নিউজিল্যান্ডে গিয়ে ভালো করে আসতে পারা দলের সংখ্যা নেহায়েত কম। আবার নিজ দেশে নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে দেওয়ারও রেকর্ড রয়েছে। তবে গতকাল বাংলাদেশ যা খেলল তা কেবলই লজ্জার। করোনাকালে প্রথম দেশের বাইরে সিরিজ। কোয়ারেন্টাইন পরবর্তী সময়ের প্রস্তুতি মিলে ভালো কিছু করার ইঙ্গিত দিয়েছিল তামিমরা।
শুধু ভালো কিছুই নয়, ইতিহাস বদলে দেওয়ারও পরিকল্পনা ছিল টাইগারদের। কিন্তু সব পরিকল্পনা যে বাস্তবায়ন করা যায়না সেটা বোধহয় ভুলেই গিয়েছিল বাংলাদেশ। ইতিহাসটা আর বদলানো হয়নি। উল্টো বড় লজ্জার মুখে পড়তে হলো তামিমদের। প্রথমে ব্যাট হাতে ১৩১ আর বল হাতে ব্যর্থতার মিছিলে বোলাররাও। যে কারণে ২৮ ওভারের বেশি হাতে রেখে ৮ উইকেটের আনায়াস জয় দিয়ে সিরিজ শুরু করল স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। দলের সাফল্যের প্রধান ভরসা ব্যাটিং। বোলাররাও ছিলেন প্রস্তুত। সবকিছুই অসার প্রমাণীত হলো। কোন কিছুই সঠিক পথে এগুলোনা। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। আরো একটি লজ্জার হারে সিরিজ শুরু টাইগারদের। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে হারের সংখাটা বেড়ে গেলো আরো একটি।
ডুনেডিনের ইউনিভার্সিটি ওভালের উইকেটে ছিল একটু বাড়তি বাউন্স। আর সেটাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে স্বাগতিক পেসাররা। তারপরও সে সব বাউন্স বিপজ্জনক ছিলনা। কিন্তু বাংলাদেশ দলকে ডুবিয়েছে ব্যাটসম্যানদের বাজে শট নির্বাচন। তবে বাংলাদেশ শিবিরে আঘাত হানা শুরু করেন ট্রেন্ট বোল্ট। টাইগার দলপতি তামিম ইকবালকে দিয়ে এই বিশ্বসেরা পেসারের ধ্বংসযজ্ঞ শুরু। বাংলাদেশ দলের স্কোর তখন মাত্র ১৯। তামিমের ১৩। তিন নম্বরে ব্যাট করার সুযোগ পাওয়া সৌম্য সরকার টিকে ছিলেন তিন বল। বোল্টের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরেন সৌম্য। লিটন আর মুশফিক মিলে প্রতিরোধের সামান্য ইঙ্গিত দিলেও সেটা ভেঙে যায় নিশামের পেসে। ৩৬ বলে ১৯ রান করে ফিরেন লিটন।
মুশফিকুর রহিমও হাঁটলেন লিটনের পথে। নিশামের বলে কাট করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ৪৯ বলে ২৩ রান করে। ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বহীনতার সাথে দুর্ভাগ্যও যেন চেপে ধরেছিল বাংলাদেশ দলকে। নাহয় অপর প্রান্তে ক্রিজের বাইরে থেকে এভাবে কেন আউট হবেন মিঠুন। এরপর মাহমুদউল্লাহ যে চেষ্টা করেছেন তা কোন কাজে আসেনি । পেসারদের সাথে স্পিনার স্যান্টনারও দেখিয়েছেন তার ঘুর্ণি জাদু। আর তাতেই দিশেহার বাংলাদেশের শেষের দিকের ব্যাটসম্যানরা।
যে কারণে ৪১ ওভারেই অল আউট হয় বাংলাদেশ ১৩১ রানে। যা গত তিন বছরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোর। আর কিউইদের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ২০০৭ সালের পর সর্বনিম্ন স্কোর। মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে আসে সর্বোচ্চ ২৭ রান। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ট্রেন্ট বোল্ট নিয়েছেন ২৭ রানে ৪ উইকেট। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন নিশাম এবং স্যান্টনার।
মাত্র ১৩২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে মোস্তাফিজুর রহমানের প্রথম ওভার থেকে ১০ রান নেন গাপটিল। সেই ঝড়ো সূচনায় মাত্র পঞ্চম ওভারেই স্বাগতিকরা তুলে নেয় অর্ধ শত রান। ষষ্ঠ ওভারে বল করতে এসে তাসকিন আহমেদ ফেরান গাপটিলকে। উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন মাত্র ১৯ বলে ৩টি চার আর ৪টি ছক্কার সনাহায্যে ৩৮ রান করা মার্টিন গাপটিল। দ্বিতীয় উইকেট হেনরি নিকোলসকে ভালই সঙ্গ দিতে থাকেন অভিষিক্ত কনওয়ে। দলকে জয়ের কাছে পৌঁছে দিয়ে হাসান মাহমুদের বলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন কনওয়ে। ৫২ বলে ২৭ রান করেন এই অভিষিক্ত ব্যাটসম্যান। এরপর বাকি কাজটা উইল ইয়ংকে সঙ্গে নিয়ে সারেন হেনরি নিকোলস। নিকোলস ৪৯ রানে আর ইয়ং ১১ রানে অপরাজিত থাকেন। মাত্র ২১.২ ওভারে ৮ উইকেট হাতে রেখে জয় নিশ্চিত করে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। ম্যাচ সেরার পুরষ্কারটি উঠেছে ট্রেন্ট বোল্টের হাতে।