি ঘিরে তল্লাশি চালান।
রাত সোয়া ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে চান্দগাঁও থানার ওসি মো. মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘সন্ধ্যার পর গোপন সংবাদের মাধ্যমে খবর আসে এই বিল্ডিংয়ে সন্ত্রাসীরা ও বিশৃংখলাকারী অবস্থান নিচ্ছে। এরপর আমরা অভিযান চালাই। আমরা যখন বিল্ডিংটিতে প্রবেশের চেষ্টা করি, তখন কয়েকজন পালিয়ে যায়। আমরা একজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। পরবর্তীতে বিল্ডিংটিতে তল্লাশি চালিয়ে আমরা অনেক মশাল দেখতে পাই। দূর থেকে একটি ব্যাগে ককটেল সদৃশ বস্তু আমরা দেখতে পেয়েছি। ইতোমধ্যে সিএমপির বোম ডিসপোজাল ইউনিট এসেছে। তারাও এগুলো দেখতে পেয়েছে। তারা সাসপেক্ট করছে এখানে ককটেল জাতীয় কিছু থাকতে পারে। রাতের বেলা তারা বোমা নিষ্কৃয়করণ কাজ করে না। সকালে তারা এখানে তল্লাশি চালাবেন।’
ওসি বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের খারাপ উদ্দেশ্য ছিল। কারণ পরিত্যক্ত বিল্ডিংয়ে এভাবে জমায়েত হওয়ার কথা নয়। প্রাথমিক তদন্ত চলছে। যাকে আটক করা হয়েছে, তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জিজ্ঞাসাবাদের পর বলতে পারবো, তারা কি কারণে এখানে জড়িত হয়েছে। কারা কারা এখানে জড়িত সেটাও চিহ্নিত করা হবে।’ এর আগে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়া সিএমপির উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার বিজয় বসাক সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভবনটি ঘিরে রাখা হয়েছে। একজন আটক রয়েছে। ওইস্থান থেকে প্রায় দেড়শ’র মতো মশাল উদ্ধার করা হয়েছে।’
তবে ঘটনাস্থলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান ও মহান স্বাধীনতা দিবসকে টার্গেট করে পুরো নগর জুড়ে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা নিয়েছিল সন্ত্রাসীরা। যে কারণে সন্ধ্যার পর তারা জড়ো হয়েছিল। যেখানে জড়ো হয়েছিল, সেটি নির্মাণাধীন একটি বড় বিল্ডিং। দীর্ঘদিন ধরে বিল্ডিংটির নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিল। নাশকতাকারীরা দীর্ঘসময় ধরে এখানে অবস্থান করার লক্ষ্যে বিল্ডিংটিকে বেছে নিয়েছিল। পুলিশ গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের এই পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিয়েছে।’
ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বিদেশী মেহমানরা বাংলাদেশে আসছেন। বিদেশী মেহমানদের কাছে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার লক্ষ্যে একটি প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছিল। এই নাশকতার পরিকল্পনা তারই অংশ কিনা সেটা তদন্তসাপেক্ষে বলা যাবে।’