নানা জটিলতা মোকাবেলা করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কার্যক্রমে গতি এসেছে। তবে তিন শতাধিক বৈদ্যুতিক খুঁটি নতুন মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। বারিক বিল্ডিং থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত রাস্তার উপর থাকা খুঁটিগুলো না সরানোয় এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। খুঁটির জন্য বাদামতলী মোড় থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত এলাকায় প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। খুঁটি সরানোর প্রয়োজনীয় অর্থ প্রদান করছে সিডিএ। কিন্তু বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) কার্যক্রমের দীর্ঘসূত্রতায় ঠিকাদার নিয়োগে বিলম্ব হওয়ায় পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। রমজানের আগে বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে বাদামতলী পর্যন্ত রাস্তার ঘেরা খুলে দেওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করা হলেও খুঁটি সংকটের কারণে তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সন্নিকটস্থ টানেল রোড পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ নানা ধরনের প্রতিকূলতা মোকাবেলা করছে। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের শুরুতে তেমন সমস্যা ছিল না। পরে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় প্রকল্পটি নিয়ে ঝামেলা পোহাতে হয় সিডিএকে।
পাঁচটি পৃথক ধাপে ভাগ করে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে লালখান বাজার-বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত প্রথম ধাপ, বারিক বিল্ডিং-সল্টগোলা ক্রসিং দ্বিতীয় ধাপ, সল্টগোলা ক্রসিং-সিমেন্ট ক্রসিং তৃতীয় ধাপ, সিমেন্ট ক্রসিং-কাঠগড় চতুর্থ ধাপ এবং কাঠগড় থেকে পতেঙ্গার ল্যান্ডিং পয়েন্ট পর্যন্ত পঞ্চম ধাপ চিহ্নিত করা হয়।
এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল শেষ ধাপ থেকে। বর্তমানে ল্যান্ডিং পয়েন্ট থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত দুটি ধাপের (৪র্থ ও ৫ম) কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই দুই ধাপে গার্ডার স্থাপনের কাজ চলছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা গতকাল জানান, ফ্লাইওভারের এই অংশের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের তৃতীয় ধাপ সল্টগোলা থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত অংশের কাজও চলছে। এই অংশটিতে প্রকল্পের কাজ ৬০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।
বর্তমানে প্রকল্পটির বারিক বিল্ডিং থেকে বাদামতলী মোড় পর্যন্ত পিলার নির্মাণের কাজ চলছে। এখানে বড় সংকট ছিল মাটির তলদেশের বক্স ড্রেন। এই ড্রেনটির ফলে এক্সপ্রেসওয়ের পিলার নির্মাণ কঠিন হয়ে উঠেছিল। পরে ড্রেন স্পর্শ না করে পিলারের ফাউন্ডেশন ডিজাইনে পরিবর্তন এনে পিলার নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এই এলাকায় কাজ শুরু হয়েছে। রোজার আগে রাস্তার এই অংশের কাজ শেষ করার চেষ্টা করছে সিডিএ। পাশাপাশি বাদামতলী মোড় থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত কাজ শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু বিদ্যুতের তিন শতাধিক খুঁটির কারণে এই অংশে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড থেকে খুঁটি সরানোর ব্যাপারে টেন্ডার আহ্বানের প্রক্রিয়া চলছে। টেন্ডারে ঠিকাদার নিয়োগের পর খুঁটি সরানোর কাজ শুরু হবে। তবে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে কতদিন সময় লাগবে তা নিয়ে সংশয় ব্যক্ত করা হয়েছে। রাস্তার উপর থেকে খুঁটিগুলো সরানো না হলে ওই অংশে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
প্রকল্পটির মোট ৩৮০টি পিলারের মধ্যে ২২০টির মতো নির্মিত হয়েছে জানিয়ে সিডিএর একজন প্রকৌশলী বলেছেন, নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে চট্টগ্রামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটির কাজ এগিয়ে চলেছে। কিন্তু শহরের ব্যস্ততম এলাকায় কাজ করতে গিয়ে দফায় দফায় সংকটে পড়তে হচ্ছে। নতুন যোগ হয়েছে ‘খুঁটি সংকট’।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একজন প্রকৌশলী জানান, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য বহু পিলার সরাতে হয়েছে। মাটির উপরে ও নিচে মিলে অনেক লাইন ট্রান্সফার করতে হচ্ছে। খুঁটি সরানো মানেই শুধু একটি খুঁটি তুলে নেওয়া নয়। বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখার স্বার্থে দক্ষতার সাথে কাজগুলো করতে হচ্ছে। এতে করে কিছুটা সময় লাগছে। তিনি বলেন, আগ্রাবাদ থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত খুঁটি সরানোর টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। ঠিকাদার নিয়োগ দেয়ার মাধ্যমে খুঁটিগুলো সরানো হবে।