বাংলাদেশ থেকে শিগগিরই মালদ্বীপের মালেতে বিমানের সরাসরি ফ্লাইট এবং জাহাজ চলাচল শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। দুই দেশের সরকারপ্রধানের নেতৃত্বে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার বিকালে মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ শহিদের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) ঘোষণা করেছেন, শিগগিরই বাংলাদেশ থেকে মালদ্বীপে যাবে বাংলাদেশ বিমান। আরেকটি সুখবর হচ্ছে, খুব শিগগিরই চট্টগ্রাম ও মালের মধ্যে আমরা একটা শিপিং লাইন চালু করব। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুই দেশের প্রতিনিধি দলের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আর মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ তার দেশের নেতৃত্বে দেন। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আগে দুই নেতা একান্ত বৈঠকও করেন। তাদের উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে সার্বিক সহযোগিতা জোরদারে একটি যৌথ কমিশন গঠনসহ চারটি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়। পরে বিকালে ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আসেন দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন ও শহিদ। খবর বিডিনিউজের।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা সলিহর সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের ওই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানান দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে প্রেফারেনশিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (পিটিএ) সই করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ, মালদ্বীপ তাতে সম্মত হয়েছে। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এখনো খুব বেশি আমরা অগ্রসর হইনি। এজন্য আমরা ওদের কাছে একটা প্রস্তাব দিয়েছি যে, আমরা প্রিফারেনশিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (পিটিএ) করতে চাই, যেটা ভুটানের সাথে আমরা করলাম কিছুদিন আগে। ডাবল ট্যাক্সেশন যাতে না হয়, সেজন্য একটা প্রস্তাব আমরা দিয়েছি এবং কাস্টমসের উপর আমরা কাজ করছি। উভয় দেশ প্রমোশন অ্যান্ড প্রটেকশন অব ইনভেস্টমেন্টের উপরও আমরা কাজ করছি। দুই সরকারপ্রধানের আলোচনার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমনে বলেন, বাংলাদেশ থেকে খাদ্য সামগ্রী, ওষুধসহ অন্যান্য পণ্য যাতে আরও বেশি পাঠানো যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ফিশারিজ, পর্যটনে মালদ্বীপের সঙ্গে কীভাবে সহযোগিতা বাড়ানো যায় এবং কানেকটিভিটি কীভাবে বাড়ানো যায় এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে অনেক আলাপ হয়েছে।
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের সফরে চারটি এবং এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে আরও দুটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা তুলে ধরে মোমেন বলেন, আমাদের যত ধরনের আইনগত ভিত্তি দরকার, সেগুলো আমরা করেছি। এখন আমাদের সম্ভাবনা যেগুলো আছে, সেগুলো নিয়ে কাজ করব। দুই দেশের বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলো ত্বরান্বিত করতে প্রতি বছর বাণিজ্য সচিব পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা হবে বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) নিয়ে হওয়া সমঝোতা স্মারক হওয়ায় এখন নিয়মিতভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পথ তৈরি হল। গতকাল চারটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা তুলে ধরে মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ শহিদ বলেন, আমরা সমন্বিত যৌথ কমিশন করতে যাচ্ছি, যাতে দৃঢ় আইনি ভিত্তি ও কাঠামোর উপর ভর করে আমরা সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারি। এর মাধ্যমে নিয়মিত সব ইস্যুকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আমরা সমাধান করতে পারব। তিনি বলেন, আমরা প্রেফারেনশিয়াল ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট চুক্তির সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা করেছি। কাস্টমস সংক্রান্ত বিষয়ে যাতে ডাবল ট্যাক্সেশন এড়ানো যায়। এই সমঝোতা স্মারকগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নের বিষয়েও দুপক্ষ একমত হয়েছে। রোহিঙ্গা সঙ্কটসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক বিষয়ে মালদ্বীপ বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন শহিদ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, বাংলাদেশে মেডিকেলসহ বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার জন্য মালদ্বীপ থেকে অনেক শিক্ষার্থী আসে। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, শুধু স্নাতক না, তারা স্নাতকোত্তর পর্যায়েও ছেলেমেয়েদের পাঠাবেন। আমরা স্বাগত জানিয়েছি।
বাংলাদেশের প্রায় দুইশ জন চিকিৎসক মালদ্বীপে কাজ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আরও ৮০ জন চিকিৎসক যাওয়ার বিষয়েও বেশ অগ্রগতি হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী শহিদ বলেন, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মালদ্বীপ সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট সলিহ। দুই দেশের জন্য সুবিধাজনক সময়ে খুব শিগগিরই সেই সফর হবে।