স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে।বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসনে উন্নীত হয়েছে আমাদের দেশ।এই উত্তরণ এমন এক সময়ে ঘটলো, যখন আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি। বাঙালির অহংকার, স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ২০২১সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত মুজিব বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার। পরবর্তীতে এই সময় ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
জীবনের সবকিছু ত্যাগ করে এদেশের মানুষের জন্য কষ্ট স্বীকার করে গেছেন জাতির পিতা।আর সেই কষ্টের ফসল হিসেবে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। স্বাধীন জাতির মর্যাদা।উনার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ আমরা অর্জন করেছি উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা।
মার্চ মাস আমাদের জন্য খুবই অর্থবহ।৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ, ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিন এবং এ মাসেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে এবার মার্চ এসেছে ভিন্ন বার্তা নিয়ে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ অর্জন করেছি।
১৯৭৫ সাল থেকে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে থাকা বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের উত্তরণে সিডিপির সব শর্ত পূরণ করেছে ২০১৮ সালে। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্টের নিয়মানুযায়ী কোন দেশ পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদন্ড পূরণে সক্ষম হলে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চুড়ান্ত সুপারিশ পায়। ২০১৮ থেকে ২০২১ এই তিন বছরে আমরা সূচকের অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি।
মাথাপিছু আয়,মানবসম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতা এ তিনটি সূচকে শর্ত অনুযায়ী উন্নীত করায় জাতিসংঘের সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ। উন্নয়নশীল দেশ হতে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হয় কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার , ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১৮২৭ মার্কিন ডলার।মানবসম্পদ সূচকে উন্নয়নশীল দেশ হতে ৬৬ পয়েন্টের প্রয়োজন,বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ৭৫.৩। অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতা সূচকে কোন দেশের পয়েন্ট ৩৬ এর বেশি হলে সেই দেশকে অনুন্নত দেশের পর্যায়ে রাখা হয়, ৩২ এ আসার পর উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জিত হয়। সেখানে বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ২৫.২।
জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী উত্তরণের সুপারিশ পাওয়ার পর তিন বছর প্রস্তুতিকালীন সময় ভোগ করতে পারে একটি দেশ।করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে আর ও দুই বছর বেশি সময় পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশ ২০২৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটবে। তাই গত ছয় বছর যেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল আমাদের জন্য,আগামী পাঁচ বছর ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হলে দেশি -বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরো উৎসাহী হবেন।এতে করে দেশে প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ বাড়বে এবং কর্মসংস্থান বাড়বে।শিল্পের আধুনিকায়নের পাশাপাশি উৎপাদিত পণ্যের বহুমুখীকরণ ঘটবে এবং সার্বিক উৎপাদন বাড়বে।
উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় যুক্ত হওয়া একটি দেশ ও দেশের মানুষের কাছে খুবই মর্যাদার।বাংলাদেশের নাগরিকরা সারা বিশ্বে বাড়তি মর্যাদা পাবে। বিশ্বের সব দেশের কাছে ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব বাড়বে।ফলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো আগের থেকে বেশি ঋণ দিতে আগ্রহী হবে।
অবশ্য উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হলে আগের মত সহজ শর্তে বৈদেশিক ঋণ ও সাহায্য পাবে না বাংলাদেশ। তাই এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আগামী পাঁচ বছর এর মধ্যে দেশকে প্রস্তুত হতে হবে।পাঁচ বছর প্রস্তুতিকালীন সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
গত দুই দশকে বাংলাদেশের অগ্রগতি অভূতপূর্ব। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সামাজিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্রতা হ্রাস,মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, সর্বোপরি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ সবক্ষেত্রেই বাংলাদেশ এক বিস্ময়ের নাম। তাঁর মেধা ও বিচক্ষণতায় সঠিকভাবে বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস থেকে উত্তরণ এবং টিকাদান কর্মসূচির সার্থকতা বিশ্বে বাংলাদেশকে অত্যুজ্জ্বল করেছে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, হাজী মো. নুরুল হক ডিগ্রি কলেজ।