নগরে বইমেলা হবে কিনা সেটা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে ২৩ মার্চ বইমেলা উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ২৭ ও ২৮ মার্চ একই মাঠে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সরকারের উন্নয়ন মেলা করবে। এম এ আজিজ স্টেডিয়ামসহ ভিন্ন কোনো স্থানে উন্নয়ন মেলা আয়োজনে জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়েছিল বইমেলা আয়োজক কমিটি এবং চট্টগ্রামের সাহিত্যিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। কিন্তু তা আমলে নেয়নি প্রশাসন। ফলে পূর্বনির্ধারিত দিনে শুরু হচ্ছে না বইমেলা।
অবশ্য প্রাথমিকভাবে ২৯ মার্চ বইমেলা শুরুর পরিকল্পনা আছে আয়োজক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক)। তবে দেশে করোনা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাওয়ায় জনসমাগম এড়াতে আউটডোরের অনুষ্ঠান সীমিত করতে যেকোনো মুহূর্তে সরকারের নির্দেশনা আসতে পারে। এমন হলে শেষ পর্যন্ত আটকে যেতে পারে বইমেলা। তবে সামগ্রিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আজ রোববার জরুরি বৈঠকে বসবে বইমেলা আয়োজক কমিটি।
এবারের বইমেলায় স্টল থাকবে ১২৮টি। গতকাল শনিবার স্টল বরাদ্দের লটারি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত দিনে মেলা শুরু নিয়ে শঙ্কা থাকায় লটারি কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।
এর আগে গত ২ মার্চ বইমেলা ঘিরে আন্দরকিল্লায় নগর ভবনে সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ, সাহিত্যিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং শিল্প-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। ওই দিন ২৩ মার্চ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বইমেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
এদিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সাথে গতকাল সকালে সিটি কর্পোরেশনের একটি সভা হয়। সেখানে জিমনেশিয়াম মাঠের পরিবর্তে অন্য কোনো স্থানে উন্নয়ন মেলার প্রস্তাবনা আসে। তবে জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান সভায় জানান, উন্নয়ন মেলার স্থান হিসেবে জিমনেশিয়াম মাঠকে রেজ্যুলেশন আকারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে উন্নয়ন মেলার স্থান পরিবর্তন করা সম্ভব হবে না। বইমেলা হোক, সেটাও চান বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও চসিকের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া আজাদীকে বলেন, ২৩ মার্চ বইমেলা শুরুর কথা ছিল। একই মাঠে সরকারি অনুষ্ঠান হবে। সরকারি অনুষ্ঠানের সাথে চট্টগ্রামের ভাবমূর্তিও জড়িত। কাজেই দুটো অনুষ্ঠানের মধ্যে সরকারেরটা অগ্রাধিকার পাবে। তাই মৌখিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি বইমেলা ২৯ মার্চ শুরু করার। আগামীকাল (আজ) এ বিষয়ে আয়োজক কমিটির মিটিং হবে এবং সেখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
করোনা পরিস্থিতি অবনতি হলে শেষ পর্যন্ত বইমেলা আয়োজনের অনিশ্চয়তা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনিশ্চিত বলব না। বইমেলা করার পরিকল্পনা আছে আমাদের। তারপরও সারা দেশে যা হবে এখানেও তাই হবে।
বইমেলা পরিচালনা কমিটির যুগ্ম সচিব ও বলাকা প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী জামাল উদ্দিন আজাদীকে বলেন, আয়োজনের প্রায় শতভাগ শেষ করেছি। ঢাকার অনেক প্রকাশক বই নিয়েও এসেছেন। এমন সময়ে জানতে পারলাম জেলা প্রশাসন উন্নয়ন মেলা করবে। গত প্রায় ২০ দিন ধরে জিমনেশিয়াম মাঠে বইমেলা আয়োজনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। আজাদীসহ অন্যান্য গণমাধ্যমেও এ বিষয়ে সংবাদ বেরিয়েছে। সরকারের অন্য সংস্থাগুলোও অবহিত ছিল বইমেলা হবে। তাই চট্টগ্রামের ৬০ লক্ষ মানুষের প্রাণের দাবি পূরণে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত বইমেলার স্বার্থে উন্নয়ন মেলা ভিন্ন কোনো স্থানে আয়োজন করা যেত। আমরা স্টেডিয়ামের ভেতর, আউটার স্টেডিয়াম, পলোগ্রাউন্ড মাঠ, এমনকি জিমনেশিয়ামের ভেতর উন্নয়ন মেলা করার প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম। কিন্তু বইমেলার স্থানেই উন্নয়ন মেলা করতে চায় জেলা প্রশাসন। ওনারা বারবার বলছেন, জিমনেশিয়াম মাঠ সরকারি জায়গা। এখন আমাদের প্রশ্ন, আমরা কি সরকারের জনগণ নই? গুরুত্ব অপরিসীম বলেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমির বইমেলা উদ্বোধন করেছেন।
তিনি বলেন, ২৯ মার্চ শবে বরাত। তাছাড়া একদিনের মধ্যে সবকিছু আয়োজন করে মেলা উদ্বোধন করা গেলেও গোছাতে সময় লাগবে। যদি করোনার প্রভাবের কারণে বন্ধের নির্দেশনা আসে তাহলে আরো করুণ অবস্থা হবে। কোনো কারণে এবার মেলা সফল না হলে আগামীতে এর প্রভাব পড়বে। ঢাকা থেকে প্রকাশকরা আসতে চাইবেন না।
প্রসঙ্গত, এক সময় ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রামে কমপক্ষে তিনটি বইমেলার আয়োজন করত বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন। এতে বিভ্রান্ত হতেন পাঠক- দর্শনার্থীরা। ফলে সেগুলো সত্যিকারের বইমেলা হয়ে উঠেনি। সর্বশেষ ২০১৯ সালে তৎকালীন সিটি মেয়রের উদ্যোগে শুরু হয় অভিন্ন বইমেলা। যার ধারাবাহিকতা ছিল ২০২০ সালেও। গত দুইবার মেলা শুরু হয়েছিল ১০ ফেব্রুয়ারি। এবার করোনা মহামারীর কারণে মেলার তারিখ পিছিয়ে যায়।