২০০৪ সনের ৯নং আইনমতে তদানীন্তন সরকার ১৯৫০ইং সনের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন সংশোধন করেন। উক্ত আইনের ১৪৫ (এ) ১৪৫ (বি) ও ১৪৫ (সি) ধারায় বর্ণিতমতে সরকার কর্তৃক পর্যায়ক্রমে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল, ল্যান্ড সার্ভে আপীল ট্রাইব্যুনাল ও মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগে সর্বশেষ চূড়ান্ত প্রচারিত ও প্রকাশিত খতিয়ান সংশোধনের জন্য ধারাবাহিক বিভিন্ন প্রতিকার লাভের বিধান রাখা হয়। উল্লেখ্য যে, একই সন তথা ২০০৪ সনের ২৫, ২৬ ও ২৭নং আইন প্রণয়নে তথায় বর্ণিত মতে যথাক্রমে ১৯০৮ সনের রেজিষ্ট্রেশন আইন, ১৮৮২সনের সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ও ১৮৭৭ সনের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে বিভিন্ন সংশোধনী আনিত হয়। উক্তরূপ সংশোধিত রেজিষ্ট্রেশন আইনের ৫২ এ ধারার (এ) এবং (বি) কলেজে স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বিক্রয়েচ্ছু ব্যক্তি কিংবা বিক্রয়াচ্ছু ব্যক্তির পূর্ববর্তীর নামে সর্বশেষ ক্ষতিয়ান অবশ্যই লিপি থাকতে হবে মর্মে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে, তা’ না হলে কোন স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় করা যাবে না। উক্তরূপ চূড়ান্ত প্রকাশিত খতিয়ান শুদ্ধ থাকলে তৎ মালিক কিংবা তৎওয়ারিশ থেকে বিভিন্নভাবে প্রাপ্ত ব্যক্তিগণ ছাড়া উক্তরূপ চূড়ান্ত প্রচারিত ও প্রকাশিত খতিয়ানে (যা চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় বি.এস. খতিয়ান নামে পরিচিত) ভুলে নাম বাদ পড়া কোন স্বত্ববান দখলকার মালিক বা তৎ স্থলাভিষিক্ত ব্যক্তিগণ স্থাবর সম্পত্তি প্রয়োজনে বিভিন্ন স্থান্তরসহ তাহা ভোগদখলে, আইনগত প্রতিকার লাভে, কোন কোন ক্ষেত্রে কোন কারণে স্থাবর সম্পত্তি সরকারি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণ লাভে বঞ্চিতসহ বন্ধক প্রদান ও সম্পত্তি বেচা কেনা উপলক্ষে অন্য কাউকে ক্ষমতা প্রদানে বারিত হয়ে অবর্ণনীয় ও অমানবিক যন্ত্রণা ভোগ করে আসছে।
অতীব পরিতাপের বিষয় এই যে, দীর্ঘ ১৬ বছরেও সদাশয় সরকার চট্টগ্রাম জেলায় (ক্ষেত্রমতে দেশের অন্যান্য কতেক স্থানেও) বি.এস. খতিয়ান সংশোধন উপলক্ষে উক্ত আইনমতে কোনরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। খতিয়ান কোন স্বত্বের দলিল নহে। এই ব্যাপারে মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের অনেক মূল্যবান নজির আছে। তা’ সত্ত্বেও উক্ত মতে বি.এস. খতিয়ানকে যেন স্থাবর সম্পত্তি স্বত্ব দখলের ম্যাগনাকার্টা হিসাবে স্থান দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বি.এস. খতিয়ানে কোনরূপ ভুলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত স্বত্ববান দখলকারগণের মধ্যে কেউ কেউ বিভিন্ন সমস্যায় ও হেতুতে বাধ্য হয়ে ইতোমধ্যে দেওয়ানী আদালতের আশ্রয় নেওয়াতে সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলার জটও সীমাহীন বেড়ে গেছে এবং বিচারপ্রার্থী ব্যক্তিগণ চরম আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়ে আসছে; শুধু তাই নয় উক্তরূপ কারণে স্থাবর সম্পত্তি নিয়ে বিভিন্ন স্বত্ব দখলকারদের মধ্যে প্রায়ই বিভিন্ন অপরাধ সংঘটনের হেতুতে ইতোমধ্যে ফৌজদারী মামলার সংখ্যাও বেড়ে গেছে। উক্ত মতে বি. এস. খতিয়ান সংশোধন উপলক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে কিংবা তার কার্যক্রম শেষ করার আগে উক্তরূপ আইন দ্বারা বি.এস. খতিয়ান মূলে কার্যক্রম আরম্ভ করার সুযোগ করে দেওয়া সমীচীন হয়নি।
অতএব, বিষয়োক্ত কারণে অতিসত্বর চট্টগ্রাম বা দেশের যে যে স্থানে প্রয়োজন সর্বশেষ চূড়ান্ত প্রচারিত ও প্রকাশিত জরিপী খতিয়ান সংশোধনের ব্যাপারে উক্ত মতে আশু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে জনগণের দুঃখ দুর্দশা মোচন করার উদ্যোগ নেওয়া হোক।
প্রদীপ কান্তি দাশ, এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও চট্টগ্রাম জজ কোট।